শনিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
পাবনার খাগরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

ডিজিটাল মডেল স্কুল

♦ কার্ড পাঞ্চিং করে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ
♦ অনুপস্থিতিতে অভিভাবকের কাছে এসএমএস
♦ সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়া ট্রেইনঅ্যাপ
♦ ইন্টারনেটের সাহায্যে বিশ্বকে জানার সুযোগ

সৈকত আফরোজ আসাদ, পাবনা

ডিজিটাল মডেল স্কুল

আধুনিক ডিজিটাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক, মানবিক, সততা আর স্বনির্ভরতার শিক্ষার অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।  যে বিদ্যালয়টি বদলে দিয়েছে পুরো গ্রাম তথা এলাকার সামাজিক চিত্র। পাবনার ফরিদপুর উপজেলার খাগরবাড়িয়া গ্রাম। যে গ্রামকে আলোকিত করেছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়টি তৈরি করেছে সর্বাধুনিক ডিজিটাল শিক্ষার মডেল। যেখানে শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে স্কুলে এসে কার্ড পাঞ্চিংয়ের মাধ্যমে প্রবেশ করে শ্রেণিকক্ষে। কেউ বিদ্যালয়ে না এলে অভিভাবকের কাছে চলে যায় তাৎক্ষণিক মুঠোফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস)।

ওই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেন শিক্ষকরা। যেখানে ইন্টারনেটের সাহায্যে  গোটাবিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারে শিক্ষার্থীরা। গান, ছড়া আর কবিতায়  খেলার ছলে লেখাপড়া শিখছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা।  বিদ্যালয়ে শিশুদের মধ্যে নেতৃত্ব আর সেবার মানসিকতা তৈরির জন্য সেখানে রয়েছে কয়েকজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক। পাশাপাশি আছে খুদে ফায়ারম্যানও।

বিদ্যালয়টিতে সততা আর নৈতিক শিক্ষার জন্য আছে সততা স্টোর  যেখানে কোনো সেলসম্যান বা বিক্রেতাও নেই। শিশুরা নিজেরাই খাতা কলমসহ বইপত্র কিনে তালিকা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্য নির্দিষ্ট স্থানে দিয়ে আসে। মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য এই বিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে মহানুভবতা নামের একটি বিভাগ। যেখানে সচ্ছল শিক্ষার্থীরা গরিবদের জন্য গোপনে রেখে আসে জামাকাপড় অথবা টিফিন। সেখান থেকেই অসহায় দরিদ্র শিশু শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরাই প্রতিদিন পরিষ্কার করে তাদের ক্যাম্পাস আর পরিচর্যা করে বাগান। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়টিতে পড়তে পারায় তাদের খুবই ভালো লাগে। পাশাপাশি তারা শিক্ষকদের প্রশংসা করে। বলে, তারা খুবই ভালো, আমাদের সব ধরনের খোঁজখবর নেন। 

আবদুস সবুরসহ কয়েকজন অভিভাবক জানান, বিদ্যালয় শুরুর সময় প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে হয় নৈতিক শিক্ষার ক্লাস। সত্যবাদিতা, শৃঙ্খলা, পারিবারিক ও সামাজিক আচরণ সম্পর্কেও শিক্ষা দেওয়া হয় সেখানে। শিক্ষার এই ধরনের পরিবেশ সৃষ্টিতে খুশি আমরা।

এ বিষয়ে ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষানুরাগী আলী আশরাফুল কবির বলেন, খাগরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এই উপজেলার গর্ব। আমরা এই বিদ্যালয়টি নিয়ে গর্ববোধ করি। ওই এলাকায় গেলে আমি নিজেও বিদ্যালয়ে কিছুটা সময় ব্যয় করি। এ ধরনের নৈতিক শিক্ষার জন্য এমন প্রতিষ্ঠান সারা দেশের প্রতিটি গ্রামে হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি দাবি করেন। ফরিদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, ওই বিদ্যালয়ে একদিন গিয়ে আমি আশ্চর্য হই এবং উপজেলা পরিষদ থেকে যতটুকু সম্ভব সাহায্য সহযোগিতা করি।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক তানিয়া খাতুন, রাকিবুল হাসান, ইমরুল কায়েস, দীপক কুমার ও সরোয়ার হোসেন। তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বিদ্যালয়টিতে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে সাত শতাধিক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে। সম্প্রতি এই বিদ্যালয় রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।  খাগরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল বাসিত জানান, শুধু নৈতিক আচরণগত শিক্ষাই নয়, লেখাপড়াতেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে নিভৃত পল্লীর এই শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন সময়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রাখছে। এতে আমরা শিক্ষকরাও গর্বিত। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয় এই বিদ্যালয়টির মতো হলে বাংলাদেশের শিক্ষা ও নীতি নৈতিকতা অনেক দূর এগিয়ে যেত। তবে তারা দেশের মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে ২০১১ সালে। বিদ্যালয়টিতে কর্মরত গ্রামের কিছু শিক্ষক গতানুগতিক শিক্ষার পরিবর্তে নতুন একটি ধারার শিক্ষার স্বপ্ন দেখান গ্রামবাসীকে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে আসেন গ্রামবাসী আর জনপ্রতিনিধিরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর