শনিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

হংকংয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফারিহার অন্যরকম স্বপ্ন

শনিবারের সকাল ডেস্ক

হংকংয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফারিহার অন্যরকম স্বপ্ন
O       মাত্র ২০ বছর বয়সে হংকংয়ের আইন পরিষদে সহযোগী হিসেবে কাজ করার সুযোগ
O         হংকংয়ের সংখ্যালঘুদের নিয়ে কাজ শুরু করেছেন
O         ইতিমধ্যে সবার নজর কেড়েছেন বাংলাদেশি এই বংশোদ্ভূত

 

এখন হরহামেশাই শোনা যাচ্ছে দেশের বাইরে বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোভূতদের সাফল্যের গল্প। এই তালিকায় নতুন একটি নাম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফারিহা সালমা। জন্ম হংকংয়ে। আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। হতে চান হংকংয়ের জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের পরে একজন আইনজীবী। মাত্র ২০ বছর বয়সে হংকংয়ের আইন পরিষদে সহযোগী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে নজর কেড়েছেন বাংলাদেশি এই তরুণী। পুরো নাম দিয়া ফারিহা সালমা দিয়া বাকের। যিনি একদিন সেখানকার আইনপ্রণেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এত কমবয়সে এই সাফল্যে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ফারিহা। এর আগে হংকংয়ে বাংলাদেশি তো বটেই আর কোনো সংখ্যালঘু থেকে এত কম বয়সে কেউ আলোচনায় আসেননি। তাই হংকংয়ের সংবাদমাধ্যমেও ফারিহাকে নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফারিহা বলেন, ‘আমি সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে এসেছি এবং আমার বয়স মাত্র ২০, এটা দেখে আমার সহকর্মীরা হতবাক হয়ে গিয়েছিল।’ ২৫ বছর আগে ফারিহার বাবা-মা পোশাক ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য উপকরণ উৎপাদনের কাজ নিয়ে স্থানীয় শাখার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হিসেবে হংকংয়ে চলে যান। পরবর্তীতে জীবন-জীবিকা ও সন্তানদের সুন্দর আগামীর প্রত্যয়ে সেখানেই স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। বাবা, মা, এক ভাই ও ফারিহাসহ তাদের চার সদস্যের পরিবার কউলুনে বসবাস করেন। প্রতি দুই বছর পর পর নিজের দেশে আসেন আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে। ছোটবেলা থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন পড়াশোনায়। হংকংয়ের সিটি ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন মেধাবী এই মেধাবী ছাত্রী। ইতিমধ্যেই জীবনের একটি সম্ভাবনাময় অধ্যায়ে পা রেখেছেন। কাজ করছেন দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক আইনপ্রণেতার সমন্বয়ে গঠিত আইনশৃঙ্খলা কাউন্সিলের সহকারী হিসেবে। এর আগে কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাউকেই এই অবস্থানে দেখা যায়নি। একজন ভিনদেশি হয়ে হংকংয়ের মূলস্রোতের অংশ হওয়াটা নিঃসন্দেহে কঠিন। এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। যারা সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচিত হন তাদের জন্য স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে বাসা ভাড়া, চাকরি সব ক্ষেত্রেই তাদের নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তার কাজের জায়গাটি বাংলাদেশি হিসেবে হংকংয়ে তো প্রথমই,

স্থানীয়ভাবেও তিনি প্রথম একজন উকিল হবেন, যিনি কাজ করবেন স্থানীয় সংখ্যালঘুদের আইনি অধিকার রক্ষায়। কাজ ও ভালো লাগার জায়গা থেকে মাত্র বিশ বছর বয়সেই সাবলীলভাবে রপ্ত করেছেন ক্যান্টোনিজ, ম্যান্ডারিন, বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ও ফিলিপিনো ভাষা। সংখ্যালঘুদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে চান তিনি। এ প্রসঙ্গে ফারিহা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ‘আমি সরকার ব্যবস্থায় আরও বেশি সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ দেখতে চাই। আমি চাই হংকংয়ে সংখ্যালঘুরা আরও উন্নত জীবন পাক।’ এই স্বপ্ন পূরণে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফারিহা এরই মধ্যে নিজের স্বপ্ন পূরণের প্রথম পদক্ষেপ পূরণ করেছেন। তিনি আইন পরিষদের একজন সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। হংকংয়ের আইন পরিষদে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা। হংকংয়ে জাতিগত বিভেদ বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যগুলো তার চোখে খুব করে ধরা পড়ে কৈশোরেই। হংকংয়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজমান অসামঞ্জস্যগুলো কীভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে কাজ করবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ফারিহা বলেন, ‘আমি চাই সরকারের মধ্যে আরও বেশিসংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ কাজ করুক। যাতে সবার মধ্যে সমঅধিকারের ক্ষেত্র তৈরি হয় এবং তারাও যেন সমাজে অন্যান্য সবার মতো অধিকারের কথা বলতে পারে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারে।’ গত বছর মার্চে ‘ডাইভারসিটি লিস্ট’ এ সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত হন ফারিহা। একটি সম্মেলনে তার দেওয়া বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হন হংকংয়ের আইনপ্রণেতা ডেনিস কোক উইং-হাং। বর্তমানে তারই সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন এই বাংলাদেশি বংশোভূত।

সর্বশেষ খবর