শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

টাইপসেটার থেকে বিশ্বসেরা মার্ক টোয়েন

আবদুল কাদের

টাইপসেটার থেকে বিশ্বসেরা মার্ক টোয়েন

বিশ্বসেরা মার্ক টোয়েন। মাত্র ১১ বছর বয়সে দারিদ্র্যের জাঁতাকলে পড়ে বাস্তবতার কঠিন সময়ে পা রাখেন টোয়েন। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কিশোর বয়সেই স্টোর ক্লার্কও ডেলিভারি বয়ের কাজ করেন। এক সময় আর্থিক দৈন্যে ডুবেছেন।  আবার এক সময় পেয়েছেন খ্যাতি আর প্রাচুর্য। তার সময়ে তিনিই হয়ে ওঠেন সবচেয়ে ধনী লেখক...

বিশ্ববাসী তাকে মার্ক টোয়েন নামে চেনেন। এটি তার ছদ্মনাম। তবে আসল নাম স্যামুয়েল ল্যাঙ্গহর্ন ক্লিমেন্স। সাহিত্য অঙ্গনে তিনি কালজয়ী সব রম্য লেখার কারিগর। এখনো তার সাহিত্যকর্ম পাঠক, সাহিত্যবোদ্ধাদের বিস্ময়ে ডুবিয়ে রেখেছে। প্রখ্যাত এই লেখকের জন্ম ১৮৩৫ সালের ৩০ নভেম্বর। তবে মিসিসিপি অঞ্চলে বেড়ে ওঠা কালজয়ী এই লেখকের জীবন কেটেছে নানা উত্থান-পতনের ভিতর দিয়ে। ছেলেবেলা মিসিসিপি নদীর তীরেই কাটে এই বিখ্যাত সাহিত্যিকের। তার ব্যস্ত জীবনটি অনেকটা রোমাঞ্চকরভাবে কাটলেও পিতা মারা যাওয়ার পর দারিদ্র্য আর দৈন্যে কেটেছে। মাত্র ১১ বছর বয়সে আইন নিয়ে পড়াশোনা করা ছেলেটি দারিদ্র্যের জাঁতাকলে পড়ে বাস্তবতার কঠিন সময়ে পা রাখেন। পরিবারের অর্থ উপার্জনে সাহায্য করার জন্য কিশোর টোয়েন স্টোর ক্লার্ক ও ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৮৪৮ সালে বাবার মৃত্যুর পরের বছর ক্লিমেন্স হ্যানিবলের পত্রিকায় কাজ শুরু করেন টোয়েন। পিতৃহারা হয়ে পেটের দায়ে কাজে নেমেছিলেন মার্ক টোয়েন। এরপর ১৮৫১ সালে ওরিয়নের মালিকানাধীন একটি স্থানীয় পত্রিকায় টাইপসেটারের কাজ শুরু করেন। সেখান থেকেই টোয়েন কয়েকটি রম্য লেখা লিখেন এবং স্থানীয় পত্রিকায় তা ছাপা হয়। ১৮৫৩ সালে টোয়েন হ্যানিবল ছেড়ে পরের কয়েক বছর নিউইয়র্ক সিটি, ফিলাডেলফিয়া, কেওকুক এবং লওয়ার মতো শহরে একজন মুদ্রাক্ষর বা অক্ষরজীবী হিসেবে কাটিয়েছিলেন। টোয়েন টাইপসেটার হওয়ার কারণে লিখতে লিখতে একসময় লেখক হয়ে ওঠেন। পড়াশোনা বা সার্টিফিকেটে টোয়েন ছিলেন সীমিত।  আমেরিকার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন তিনি মাঝির কাজ করেন।

১৮৬৫ সালে তার কৌতুকপূর্ণ গল্প প্রকাশ হলে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তার রসিক স্কেচ ‘দ্য ড্যান্ডি ফ্রাইমিং অব স্কিটার’ বোস্টনের একটি পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর তিনি রম্য লেখক হিসেবে সবার নজরে আসেন। তবে লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে তাকে আরও অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তবে এ গল্পের কথা ভুলে গেলে চলবে না।

ক্যালিফোর্নিয়াতে কিছুদিন খনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সময় মজার এই গল্পটি তিনি শুনেছিলেন। ধীরে ধীরে এই গল্পই তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। পরবর্তীতে টাইপসেটার থেকে হয়ে ওঠেন বিখ্যাত সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন। লেখক ও বক্তা হিসেবে মার্ক টোয়েন সেই ১৯ শতকে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তার সময়ে গোটা মার্কিন সাম্রাজ্যে এত বড় তারকা আর ছিল না।  মার্ক টোয়েনের খ্যাতির সঙ্গে সঙ্গে অর্থের স্রোত এসে যোগ দেয়। বক্তৃতা দিয়ে খ্যাতি পান তিনি। লেখক খ্যাতির সঙ্গে বক্তা হিসেবে বাড়তি জনপ্রিয়তা যোগ হলে মার্ক টোয়েন রাতারাতি ধনী হয়ে ওঠেন। অর্থ আর প্রাচুর্যে জীবন কাটে তার। অবশ্য সে জীবন বেশিদিন টেকেনি। ব্যবসায় সব টাকা ঢালেন তিনি। কপাল খারাপ ছিল মার্ক টোয়েনের। ব্যবসা ভাগ্য তার পক্ষে রইল না। সব টাকা স্রেফ জলে গেল। প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। বলতে গেলে যা ছিল সবই গেল। পকেট পুরো খালি হয়ে গেল তার। টাকার হাওয়া ফুরোতেই নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করেন। অবশ্য তার পাশে এসে দাঁড়ান হেনরি হাটলসন রজার্স। টাকা দিয়ে তাকে সাহায্য করেন তিনি। আর্থিক দুরবস্থা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে শুরু করেন মার্ক টোয়েন। দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলেও সেটা যথেষ্ট ছিল না। বহু দেনায় ডুবে ছিলেন মার্ক টোয়েন। এই দেনা ফিরে পাওয়ার জন্য তার আইনি তাড়া ছিল না। তবু টোয়েন দেনা পরিশোধে মরিয়া থাকতেন।

টোয়েন একজন ভ্রমণ সাংবাদিকও ছিলেন। ১৮৬৫ সালে স্যাক্রামেন্টো ইউনিয়ন হাইওয়েতে ভ্রমণের রিপোর্ট করার জন্য টোয়েনকে নিয়োগ করা হয়। তার ভ্রমণ রিপোর্ট ‘স্যান্ডইউচ দ্বীপপুঞ্জ’ এবং হাইললুলু সে সময় পত্রিকাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করত। ১৮৬৬ সালে তিনি অ্যালতা ক্যালিফোর্নিয়ার হয়ে ভ্রমণ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করতেন। এই পেশাটিকে টোয়েন ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিলেন।

তার লেখা বেশির ভাগই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে আলাদা করে বলতে হয়, অ্যাডভেঞ্চার্স অব টম সয়্যার আর অ্যাডভেঞ্চার্স অব হাকলবেরি ফিন-এর কথা। শত বর্ষ পেরিয়েও, এখনো পাঠক তার রোমাঞ্চে বুঁদ হয়ে থাকেন। বিশ্বসাহিত্যে এই উপন্যাস দুটিকে ক্লাসিকের মর্যাদায় রাখা হয়েছে।’ মার্কিন গ্রন্থকার উইলিয়াম ফকনার বিখ্যাত মার্ক টোয়েন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘মার্ক টোয়েন ছিলেন প্রথম এবং প্রকৃত আমেরিকান লেখক। তার পরে আমরা সবাই তার উত্তরাধিকারী। কালজয়ী এই লেখকের সাহিত্যকর্মের তালিকা বেশ দীর্ঘ এবং পাঠক সমাদৃত। তাই তো তার ভূয়সী প্রশংসায় বুঁদ হয়েছেন আরেক বিখ্যাত সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়েও।

সর্বশেষ খবর