শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
গল্প

সাজিদ ও শ্যামলীর ঘর-সংসার

মোস্তফা কামাল

সাজিদ ও শ্যামলীর ঘর-সংসার

সাজিদ হোসেন বাজার থেকে ফিরেছেন খালি হাতে।

মাঝেমধ্যেই তিনি এরকম কান্ড করেন। বাজারের অবস্থা খারাপ দেখলেই তার মাথায় বায়ু চড়ে যায়। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেশি দেখলে মানুষ বলে, বাজারে আগুন লাগছে। আর সাজিদ বলেন, আগুন বাজারে লাগেনি। আগুন লেগেছে আমার মাথায়! আজও হয়তো তার মাথায় আগুন লেগেছে। তাই তিনি বাজার না করে বাসায় ফিরে এসেছেন। খালি ব্যাগখানা ছুড়ে ফেলে ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন সাজিদ হোসেন। প্রচ- গরম। অথচ ফ্যান ছাড়েননি। পুরনো ফ্যানের ক্যান ক্যান শব্দটা তার মস্তকে লাগে। একদম সহ্য করতে পারেন না। ফ্যানটা বদলানোর জন্য কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও হয়নি। টানাপড়েনের সংসারে অনেক প্রয়োজনীয় কাজের কথাও হয়তো সংগত কারণেই ভুলে যেতে হয়। 

শ্যামলী অন্য ঘর থেকে তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন। তিনি মনে মনে বলেন, কি ব্যাপার! সাজিদের কি হয়েছে? বাজার না নিয়ে ফিরে এসেছে যে!

শ্যামলী একপা-দুইপা করে সাজিদ হোসেনের দিকে এগিয়ে এলেন। সাজিদ শ্যামলীকে দেখেননি। অথবা দেখেও না দেখার ভান করেছেন। শ্যামলী কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তাকে বোঝার চেষ্টা করলেন। তার চেহারায় বিরক্তির ছাপ। কপালে ছোপ ছোপ ঘাম। মাথার ঘাম গাল থুতনি বেয়ে টপটপ করে মাটিতে পড়ছে। সাজিদ কিছুক্ষণ পরপর ঘাম মোছেন। আর বিড়বিড় করে কী যেন বলেন। তার কথা শ্যামলী বুঝতে পারছেন না। তবে তার চেহারার ভঙ্গি দেখে কিছুটা আঁচ করতে পারছেন। সাজিদ কাউকে গালমন্দ করছেন।

শ্যামলী ফ্যান ছেড়ে দিয়ে সাজিদ হোসেনের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর নরম গলায় বললেন, কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?

সাজিদ হোসেন বিরক্তির সঙ্গে বললেন, না। কোনো সমস্যা না।

নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা হয়েছে। কারো সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করেছ নাকি?

ঝগড়া আর কার সঙ্গে করব? নিজের সঙ্গেই করেছি।

মানে!

মানে মানে করো না তো! কথা বলতে ভালো লাগছে না।

শ্যামলী আগেই বুঝতে পেরেছেন। তারপরও না বোঝার ভঙ্গি করলেন। সাজিদের মেজাজ খারাপ দেখলে তাকে খ্যাপাতে মজা পান শ্যামলী। আর এ সময় যদি সাজিদকে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করা যায় তাহলেই তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। এই জ্বলে ওঠা চেহারাটা দেখেন আর অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন শ্যামলী। সাজিদ এতে আরো ক্ষেপে যান। তিনি বাজারের গরম বাসায় এসে স্ত্রীর ওপর ঝাড়েন। এবারও তাই করলেন। তিনি সব ক্ষোভ স্ত্রীর ওপর ঝেড়ে বাজারের ব্যাগ তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এখন থেকে তুমিই বাজার করো। আমাকে পাঠিও না। আমি বাজার-টাজার করতে পারব না। আমার ভালো লাগে না। বাজারে গেলেই আমার মেজাজ চড়ে যায়। মেজাজ চড়তে চড়তে কবে কী হয়ে যায় কে জানে! যে কোনো দিন হার্টফেলও করতে পারি!

সাজিদের কথাটা ভালো লাগেনি শ্যামলীর। এর আগেও তিনি এরকম কথা বলেছেন। বারবার এক কথা কার শুনতে ভালো লাগে! তিনি তাই ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, হার্টফেল তুমি করবে কেন? হার্টফেল তো করব আমি! বাজার থেকে এসেই যেভাবে মেজাজ দেখাচ্ছ! আর শোন, আমিও কিন্তু বাজারে যেতে পারব না। আমার মেজাজ খারাপ হলে কাউকে চড় থাপ্পড় দিয়ে বসতে পারি।

খবরদার! এসব কাজ ভুলেও করতে যেও না! শেষে আবার কোনো কেলেঙ্কারি ঘটে যায়!

ওহ! সেই ভয়ও আছে তাহলে?

সাজিদ হোসেন স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন। কোনো কথা বলছেন না। শ্যামলী ব্যাগ হাতে নিয়ে বললেন, দাও টাকা দাও। আমি যাই। আমি দেখি বাজার করতে পারি কি না।

তোমার সঙ্গে কি আমিও যাব?

না থাক। তুমি বাসায় থাকো। রেস্ট নাও।

শ্যামলী বাজারে গেলেন। কাঁচাবাজারে গিয়ে তরকারি বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলেন, শশার কেজি কত রে?

তরকারি বিক্রেতা অন্য একজন ক্রেতার কাছ থেকে টাকা নিতে নিতে বলল, একশ’ বিশ টাকা।

শশার দাম শুনে শ্যামলীর মেজাজ একেবারে তালুতে উঠে গেল। তারপর কোন তরকারির দাম জানতে চাইবেন তা তিনি ভুলেই গেলেন। তিনি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দোয়াদরুদ পড়তে শুরু করলেন। নিজের মেজাজ নিয়ন্ত্রণের জন্যই তার এই প্রচেষ্টা। মেজাজ চড়ে গেলে যদি ছেলেটাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে বসেন! কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্যামলী নিজেকে সামলে নিলেন। তারপর বললেন, এই! এই দুদিন আগেও তো শশার কেজি ত্রিশ টাকা ছিল। দুদিনের ব্যবধানে একশ’ বিশ টাকা হয়ে গেলো!

আপা, এখন সময় খারাপ।

কিসের সময় খারাপ?

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলতেছে না?

সেই জন্য ঢাকায় তরকারির দাম বেড়ে যাবে?

আপায় যে কী কয়! এখন আর আগের দিন আছে? দিন বদলাইছে না? এক জায়গায় একটা ঝামেলা হইলে আরেক জায়গায় তার প্রভাব পড়ে না?

ওসব ভুংভাং আমাকে বুঝাও। তাহলে রোজার সময় সব জিনিসের দাম কেন বাড়ে? রোজায় তো সারাবিশ্বের মুসলিম দেশগুলো দাম কমায়। এখানে কেন বাড়ে! এবার কি বলবে; বলো?

শ্যামলীর কোনো কথাই তরকারি বিক্রেতা কানে তুলল না। সে তার মতো করেই জিজ্ঞাসা করল, আপা দিমু?

চড়া গলায় শ্যামলী বললেন, কি দিবি?

শশা।

রাখ তোর শশা! শশা কে খায়?

করোলার কেজি কত?

আশি টাকা।

কি বলিস! গতকালও তো ষাট টাকা কেজি দরে কিনেছি।

বললাম না! এখন সময় খারাপ। সব জিনিসের দাম বাড়াইয়া দিছে।

পোটল কত?

আশি।

বেন্ডি?

আশি।

লতি?

আশি। 

আচ্ছা আশির চেয়ে কম কি আছে বল তো?

কুমড়া নেন ষাট টাকা।

এতটুকু একটা কুমড়া ষাট টাকা!

লাউ নেন ষাট টাকা।

এই লাউয়ে তো একবেলাও হবে না!

তাইলে আর কি খাইবেন? ডিম আর আলু নিয়া যান।

এই ছেলে! আমি কি কিনব না কিনব সেটা তোকে বলে দিতে হবে? চড়ায়ে সব দাঁত ফেলে দেব বেয়াদব ছেলে!

সরি আপা। ভুল হইয়া গেছে।

শ্যামলী আর দাঁড়ালেন না। তিনি বাজার না করেই বাসার দিকে হাঁটা দিলেন। ঘর্মাক্ত শ্যামলী বাসায় এসে খাবার ঘরে ফ্যান ছেড়ে বসলেন। অন্য ঘর থেকে তার কাছে এগিয়ে গেলেন সাজিদ। তিনি এদিক ওদিক তাকান। রান্না ঘরে গিয়ে উঁকি দেন। কোথাও বাজারের ব্যাগ দেখতে না পেয়ে শ্যামলীর কাছে জানতে চাইলেন, কি ব্যাপার বাজার আনোনি?

শ্যামলী কোনো কথা বললেন না। চুপ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন। সাজিদ মনে মনে বলেন, তার মানে শ্যামলী বাজার আনেনি! তার আবার কি হলো? বাজারে গিয়ে তার মতো ঠান্ডা মেজাজের মানুষটার মেজাজও চড়ে গেলো?

সাজিদ হোসেনও কিছুক্ষণ চুপ করে তার সামনে বসে রইলেন। শ্যামলীর মেজাজ কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে। তিনি নিজের থেকে বলতে শুরু করলেন। আসলেই বাজারে গেলে মেজাজ ঠিক রাখা কঠিন। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলেছি। তা না হলে আজ কী যে হতো!

কি হয়েছে?

আর বলো না। ছেলেটা সব জিনিসের দাম বেশি বেশি চাচ্ছিল। আচ্ছা, আমাকে দেখলে কি মানুষ বোকা ভাবে? নাকি বড়লোক ভাবে?

বোকা ভাবার কথা না।

কেন?

কারণ তোমার চেহারা বোকা বোকা না।

তাহলে কি ভাবে, বড়লোক?

নিশ্চয়ই। অথবা ভাবে, সরল। তুমি দরদাম না করেই কিনে আনবে।

আরে তুমি জানো না! প্রত্যেকটা জিনিসের দামই ডাবল ডাবল চাচ্ছিল। আমার এমন মেজাজ খারাপ হয়েছিল! আমি শুধু বললাম, তুমি সব জিনিসের দাম এতো বেশি চাচ্ছো কেন? সে বলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নাকি দাম বাড়তি! তরকারি বিক্রেতাও আজকাল যুদ্ধের খবর রাখে! সে বলে, এই রকম একটা যুদ্ধ চলতেছে আর জিনিসপত্রের দাম বেশি হবে না?

তাহলে বোঝ, আমি কি শুধু শুধু রাগ করি? বেশি দাম শুনলে আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারি না।

শ্যামলী বললেন, আচ্ছা তুমি একটা কাজ করো।

কি?

তুমি এক ডজন ডিম আর আলু নিয়ে আসো। আলু দিয়ে ডিম ভুনা করবো। আর ডাল রান্না করবো। ওতে তোমার খাওয়া হবে না?

না হলেও হতে হবে। এ ছাড়া উপায় কি?

আর মানুষও কেন জানি হুজুগে মাতাল। কেউ হয়তো গুজব ছড়িয়েছে, যুদ্ধের কারণে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। আর ওমনি কিছু মানুষ খাবার মজুদ করা শুরু করে দিয়েছে। এমন কান্ড করে; দেখে মনে হয়, দেশ দুর্ভিক্ষের দিকে যাচ্ছে। এখন না কিনলে আর পাওয়া যাবে না। আমাদের কারণেই কিন্তু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়। তারাও সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়। সবাই তো সুযোগ সন্ধানী; সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।

আসলে আমাদের চরিত্রই নষ্ট হয়ে গেছে বুঝলা! রোজা এলেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফায়দা লোটে। এক মাসেই পুরো বছরের ব্যবসা তুলে নিতে চায়। অথচ তুমি দেখ, সৌদি আরব কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো রমজানে ব্যবসা করে না। রমজানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তারা কিন্তু সব জিনিসের দাম কমিয়ে দেয়। আর আমরা দিই বাড়িয়ে। ক্রেতারা যদি বয়কট করত তাহলে কাজের কাজ হতো। ব্যবসা লাটে উঠতো।

তা তুমি ঠিকই বলেছ। তবে তোমার একটা কথায় আমার দ্বিমত আছে। তুমি কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কথা বলেছ তো! আমার মনে হয় খুব কম মানুষই সৎ। সবাই ফায়দা লোটার তালে থাকে। তা না হলে বাজারের এমন অবস্থা হয়?

যাকগে, তুমি তাহলে ডিম আর আলু নিয়ে আসো। আমি রান্নাঘরে ঢুকলাম।

ঠিক আছে যাচ্ছি। আচ্ছা, গরুর মাংসের কি করব?

দেখ, গরুর মাংসের কেজি কত হাঁকায়?

সাত শ টাকার কম না।

কি বলো! এতো কেন?

এতো কেন না বলে বলো এতো কম কেন? ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই কেজিতে পঞ্চাশ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে।

তাহলে আজ আর কেনার দরকার নেই। কদিন পরেই কেনো। ওতো দাম দিয়ে কিনলে গলা দিয়ে নামবে না।

তা তো ঠিকই। কিন্তু শুক্রবার একটা ভালোমন্দ না খেলে চলে!

