শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

জীবনের গল্প

মুর্শিদা আহমেদ

জীবনের গল্প

জন্ম মৃত্যু বিয়ে। এই তিনটি আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রেখেছেন। এ আমার কথা নয়। ধর্মের জ্ঞান আল্লাহ রসুলের জ্ঞান আমার নেই। হাদিস কিতাব পড়ার সৌভাগ্যও আমার হয়নি। তবুও কিছু কিছু জিনিস মেনে নিতে অসুবিধা হয় বৈকি। যেমন আমার বিয়ে। বিয়েটাকে ঘষে মেজে মেনে নিলেও সব দিক দিয়েই আমার অথবা সব দিক দিয়েই আমি তার অনুপযুক্ত। মেধা মনন রুচি চিন্তাভাবনা জীবনবোধ সম্মানবোধ কোনো কিছুতেই তার সঙ্গে আমার মেলেনি। এই মিলহীন মিলনের মিল কতটা ধর্মসম্মত আর কতটা সুখী হওয়ার জন্য প্রতুল তা আমার বোধে আসে না। আমার কেবল মনে হতো অবশ্য এখন আর হয় না। এখন আমি শুনতে শুনতে জেনেছি জন্ম মৃত্যু বিয়ে স্বয়ং আল্লাহপাকের হাতে। তবুও কখনো কখনো যখন সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের বিপরীত রুচির, চিন্তাধারার, স্বপ্ন দেখার, প্রতিটি ব্যাপারেই যার সঙ্গে উঠতে বসতে সংঘাত, কখনো সরবে, কখনো নীরব, কখনো আত্মবিধ্বংসী চিন্তাধারায় পৌঁছে যাওয়া, এই মানুষটির সঙ্গে যখন সংঘাত-সংঘর্ষ চরমে পৌঁছে যায় তখন এই জীবনটাকে ঘেন্না হয় শুধু এই জীবনকে মিথ্যে সুখের খোলসে মুড়ে সুখীজনের চরিত্রে অভিনয় হাঁপিয়ে ওঠে। এই দীর্ঘ তেত্রিশ বছরে কখনো যে মন থেকে শুকরিয়া আদায় করিনি তা নয়। তবে তা এক ফুঁৎকারে নিভেও গেছে সব দিক থেকেই বিপরীত এবং সেটা মন্দ দিকেই, চরিত্রের মানুষটার অশিল্পিত অবিবেচিত নীচুমানের এবং সম্পূর্ণ ভুল চিন্তাধারার জন্য। বলছিলাম, আমার কেবল মনে হতো আমার ব্যাপারে আব্বা চিরদিনই উদাসীন এবং তিনি সম্পূর্ণ জেনে শুনে বুঝে সারা জীবন মিলহীন মিলনের ভার বহনের জন্য এই বিয়ে নামক প্রহসনটা করে আমাকে সুখী হতে দেননি। কারণ তিনি কেন দুই পক্ষের সবাই-ই জানত এই বিয়েতে কোনোভাবেই আমার মত শুধু নেই তা নয় ভীষণভাবেই নেই। আমি আজও বুঝে উঠতে পারি না তবে কেন আমার আব্বার মতো একজন সজ্জন ব্যক্তি অন্যের কাছে ভালো হওয়ার জন্য অন্যের চাওয়ার মূল্য দেওয়ার জন্য তার নিজের সন্তানকে এভাবে বলীদান করতে পেরেছিলেন। তিনি তো জানতেন বিয়ে মানে কি। তিনি এবং আমার মা কী করে মেরে ধরে আমাকে ওই অপছন্দের মানুষটার সঙ্গে শুতে বাধ্য করেছেন। একবার অপরিণত শরীরের কথা ভাবেনি। একবার দুর্বিনীম মনের কথা হৃদয়ের কথা ভাবেনি।

আমি জীবন দিয়ে দেখেছি নিজের বাবা-মার তত্ত্বাবধানে একটি বার-তের বছরের কিশোরীকে ধর্ষণের যন্ত্রণা কীভাবে সইতে হয়েছে। গর্ভপাতের যন্ত্রণা কীভাবে সইতে হয়েছে সেই মানুষটার অত্যাচারে যে মানুষটা হৃদয় জয় করার অর্থই বোঝে না। যে কোনো দিন হৃদয় জয়ের ব্যাপারটাকে নিয়ে ভাবতে হয় তাই-ই জানে না। পরবর্তীতে যা তাকে জীবনপাত করে শিখাতে চেয়েছি নিজে সুখী হওয়ার জন্য যেমন তেমনি তাকে সুখী করার জন্যও।  কিন্তু জীবনের এই অতি মূল্যবান পাঠ পাঠের তাৎপর্য অর্থ প্রয়োজনীয়তা এর কোনোটাই জীবনে বোঝেনি বুঝতে চেষ্টাও করেনি কোনো দিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর