শনিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
চট্টগ্রামে প্রতিবন্ধী দুই পাইলট

হুইল চেয়ারে বসেই ১৮ হাজার কি মি আকাশযাত্রা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

হুইল চেয়ারে বসেই ১৮ হাজার কি মি আকাশযাত্রা

ফ্রান্সের নাগরিক গিলিউম ফেরাল এবং সুইস নাগরিক মাইক লমবার্গ। দুজনই পাইলট। আবার দুজনই প্রতিবন্ধী। কিন্তু বিমান চালিয়ে তারা দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে বিমানে হুইল চেয়ারে বসেই প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের উৎসাহিত করেত বিমান চালিয়ে ঘুরেছেন নয়টি দেশ। আগামীতে যাবেন আরও ৩১টি দেশে।   

জানা যায়, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের আমন্ত্রণ এবং হ্যান্ডিফ্লাইট অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত ২১ ডিসেম্বর পৃথক ফ্লাইটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেন গিলিউম ফেরাল ও মাইক লমবার্গ। তাদের এ ভ্রমণের সমন্বয়ক হিসেবে আছেন দানিয়েল। ইতালি, গ্রিস, মিসর, সৌদি আরব, দুবাই, পাকিস্তান ও ভারতের নাগপুর হয়ে চট্টগ্রাম আসেন তারা। চট্টগ্রাম থেকে থাইল্যান্ডের চিংমাই যান গত ২৬ ডিসেম্বর। আগামী দুই মাসে আরও ৩০টিসহ মোট ৪০টি দেশ ভ্রমণ করে সুইজারল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার কথা তাদের। জার্মান প্রযুক্তির তৈরি ছোট্ট এ এয়ারক্রাফট প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয় ‘হ্যান্ডিফ্লাইট অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর কার্যক্রম। সারা বিশে^ প্রতিবন্ধীদের সচেতন এবং উৎসাহিত করতে এ অভিযান পরিচালনা করেন তারা।    

লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রাম জেলা গভর্নর নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘দুই প্রতিবন্ধী পাইলট একটি বিশেষ বার্তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে কাজ করছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে তারা এখন একেকজন বৈমানিক। তারা এটাই প্রমাণ করেছেন, চেষ্টা, প্রবল আগ্রহ, ইচ্ছাশক্তি এবং একাগ্রতা থাকলে জীবনে অনেক অসম্ভবই সম্ভব হয়।’ লায়ন্স ক্লাব অব চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক হাসান আকবর বলেন, ‘এ দুই প্রতিবন্ধী পাইলট আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাদের এতটুকু স্পর্শ করতে পারেনি। এতবড় প্রতিবন্ধকতা সঙ্গে নিয়ে তারা আকাশপথে পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছেন।’ 

পাইলট গিলিউম ফেরাল বলেন, ‘ছেলেবেলা থেকেই আমার বিমান চালানোর শখ। ২৫ বছর বয়সে এক বিমান দুর্ঘটনায় দুই পা অচল হয়ে যায়। তবুও থেমে থাকিনি। ছেলেবেলার সেই স্বপ্ন পূরণে আবার বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ শুরু করি। জার্মানির তৈরি বিশেষ বিমানে নেওয়া হয় এ প্রশিক্ষণ। সাধারণ বিমান চালানোর সময় পায়ের ব্যবহার বেশি হলেও এসব বিমানে সব কাজ হয় হাতে। বিমান চালানোর সব পরীক্ষা শেষে গত দুই মাস আগে এর স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছি পেশাদারি বিমান চালানোর সনদ।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমার আহ্বান, প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে তাকে কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়, বরং তারাও দেশ-জাতির জন্য কাজ করতে পারে।’

আরেক বৈমানিক মাইক লমবার্গ বলেন, আমি পেশাদার বিমানচালক। ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা অচল হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে আবারও বিমান চালানো শুরু করি। সাধারণ যাত্রীবাহী বিমান ও এয়ারক্রাফট চালানোর মধ্যে পার্থক্য আছে। এখন আমি এয়ারক্রাফট চালাই। আমার মতো প্রতিবন্ধীদের উৎসাহিত করতে ‘হ্যান্ডিফ্লাইট অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি।’ আয়োজক সূত্রে জানা যায়, গিলিউম ফেরাল ১৯৬০ সালে মাদাগাস্কারের তানানরাইভ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তবে বর্তমানে গিলিউম ফেরাল ফ্রান্সের নাগরিক। এখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি ১৯ বছর বয়স থেকে প্রশিক্ষণ নেন বিমান চালানোর। সদস্য হন অ্যারো ক্লাবের। কিন্তু বিমানের একটি ফ্লাইট দুর্ঘটনায় দুই পা অচল হয়ে যায় তার। ১৯৮৫ সালে ঘটে এ দুর্ঘটনা। এরপর দুবছর কাটে রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টারে। পরে একটি ব্যাংকে কাজ শুরু করেন ২০১৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন। এরপর আবার শুরু করেন ফ্লাইট চালানো। অন্যদিকে, পাইলট মাইক লমবার্গ দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত সুইস নাগরিক। পেশাদার এ পাইলট ঘুরে এসেছেন ১০টি দেশ। তিনিও সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন প্রায় ১৮ বছর আগে। দুর্ঘটনায় পা হারান। কিন্তু হার মানেননি। অপ্রতিরোধ্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে জয় করেন পৃথিবী।

সর্বশেষ খবর