দেখ; সম্ভব হলে কেনো।

সাজিদ হোসেন ঘর থেকে বাইরের দিকে পা রাখতে না রাখতেই শ্যামলী বললেন, আচ্ছা আধা কেজি মুসুরির ডাল নিয়ে এসো।

ঠিক আছে।

সাজিদ হোসেন বাজার থেকে মসুরির ডাল, ডিম আর আলু আনলেন। মাংস কেনার নামও নিলেন না। শ্যামলী আলু দিয়ে ডিম ভুনা আর ডাল রান্না করলেন। তাই দিয়ে চলল তাদের দুপুরের ভোজ। ওটাই যেন তাদের কাছে অমৃত।

দুপুরে খাবার পর ভাতঘুমের অভ্যাস সাজিদ হোসেনের। খাওয়ার পর শোবার ঘরে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোার চেষ্টা করলেন। না। ঘুম আসছে না। তার মাথায় চিন্তা ঢুকেছে। তিনি মনে মনে ভাবেন, আমরা সর্বংসহা জাতি। যে কোনো পরিস্থিতির সঙ্গেই খাপ খাইয়ে নিতে পারি। আগে প্রতি শুক্রবারই কোনো না কোনো মাংস, মাছ থাকত। আজ খাবার টেবিলে শুধু ডিম আর ডাল! চাকরি করে যা আয় করি তার একটা অংশ বাড়িতে পাঠাই। বাকি টাকার পুরোটাই ব্যয় হয় আমাদের দুজনের সংসারের পিছনে। আগে যা আয় করেছি, এখনো তাই করছি। কিন্তু খাবার টেবিল থেকে মাছ মাংস উধাও হয়ে গেল কেন?

সাজিদ হোসেন মনে মনে ভাবলেন, রোববার সকালে জিনিসপত্রের দাম কম থাকবে। কারণ, সকালে বেশির ভাগ মানুষ কাজেকর্মে চলে যাবে। সকালের দিকে ক্রেতা সাধারণের তেমন চাপ থাকবে না। স্ত্রীকেও তিনি বলে রেখেছিলেন, রোববার সকালে অফিসের যাওয়ার আগে তিনি বাজার করে রেখে যাবেন। এই পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে সাজিদ হোসেন ঘুমাতে গেলেন। কিন্তু তিনি সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে পারলেন না। তিনি ঘুম থেকে উঠলেন অনেক দেরি করে। তাই সকালে তার বাজারে যাওয়া হলো না!

সাজিদ হোসেন দ্রুত রেডি হয়ে পড়িমরি করে অফিসের উদ্দেশে রওনা হলেন। যাওয়ার সময় স্ত্রীর হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললেন, পারলে তুমি বাজারটা করো।

শ্যামলী মাথা নেড়ে সায় দিলেন।

স্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হয়ে সাজিদ হোসেন বাসা থেকে বের হলেন। তার বাসা থেকে বাসস্ট্যান্ড খুব বেশি দূরে নয়। হেঁটে গেলে পাঁচ মিনিটের পথ। তিনি পায়ে হেঁটেই শংকর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পৌঁছলেন। সেখান থেকে বাসে উঠলেন। রাস্তায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা তাকে বাসে বসে থাকতে হয়। দীর্ঘ সময় বাসে গরমের মধ্যে বসে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অসুস্থ শরীর নিয়ে তাকে অফিসের অনেক কাজ সামলাতে হয়। অফিস ছুটির পর আবার সেই বাসে চড়ে বাসায় ফেরা। আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থাকা। বিরক্তি তার চরমে ওঠে।

এখানেই যদি বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার সমাপ্তি ঘটতো তাহলে হয়তো সাজিদ হোসেনের কোনো দুঃখ থাকতো না। কিন্তু বাসায় এসে আরো বড় ধরনের বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হলো তাকে। অনেক দিন পর তিনি স্ত্রীকে বললেন, অনেক দিন দুধ-চা খাই না। আজ কেন জানি খুব দুধ-চা খেতে ইচ্ছা করছে।

শ্যামলী বিরক্তির সঙ্গে বললেন, বাসায় দুধ নেই।

নাশতা করার কি আছে? মুড়ি খাও।

রং চা আর মুড়ি। দেবো? এছাড়া বাসায় কিছু নেই। সাজিদ হোসেন হতাশার দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। স্ত্রীকে খুব বকতে ইচ্ছা করছিল তার। কিন্তু কী ভেবে যেন কিছুই বলেননি। তিনি খাওয়ার টেবিল থেকে শোবার ঘরের দিকে চলে গেলেন। শ্যামলীও সাজিদ হোসেনের পিছনে পিছনে পা বাড়ালেন।

সর্বশেষ খবর