শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
অর্জন

রুবাব খানের ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ

শনিবারের সকাল ডেস্ক

রুবাব খানের ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ

২০১৮-১৯ সালে মহাশূন্যে উেক্ষপণ করা হবে নাসার পরবর্তী প্রজন্মের মহাকাশ পরিদর্শক। এটি মহাজাগতিক বস্তুর দৃশ্যমান হওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝতে আরও সহায়ক হবে। আর এই কাজটিই করছেন আমাদের দেশের ছেলে রুবাব ইমরাজ খান সৌরভ। এ ছাড়া পৃথিবীর ১০ হাজার আলোকবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এবং সূর্যের প্রায় দেড়শ গুণ বড় নক্ষত্র ‘এটা ক্যারিনাই’-এর আবিষ্কারও হয়েছে তার নেতৃত্বে।

 

এখন দায়িত্ব পালন করছেন ওয়াশিংটন ডিসি নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে। হাবল, স্পিত্জার ও হার্শেল টেলিস্কোপ ব্যবহারে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে মহাজাগতিক বস্তুর অস্তিত্ব খুঁজে বের করা এর প্রধান কাজ। নিজের দলের সঙ্গে মূলত কাজ করছেন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নিয়ে। এটি নাসার ২০১৮-১৯ সালে মহাশূন্যে উেক্ষপণ করা হবে পরবর্তী প্রজন্মের মহাকাশ পরিদর্শক হিসেবে। এটি মহাজাগতিক বস্তুর দৃশ্যমান হওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝতে আরও সহায়ক হবে। আর এই কাজটিই করছেন আমাদের দেশের ছেলে রুবাব ইমরাজ খান সৌরভ। তার উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে আরও একটি যদি উল্লেখ করতে হয় তবে প্রথমেই আসবে পৃথিবীর ১০ হাজার আলোকবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এবং সূর্যের প্রায় দেড়শ গুণ বড় নক্ষত্র ‘এটা ক্যারিনাই’ এর আবিষ্কার। তার নেতৃত্বে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় কর্মরত একদল বিজ্ঞানী এমন অন্তত পাঁচটি নক্ষত্রের খোঁজ পেয়েছেন। ২০১৪ সালে প্রকাণ্ড সব নক্ষত্রের বয়স নিয়ে পিএইচডি করেন। এরপরেই মেরিল্যান্ড রাজ্যের গ্রিনবেল্টে অবস্থিত নাসা গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে তিন বছর (আগস্ট ২০১৪-জুলাই ২০১৭) গবেষণার সুযোগ পান তিনি।  ঢাকায় বেড়ে ওঠা রুবাব খানের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের পাকুন্দা গ্রামে। জন্ম গ্রামে হলেও বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরেই। ঢাকার উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি এবং নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তির আবেদন করতে থাকেন। এরই মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে বৃত্তিসহ অ্যাস্ট্রোফিজিকস (জ্যোতির পদার্থবিজ্ঞান) বিষয়ে পড়ার সুযোগ পান। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ২০০৪ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। স্নাতক শেষে ২০০৮ সালে ভর্তি হন ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে ২০১০ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন। বাবা নুরুল রহমান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং মা ফিকরিয়া বেগম সেন্টার ওমেন্স ইউনিভার্সিটির দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। বরাবরই বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে দেশেই কিছু করুক। কিন্তু রুবাব খানের ইচ্ছা ছিল ভিন্ন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন আকাশ ছুঁয়ে দেখার। রুবাব দেশে বরাবরই বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়ালেখায় সব সময়ই ভালো ছিলেন।

 

ছাত্রাবস্থায় অংশগ্রহণ করেছেন বিতর্ক, কুইজসহ নানা সহশিক্ষা কাজে। রুবাবের অ্যাস্ট্রোফিজিকস নিয়ে স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল মুহম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন ও আবদুল্লাহ আল মুতীর বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ পড়ে। আজকের এই অবস্থানে উঠে আসার জন্য তিনি বাবা-মায়ের কাছ থেকেও পেয়েছেন যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা। বাবা-মা কখনো তার ওপর চিকিত্সক বা প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন চাপিয়ে দেননি। গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজিতে তার শিক্ষার ভিত শক্ত করে গড়ে দিয়েছে উদয়ন স্কুল ও নটর ডেম কলেজ। তবে নাসার মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য তার সহায়ক হয়েছে স্নাতকে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির উন্নত গবেষণা। রুবাবের মতে, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও কম্পিউটার বিষয়ে আমাদের দেশের পাঠ্যপুস্তক আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতির কিছু ত্রুটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল স্বপ্নের পথে অন্তরায় হয়। তাদের গত্বাঁধা নিয়ম থেকে বেরিয়ে নিজেদের যে কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞ করে তোলা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়ে রুবাব খান উপলব্ধি করেছেন গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের যত জ্ঞান থাকা দরকার, তা আমাদের দেশের অনেক ছাত্রেরই আছে। কিন্তু পাঠ্যবইয়ে যেসব প্রশ্ন দেওয়া আছে, পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। উচ্চশিক্ষার জন্য যারা দেশের বাইরে আসতে চান, তাদের উচিত একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে রাখা। বিশেষ করে যারা এইচএসসি শেষ করে বিদেশে আসতে চান, তাদের উচিত দেশের সব ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্যাট-১, স্যাট-২ এবং টোয়েফল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। একই সঙ্গে নিজের কলেজের শিক্ষকদের কাছ থেকে সুপারিশপত্র (রিকমেন্ডেশন লেটার) সংগ্রহে রাখেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৃত্তিসহ ভর্তির আবেদন করা তার জন্য সহজ হয়। এ ছাড়া বিতর্ক, কুইজ ও নানা ধরনের সহশিক্ষাক্রমিক কাজে যুক্ত থাকায় তার আবেদন প্রতিটি কলেজেই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়। নাসায় রুবাব খান মোট তিন বছর গবেষণা করবেন। নাসায় কাজ শেষ করে দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা থাকলেও দেশে অ্যাস্ট্রোফিজিকস নিয়ে গবেষণার ভালো সুযোগ নেই। তার দাবি, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত দেশ রেখে যেতে হলে আমাদের এখনই এ ধরনের গবেষণা শুরু করা উচিত। রুবাব চান অ্যাস্ট্রোফিজিকসের গবেষণায় তার জ্ঞানকে কাজে লাগাতে। দেশের অন্যান্য আগ্রহী ছাত্ররাও যেন স্নাতক পর্যায়ে স্যাট ও টোয়েফল পরীক্ষা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আর্থিক সুবিধাসহ ভর্তির জন্য আবেদন করে। পদার্থবিজ্ঞান, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, গণিত বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন হলে, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আবেদনের জন্য জেনারেল জিআরই এবং ফিজিকস জিআরই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ও ভালো ফল করা জরুরি। পিএইচডি গবেষণার জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলে ভালো। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অ্যাস্ট্রোফিজিকস নিয়ে গবেষণার ভালো সুযোগ রয়েছে, প্রয়োজনে সে সুবিধা গ্রহণ করা যেতে পারে। ছাত্রাবস্থায় বিতর্ক, কুইজ ও অন্যান্য সহশিক্ষাক্রমে যুক্ত থাকতে পারলে এসব ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর