শনিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
নারীদের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ

ছুটছে নারী ‘ও বোন’

সাইফ ইমন

ছুটছে নারী ‘ও বোন’

ছবি : রাফিয়া আহমেদ

নারীদের জন্য নারী বাইক রাইডার সেবা ‘ও     বোন’। ও ভাই সলিউশনস লিমিটেডের রাইড শেয়ারিং সেবা প্লাটফর্ম ‘ও বোন’। ‘ও ভাই’ অ্যাপের অন্তর্ভুক্ত ‘ও বোন’ অপশনে গিয়ে শুধু নারীরাই এ রাইড শেয়ারিং সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। ইতিমধ্যে নিবন্ধিত ২৫০ জনের বেশি নারী রাইডার হিসেবে এ সেবাদান কার্যক্রমে যুক্ত। অপেশাদার নারীদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চালু করেছে প্রশিক্ষণ কর্মশালা...

 

আফরিন সুলতানা পড়ছেন তিতুমীর কলেজে ফাইনাল ইয়ারে। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রথম জানতে পারেন ‘ও বোন’ বিষয়ে। ট্রেনিংয়ের বিষয়টা জেনে দারুণ খুশি হন। তিনি বলেন, ‘ট্রেনিংয়ের পরই জব রেডি। পুরো বিষয়টা আমার জন্য বিস্ময়কর এক যাত্রা। এখানে আসার পর নিজের সক্ষমতার ওপর আমি বিশ্বাসী হয়ে উঠি। এখন নিজেই আয় করছি। পাশাপাশি পরিবারকেও সহায়তা করতে পারছি। সত্যিই দারুণ আছি আমি।’

এরকম আরও অনেক নারীই এখন স্বাবলম্বী হতে পারছেন। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবার ও সমাজের উপকারে আসছেন। ঢাকা শহরে একদিকে যানজটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার বিরক্তি, অন্যদিকে রোজ  রোজ গণপরিবহনে হয়রানি। এ থেকে রেহাই পেতেই নিজের একটি বাহন থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন রাবেয়া। কিনে  নেন একটি স্কুটি। এখন সেই স্কুটিতেই নারী যাত্রীদের সেবা দিয়ে আয় করছেন তিনি ‘ও বোন’-এর মাধ্যমে।

রাইড শেয়ারিং অ্যাপে যুক্ত হয়েছে নারী বাইকারদের নিয়ে নারীদের জন্য রাইড  শেয়ারিং সেবা ‘ও বোন’। ‘ও ভাই সলিউশনস লিমিটেড’-এর রাইড শেয়ারিংয়ের একটি প্লাটফর্ম ‘ও বোন’।

এই সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আফরিন সুলতানা, রাবেয়া বশরীর মতো আরও অনেকে। গত বছর ২৮ এপ্রিল থেকে নারীদের জন্য এই বিশেষ সেবা চালু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি নারী বাইকার এ সেবার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ছুটে  বেড়াচ্ছেন রাজধানীতে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যে কোনো নারী ও ভাই অ্যাপের ‘ও বোন’ অপশনের মাধ্যমে খুঁজে নিতে পারবেন তার রাইডারকে।

‘ও বোন’-এর রাইডাররা খণ্ডকালীন ও পূর্ণকালীন দুভাবেই কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি রাইডারদের আলাদা করে বাইক, হেলমেট, রেইনকোট সরবরাহ করছে। অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর ও আইওএস অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। ‘ও ভাই সলিউশনস লিমিটেড’ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এমজিএইচ গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান। অ্যাপটির মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন নগদ টাকা, কার্ড এবং ‘ও ভাই পে’-এর মাধ্যমে। ‘ও ভাই পে’ এক ধরনের ওয়ালেট যেখানে একজন ব্যবহারকারী ‘ও ভাই’ সেবাটি নেওয়ার জন্য টাকা জমা রাখতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে শুধু গাড়ি বা মোটরসাইকেল নয়, এতে পাওয়া যাচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসও। অ্যাপটির ‘ও বোন’ নামের অপশনে শুধু নারীরাই রাইড শেয়ারিং সেবা নিতে পারবেন। ইতিমধ্যে নিবন্ধিত ২৫০ জন নারী রাইডারসহ আরও ৫০ জন নারী রাইডারকে এ সেবা দিতে প্রস্তুত করেছে কর্তৃপক্ষ।

অ্যাপটিতে একটি ‘ইন-অ্যাপ’ এসওএস ফিচার রয়েছে যার মাধ্যমে নারীরা যে কোনো সময় ‘ও ভাই’ মূল সাপোর্ট সেন্টারে  যোগাযোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া অপেশাদার নারীদের জন্য ‘ও ভাই’ তাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। ‘ও বোন’ নতুন উদ্যোগ হলেও ইতিমধ্যে ইমারজেন্সি এসওএস, বাধ্যতামূলক হেলমেট, ৫০ কিলোমিটারের গতি নিয়ণন্ত্রক, পরিচ্ছন্নতা ও বিভিন্ন রকমের পেমেন্ট অপশনসহ অন্যান্য আকর্ষণীয় ফিচারের মাধ্যমে এ সেবা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।

এ বিষয়ে ‘ও ভাই সলিউশনস লিমিটেড’ এর চিফ অপারেটিং অফিসার কাজী ওমার ফেরদৌস বলেন, আমাদের এখানে যাতায়াতের যে সমস্যা আছে এগুলোকে অ্যাড্রেস করার জন্যই আমাদের এই আয়োজন। নারীদের কমফোর্ট জোনের কথা চিন্তা করেই এই অ্যাপটি আনা হয়েছে। যেন একজন নারী আমাদের ‘ও বোন’ সার্ভিসটি ব্যবহার করতে পারেন তার কমফোর্ট জোনের কথা চিন্তা করে। আবার নারী রাইডাররা এই সেবাটি দিচ্ছেন। ফলে তাদের কর্মসংস্থানেরও পথ তৈরি হচ্ছে। আয় করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।’

‘ও বোন’ অ্যাপটির মাধ্যমে অনেক নারীই এখন আয় করছেন। তেমনি একজন হলেন নিপা (ছদ্মনাম)। নিপা নিজের পরিচয় প্রকাশে আগ্রহী নন। কারণ পরিবার থেকে তাকে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছিল। কিন্তু তিনি চান পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। তাই চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসেন নিপা। এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে পড়াশোনা শুরু করেন। পাশাপাশি নিজের খরচ বহনের জন্য যুক্ত হন ‘ও বোন’-এর সঙ্গে। এখন তিনি ট্রেনিং নিচ্ছেন। স্বপ্ন দেখছেন সুন্দর একটি ভবিষ্যতের। ‘ও বোন’ অ্যাপের মাধ্যমে আয় করছেন রাইডার ফারহানা আফরোজ। তিনি বলেন, ‘ও বোন’ পরিবার ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। ‘ও বোন’ এমন একটি সার্ভিস যেটা দিয়ে মেয়েরা যে কোনো বয়সেরই হোক না কেন অল্প সময়ে যে কোনো দূরত্বে তারা চলাচল করতে পারছেন। ফলে অর্থের পাশাপাশি টাইম সেভ হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আমার কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে যে কোনো চাকরিতে উপকারে আসবে।’ এ ধরনের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বাংলাদেশে প্রথম। অ্যাপটিতে বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা আর কারও নেই। এক অ্যাপে চার ধরনের যানবাহন বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকায় যাত্রীদের তুলনামূলকভাবে কম সময় অপেক্ষা করতে হবে। ফলে দ্রুত  পৌঁছতে পারবেন যাত্রীরা। এ ছাড়া ‘ও বোন’  সেবা অন্যদের থেকে ভিন্নতা থাকায় ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমে পরীক্ষামূলক চালুর পর দিন দিন ‘ও বোন’ অ্যাপটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকের মতে, নারী রাইডারদের পেছনে বসা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হতে পারে।

 

সিওও-এর কথা

আমাদের এখানে যাতায়াতের যে সমস্যা আছে এগুলোকে অ্যাড্রেস করার জন্যই আমাদের এই আয়োজন। নারীদের কমফোর্ট জোনের কথা চিন্তা করেই এই অ্যাপটি আনা হয়েছে। যেন একজন নারী আমাদের ‘ও বোন’ সার্ভিসটি ব্যবহার করতে পারেন তার কমফোর্ট জোনের কথা চিন্তা করে। আবার নারী রাইডাররা এই সেবাটি দিচ্ছেন। ফলে তাদের কর্মসংস্থানেরও পথ তৈরি হচ্ছে। আয় করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর