আবুল হোসেন (১৯২২-২০১৪) আমাদের বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রথম আধুনিক কবি। ত্রিশোত্তর আধুনিক বাংলা কবিতার যে-ধারা উত্তরকালের কবিদের হাতে বিকশিত হয়েছিল, আবুল হোসেন ছিলেন সে-ধারার সফল উত্তরাধিকারী। জীবনদৃষ্টি ও কাব্যভাষা দিয়ে তিনি আমাদের যুক্ত করেছিলেন আধুনিকতার সঙ্গে। বাংলাদেশের আধুনিক কাব্যভাষা নির্মাণে অবদান রেখেছেন কবি আবুল হোসেন। এ দেশের কবিতায় স্বতন্ত্র স্বর তৈরি হয়েছে তাঁর দেখানো পথ ধরেই। এই মহান কবির জন্মশতবর্ষে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আবুল হোসেনের সমসাময়িক মুসলমান কবিরা হলেন- আহসান হাবীব, ফররুখ আহমদ, বেনজীর আহমদ, আবদুল কাদির, সুফিয়া কামাল, মহিউদ্দিন, হুমায়ুন কবির, কাজী কাদের নেওয়াজ, বন্দে আলী মিয়া প্রমুখ। রবীন্দ্র ভাবধারা তাঁর সাহিত্যে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে বলা যায়। সেই সঙ্গে বাঙালি মুসলমান কবি হিসেবে সমসাময়িক সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ঘাত-প্রতিঘাত তাঁর রচনায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। আবুল হোসেন ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার আরুয়াডাঙা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কুষ্টিয়া হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কিশোর বয়সে কুষ্টিয়ায় লেখাপড়া করার সময় তাঁর মধ্যে সাহিত্যপ্রেম জেগে ওঠে। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে স্কুল ম্যাগাজিনে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। লালন শাহের মাজার, বাউলদের নিত্য আনাগোনা, রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ, গড়াই নদীর তীর-এসব তাঁর সাহিত্যিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
কলকাতায় তাঁর সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে কাজী নজরুল ইসলামসহ বিখ্যাত অনেক কবি-সাহিত্যিকের। রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যও পেয়েছিলেন। দেশ বিভাগের পর আবুল হোসেন ও তাঁর কয়েকজন কবি বন্ধু ঢাকায় স্থায়ী হন। সময় ও সমাজের অন্তর্গত অবয়ব উন্মোচনের উদ্দেশ্যে নির্মিত আবুল হোসেনের কবিতাসমূহ নানা কারণে বিশেষ গুরুত্ববহ। স্বাধীন বাংলাদেশের একটি কালখন্ডের রাজনৈতিক বাস্তবতা তাঁর কাব্যপাঠে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যে কথাটি সোজা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব হয়নি তা প্রকাশের জন্য বাঁকা পথের শরণ নিয়েছেন তিনি। আবুল হোসেনের কবিতায় কবি-মনের স্পর্শে প্রকৃত সত্য ও বাস্তব ঘটনার শরীরে যুক্ত হয় ভিন্নতর আস্বাদন। সমসাময়িক দেশকালের নানা অভিঘাতকে তিনি আবুল হোসেনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ থেকে শেষ কাব্যগ্রন্থ পর্যন্ত যে ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন, তাতে তাঁর স্বকালগ্নতারও একটি ধারাক্রম মুদ্রিত হয়েছে। সমাজ ও রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে মানুষের সঙ্গে বিরোধও প্রবল হয়ে ওঠে- এই বোধ তাঁর মধ্যে বরাবরই সক্রিয় ছিল। তিনি কবিতা ও জীবনকে অদ্বৈতরূপে অন্বেষণ করেছেন। বাংলা কবিতাকে অলঙ্কারের বাহুল্য থেকে মুক্তি দিয়ে মানুষের মুখের ভাষার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার বিরল কৃতিত্ব তাঁর। পঠনপাঠনের ব্যাপক অভিজ্ঞতায় বাংলা কবিতার শরীরে তিনি যোগ করেছেন নতুন লাবণ্য। সমাজ-রাজনীতি তাঁর কবিতায় অনিবার্য উপাদান হিসেবে এসেছে। কিন্তু কখনই আরোপিতভাবে নন।প্রচলিত অর্থে ধর্মীয় আচরণবিধি না মানলেও বিশ্বাস করতেন মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রক কল্যাণকর শক্তি, আত্মার অস্তিত্ব ও পরকাল। ছিলেন আধুনিক, কল্যাণকামী, মানবতাবাদী একজন শুদ্ধতম মানুষ। ১৯৪০ সালে বন্ধু হাবীবুল্লাহ বাহারের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় আবুল হোসেনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নববসন্ত’। তাঁর ‘নববসন্ত’ গ্রন্থে শব্দে, ছন্দে, উপমায় তিনি অবিরলভাবে প্রয়োগ করেছেন সে-যুগের কঠিন সমাজ বাস্তবতা। কবিতায় মানুষের মুখের ভাষার অনুবর্তী কত সাধারণ হওয়া যায়, তার দিকেই অগ্রসর হয়েছেন তিনি। এটাই হচ্ছে আবুল হোসেনের স্বোউপার্জিত আধুনিকতা। কবিকে তাঁর বিশুদ্ধ মনোলোকের অবস্থান থেকে বিবেচনা করতে হবে। আবুল হোসেন যে বিশেষ সময় ও সমাজে কবিতা লিখে গেছেন তার ছাপ কখনই কবিতার শৈল্পিক মানদন্ডকে ছাপিয়ে যায়নি। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নববসন্ত’-এর নামের মতোই বাংলা কবিতায় বাসন্তী উত্তাপ যুক্ত করেছেন। কবি এভাবে তাঁর নিজস্ব জগতে প্রবেশ করেন। কবিতায় নিজস্ব ভাষারীতি নির্মাণ করেন। তিনি লিখেছেন-
‘আমাকে অমর করতে চায় মৃত্যু
ইতিহাসের পাতায়, যুগের ভাষায়, মানুষের কথায়
লক্ষ বুকের স্পন্দনে।
বাঁচিয়ে রাখতে চায় অনন্তকালের জন্য
তার জীয়নকাঠির স্পর্শ দিয়ে
কারণ মৃত্যুকে করেছি আমি জয়।’
মৃত্যুতে কবিরা অমর হন। কবি ও ব্যক্তি এ দুয়ে মিলে হয়ে ওঠে শিল্পী ও শিল্প। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘বিরস সংলাপ’। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘হাওয়া তোমার কি দুঃসাহস’, ‘দুঃস্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্নে’, ‘এখনো সময় আছে’, ‘আর কিসের অপেক্ষা’, ‘রাজকাহিনী’, ‘আবুল হোসেনের ব্যঙ্গ কবিতা’ ও ‘দুঃস্বপ্নের কাল’, প্রেমের কবিতা’ ও ‘কালের খাতায়’, ‘স্বপ্ন ভঙ্গের পালা’, ‘ইকবালের কবিতা, ‘আমার জন্মভূমি, ‘অন্য ক্ষেতের ফসল’, ‘আমার এই ছোট ভুবন’, ‘আর এক ভুবন’, ‘অরণ্যের ডাক’ ‘পার্বত্যের পথে’। চার খন্ডে এই জীবনী গ্রন্থে কবির ফেলে আসা জীবনের নানা রঙের প্রতিচ্ছবি, সুখ-বেদনা আর কবিতার অনুষঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায়। বরাবরই কবি ছিলেন আধুনিক জীবনবোধ ও অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে। দেশ বিভাগের সেই সংকটকালীন সময়েও। সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন সত্যিকারের একজন শুদ্ধ কবি।
বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত আবুল হোসেনের একটি কবিতা পড়ে বিস্মিত হয়েছি। বাংলা সাহিত্যে এমন প্রাণবন্ত প্রেমের কবিতা বাস্তবিকই দুর্লভ। যথাযথ শব্দ ব্যবহার ও স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ এই কবিতাকে একটি আশ্চর্য সাফল্য এনে দিয়েছে। ভালো কবিতা চেনার ক্ষেত্রে সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু যে অবিস্মরণীয় তার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে আমাদের মনে হয়েছে, এমন সর্বাঙ্গীণ সুন্দর কবিতা আমরা ক’জন লিখতে পারব? তবে সত্যিকার ভালো কবিতা সব সময়ই দুর্লভ। মহৎ কবিতার একটি বড় লক্ষণ হলো, তা সব সময় মনে হবে সদ্যলেখা বা তরতাজা। অবশ্য এ কথাটিও বুদ্ধদেব বসুর; সম্ভবত তিনি ইঙ্গমার্কিন কোন কবি-প্রবন্ধকারের লেখা থেকে তা অবলীলায় ধার করেছেন। কবিতাটি ছিল এমন-
‘তোমাকে চাই তোমাকে চাই ওগো দুর্লভা বল্লভা আমার
রূপ নয় সাজ নয়, সায়াহ্নের অন্ধকারে অস্পষ্ট আধো আধো
পরিচয় স্বপ্নের মতো, রহস্যনিবিড় বসন্তের লাবণ্যবিলাসে
তৃপ্ত দেহ আকাশে মেলে পাখা, সে প্রণয় আমার তো নয়।’
(মেহেদীর জন্য কবিতা)
সৈয়দ শামসুল হক আবুল হোসেন সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘আবুল হোসেন বিশ্বাস করতেন, কবিতা হচ্ছে অনুপ্রাণিত সংলাপ; তার একটি কবিতার বইয়ের নামই যে বিরস সংলাপ, এটি আকস্মিক নয়, এবং ওই ‘বিরস’ বিশেষণটিও তার সব রচনারই শাঁসে মূলেরই বটে। শেরেবাংলা ফজলুল হককে নিয়ে তাঁর অসামান্য কবিতাটির একটি পঙ্ক্তি-আজকাল দিন এমন পড়েছে যে- ‘সিংহের মেকাপে যত শেয়ালেরা আসর জমায়’- কেবল বিরসই নয়, আমাদের চারদিকের বাস্তবতার প্রতি এখনো একটি চাবুক! প্রথম পাঠে আবুল হোসেনের সব কবিতাই মনে হতে পারে সাধারণ মুখচলতি গদ্যেই বুঝি বা এসব, কিন্তু নিবিড় পাঠে ধরা পড়ে যে ওই গদ্যভাষ আর ওই সংলাপভাষণের ভিতরেই আমরা শুনে উঠছি এক মৌলিক কবিতা-কণ্ঠ। এতটাই মৌলিক তার এই কাব্যভাষা যে তিনি ফররুখ ও হাবীবের সময়ে-যাঁরা তখনো তিরিশের কবি-প্রচল ভাষায় লিখছিলেন, কিন্তু অচিরে পেয়ে যাচ্ছিলেন নিজকণ্ঠ, ফররুখ প্রায় অবিলম্বেই আর হাবীব কিছুটা পরে-তাঁদের থেকে কতটাই না স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম তিনি আবুল হোসেন।’
তিরিশোত্তর বাংলা কবিতার ধারার সঙ্গে তিনি যুক্ত করেছেন তাঁর পাঠসমৃদ্ধ বিশ্বকবিতার নানাকৌণিক প্রবণতাও। ফলে বাঙালি কবি হয়েও তিনি বিশ্বকবিতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি সমকালীন বিশ্বকবিদের একাংশের সঙ্গে মিশতে মিশতে তাদেরকে নিয়ে কবিতা লিখে বসেন; কিংবা দূরদেশে ভ্রমণে গিয়ে এক কালো কাঠবিড়ালিকে পিকাসোর মূর্তির ওপর বসে পড়তে দেখে স্মরণ করেন ইয়েটসকে। এ নিয়ে তিনি লেখেন অ্যাবসার্ড ভাবনার এক অন্যরকম এক কবিতা (‘প্রিন্সটনে কালো এক কাঠবিড়ালি’)। কবি আবুল হোসেনের এই হচ্ছে মৃত্যু-অতিক্রমী বদলপ্রবণতা। আর মৃত্যু বরাবরই তাঁর চেতনায় সত্তার এক স্বাভাবিক বিবর্তন। আলো থেকে আঁধার নয়, বরং এক আলো থেকে অন্য এক আলোতে প্রত্যাবর্তন। তিনি লিখেছেন-
‘মানুষের আলো নিভে গেলে
কী থাকে? আঁধার?
নাকি আরও এক আলো?
কবির পক্ষপাত সেই অন্য এক আলোর দিকে। তবে আরেক সহজাত সত্য হচ্ছে সত্তাবদলের মুহূর্তে উদ্গত দুর্জ্ঞেয় এক অশ্রুবিন্দু।
কবি আবুল হোসেনের কবিতাকে বুঝতে হলে প্রথমেই গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো মনে রাখতে হবে। আর, আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে যে, কঠিন মননশীলতা দ্বারা পরিশ্রুত না করে কবিতাকে মুক্তি দিতেন না তিনি। তাঁর মতো এমন কঠোর পরিশীলনপ্রবণ কবি প্রায় দেখাই যায় না আমাদের দেশে। তাঁর মুখে যেমন সর্বদা ছিল প্রসন্ন হাসি তেমনি ছিল ভাবগাম্ভীর্যেরও চিহ্ন।
পেশাগত জীবনে আবুল হোসেন সরকারি চাকরি করতেন। কর্মজীবনে তিনি উচ্চপ্রদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে প্রথম তিনি কলকাতা আয়কর কমিশনারের অফিসে, এক্সামিনার অব অ্যাকাউন্টস পদে যোগ দেন। ভারত ভাগের পর তিনি ময়মনসিংহে সহকারী বিক্রয় কর অফিসার হিসেবে আসেন। এর দুই-আড়াই বছর পর ১৯৫০ সালের মাঝামাঝিতে তিনি ঢাকার রেডিও পাকিস্তানে একটি সমপর্যায়ের চাকরিতে যোগ দেন। এরপর তিনি ব্যাংককে সিটো পাবলিক ইনফরমেশন অফিসে ইন্টারন্যাশনাল স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পান। সেখান থেকে বাংলাদেশে ফিরে তিনি জনসংযোগ বিভাগে যোগ দেন এবং ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
কবি আবুল হোসেনের স্ত্রী সাহানা হোসেন ১৯৯৪ সালের ৮ মে মারা যান। স্ত্রী বিয়োগের পর ব্যথিত হৃদয়ে একটি কবিতা লেখেন তিনি। এটি দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত হয়। কবিতার মাঝামাঝি অংশটি ছিল এ রকম-
‘... যে ছিল জীবন জুড়ে অভিন্ন ছায়ার
মতো, এক নিষ্ঠুর নিমেষ এসে কেড়ে নিয়ে যাবে
তাকে বিস্মৃতির অনন্ত আঁধারে? পাবে সে কী? শুধু
কিছু রক্ত মাংস পেশি হাড়, বাকিটা আমার, তার
নাম ভালোবাসা। কার সাধ্যি ছিনিয়ে তা নেয়? যাকে
নিয়েছে নিয়তি, সে আছে আমাকে ছুঁয়ে সারাক্ষণ
অলক্ষ্যে। হাওয়ায় তার নিঃশ্বাসের গন্ধ পাই, বাজে
তার উচ্ছল হাসির শব্দ ব্যাকুল বুকের তারে ...’
যে কোনো মানুষের দুঃখবাদী মনে কবিতাটি রেখাপাত করবে গভীরভাবে। তাঁর স্ত্রী সাহানা হোসেন লেখক আকবর উদ্দিনের বড় মেয়ে। বিয়ে হয় ১৯৫৮-তে। তাদের দুই ছেলে, দুই মেয়ে।
তিনি বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। কবি আবুল হোসেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, পদাবলী পুরস্কার, কাজী মাহবুবুল্লাহ পুরস্কার ও স্বর্ণপদক, আবুল হাসানাৎ সাহিত্য পুরস্কার, জনবার্তা স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার পান।