শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুই হাজার শালিকের বন্ধু সমর

এস এ আসাদ, পাবনা


দুই হাজার শালিকের বন্ধু সমর

বেশ কয়েক বছর আগে খাবারের খোঁজে কয়েকটি পাখির ছটফটানি দেখে মনে ভালোবাসা জেগে ওঠে পাবনা শহরের মিষ্টি ব্যবসায়ী সমর কুমার ঘোষের। সেই শুরু, বর্তমানে প্রতিদিন ভোরে হাজারো শালিকের ঝুড়িভর্তি চানাচুর দিয়ে আপ্যায়ন করান তিনি। শালিক পাখিকে এমন আপ্যায়নের দৃশ্য সত্যিই যে কারও জন্য মনোমুগ্ধকর। ইতিমধ্যে পাখির প্রতি ভালোবাসার জন্য তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা।      

সম্প্রতি পাবনা শহরের আবদুল হামিদ সড়কে সাতসকালে বের হলে এমন দৃশ্য চোখ পড়ে। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর, তখনো সূর্যের দেখা মেলেনি, অনেকেরই ঘুম ভাঙেনি আবার কেউ বের হয়েছেন প্রাতঃভ্রমণে, কেউবা গন্তব্যস্থলের উদ্দেশে। পাবনা প্রেস ক্লাবের সামনের বিভিন্ন ভবনের ছাদ ও বৈদ্যুতিক তারে ঝাঁকে ঝাঁকে শালিকের অপেক্ষা, কখন আসবেন তিনি, কখন দেবেন খাবার। ঠিক পনের মিনিট পর বস্তাভর্তি চানাচুর নিয়ে হাজির সমর কুমার ঘোষ। তাকে দেখেই উত্ফুল্ল শালিকের দল। কিচিরমিচির শব্দে ছোটাছুটি আর নাচানাচি। নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শ্যামল দই ভাণ্ডারের সামনে গিয়েই তিনি ছিটিয়ে দেন ঝুড়িভর্তি চানাচুর। পাখিগুলো খাওয়ার জন্যে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করে। এরপর পেটপুরে খেয়ে ছুটে যায় দিগ্বিদিক। কথা হয় শ্যামল দই ভাণ্ডারের মালিক সমর কুমার ঘোষের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ব্যবসায়িক কারণে প্রতিদিনই খুব ভোরে দোকানে আসতে হয়। ২০১২ সালের শুরুর দিকে কয়েক জোড়া শালিক দোকানোর সামনে খাবারের খোঁজে ছটফট করছিল। এমন দৃশ্য দেখার পর পাখিগুলোর জন্য মায়া হয়। ছিটিয়ে দিলাম হাতের কাছে থাকা চানাচুর। ভয়ে ভয়ে তারা ঠুকরে খেয়ে নিল। দেখে ভালো লাগল, আবারও দিলাম খাবার। পরের দিন সকালে আবার তারা এলে খাবার দিলাম। এভাবেই তাদের অভ্যাস তৈরি হয়, আমারও সখ্যতা গড়ে ওঠে শালিকের সঙ্গে। প্রতিদিন পাখিদের খাওয়ানোর জন্য ১৫ কেজি চানাচুরের প্রয়োজন হয়। সম্পূর্ণ খরচ নিজেই করেন।

সামাজিক বনবিভাগ পাবনার বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারী বলেন, সমর কুমার ঘোষ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা সত্যিই মহৎ একটি উদ্যোগ। সামাজিক বনবিভাগ বিষয়টিকে খুব ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তার মতো অন্যরাও এভাবে পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ইতিমধ্যেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদফতর সমর কুমার ঘোষকে পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করেন।

সর্বশেষ খবর