শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বই পড়লেই শাস্তির মেয়াদ কমে যে কারাগারে

রকমারি ডেস্ক

বই পড়লেই শাস্তির মেয়াদ কমে যে কারাগারে

দুর্ধর্ষ অপরাধীরা বন্দি থাকেন কারাগারে। কারাবন্দিদের জন্য ২০১২ সালে অদ্ভুত এক নিয়ম চালু করে ব্রাজিল।  বই পড়লেই কমবে সাজার মেয়াদ। ব্রাজিলের পাশাপাশি বলিভিয়া ও ইতালির কারাগারে এমন নিয়ম চালু হয়েছে...

অপরাধীদের স্বর্গ বলে কুখ্যাতি আছে যে কয়টি দেশের তার একটি ব্রাজিল। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ দেশের কারাগারে তাই নিরাপত্তায় বাড়াবাড়ি রকমের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশটিতে কারাবন্দির মোট সংখ্যা বিশ্বে চতুর্থ। কারাগারের ভিতরের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা চলে। পাশাপাশি রয়েছে ধারণ ক্ষমতার বেশি বন্দি এবং কারাগারের ভিতরে দাঙ্গা-হাঙ্গামা তৈরি হয়। আবার সে দেশের কিছু কারাগারে বই পড়লেই শাস্তির মেয়াদ কমানোর সুযোগ পান বন্দি অপরাধীরা। দক্ষিণ ব্রাজিলের ‘কাসা দে কাস্তোদিয়া দে পিরাকোয়ারা’ কারাগারসহ আরও তিনটি ফেডারাল প্রিজনের বন্দিরা বই পড়লেই কমে যায় শাস্তি। কাসা দে কাস্তোদিয়া দে পিরাকোয়ারা কারাগারে মোট সাত হাজার বন্দি আছে যারা খুন, ধর্ষণ ও ডাকাতির জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলজীবন কাটাচ্ছেন। বছরে একজন বন্দি মোট ১২টি বই পড়তে পারেন সেখানে। অর্থাৎ প্রতি মাসে একটি করে বই পড়া যাবে। বই প্রতি ৪ দিন ও সর্বাধিক ৪৮ দিন কমে বন্দির শাস্তির মেয়াদ। প্রতিটি বই পড়ার জন্য তাদের বরাদ্দ সময় এক মাস। এর মধ্যে সব বন্দি-পাঠককেই একটি করে বই-আলোচনা লিখে জমা দিতে হয়। যে বইটি তারা পড়ছেন তার মূল বিষয়, প্রিয় চরিত্র ইত্যাদি নানা বিষয়ে লেখা থাকে তাতে। তার ভিত্তিতে চলে পরীক্ষাও। বিশেষ একটি প্যানেল সিদ্ধান্ত নেন কারাবন্দিদের মধ্যে কারা এ সুযোগ পান। ২০১২ সালে ‘রিডেম্পশন থ্রু রিডিং’ বা ‘পড়ার মাধ্যমে মুক্তি’ নামে অভিনব এ উদ্যোগটি চালু করেছে ব্রাজিল সরকার। কারাগারে বন্দিদের অপরাধের জন্য অনুশোচনা বাড়াতে মূলত এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ব্রাজিলের মতো ওই অঞ্চলের আরেক দেশ বলিভিয়ায়ও শুরু হয়েছে একই ধরনের উদ্যোগ। তবে সেখানে একটি-দুটি নয়, মোট ৪৭টি কারাগারে চালু হয়েছে ‘বুকস বিহাইন্ড বার’ নামের প্রকল্প। বলিভিয়াতে মৃত্যুদণ্ড নেই। তবে সেখানে বিচারপ্রক্রিয়া অতি মন্থর এবং দীর্ঘ। তাই বিচার সহজে শুরু হয় না। শুরু হলে শেষ হতে হতে জীবন পেরিয়ে যায় অনেকের। শাস্তির মেয়াদ শেষ করে মুক্ত জীবনে ফেরা যেন সৌভাগ্যের বিষয়। এই অনিশ্চিত, একঘেঁয়ে জীবনে পরিবর্তন এনেছে বই। ‘বুকস বিহাইন্ড বার’ প্রকল্পটির অধীনে প্রতিটি কারাগারে খোলা হয়েছে লাইব্রেরি। ৪৭টি কারাগারের অন্তত ৮৬৫ জনের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হয়ে গেছে বই। ৮৬৫ পাঠকের মধ্যে বই পড়ায় সবচেয়ে এগিয়ে জ্যাকুলিন। এক বছরে আটটি বই শেষ করেছিলেন তিনি। বই পড়ার পর নেওয়া হয় পরীক্ষা। এ পর্যন্ত চারটি পরীক্ষা দিয়ে জ্যাকুলিন সবগুলোতেই পাস করেছেন। শুধু সময় কাটানোর কথা বললে ‘বুকস বিহাইন্ড বার’ প্রকল্প হয়তো এত সফল হতো না। কারাগারে একঘেয়েমি দূর করার বিষয়টি তো আছেই, তার সঙ্গে বিশেষ দুটি প্রণোদনাও যোগ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

ব্রাজিল, বলিভিয়ার মতো ইতালিতেও কারাবন্দিরা বই পড়ে শাস্তির মেয়াদ কমাতে পারেন। প্রতিটি বইয়ের জন্য তিন দিন করে শাস্তির মেয়াদ কমাতে পারেন সেখানের কয়েদিরা। কারারক্ষীদের একটি দল এ বিষয়টির দেখভাল করেন। বই পড়া শেষ হলে কারাবন্দিদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। কে কোন বই পড়েছেন,  সে বইয়ের আলোচনা ও নানাদিক নিয়ে এ পরীক্ষায় পাস করলেই শাস্তির মেয়াদ কমানোর সুযোগ পান বন্দিরা। প্রতি বছর ১৬টা করে বই পড়তে পারেন ইতালির কারাগারে বন্দিরা।  

সর্বশেষ খবর