২০২২ সালের ৬ নভেম্বর কী বার? রবিবার। ১৯৯৪ সালের ২৫ জানুয়ারি? মঙ্গলবার। ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি? বুধবার। এভাবে একের পর এক তারিখে কী বার তা বলে যাচ্ছিলেন তাইফ আহমেদ (২৫) নামের মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক। তিনি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকী গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও এভাবে সারাবিশে^র রাষ্ট্র ও রাজধানীর নামও বলে যায় দ্রুততম সময়ে।
তাইফ আহমেদ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও নেই। কিন্তু ১৯০০ থেকে ২০৯৯ সাল পর্যন্ত ২০০ বছরের মধ্যে যে কোনো তারিখে কী বার তা বলে দিতে পারেন মুহূর্তেই। এ সময়ে কোন মাসের নির্ধারিত বারে কত তারিখ তাও বলে দেন দ্রুততার সঙ্গে। সাধারণ জ্ঞান আর টেকনোলজিতেও আছে দক্ষতা। এলাকায় তাকে বলা হয় জীবন্ত ক্যালেন্ডার।
তাইফ আহমেদ বলেন, তিনি নিজে একটি গাণিতিক সূত্র আবিষ্কার করেছেন। যে সূত্র অনুযায়ী তিনি মুহূর্তেই দিন-তারিখ বলে দিতে পারেন। কাজের স্বীকৃতির জন্য তার উদ্ভাবিত সূত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে চান বলেও জানান তিনি। তবে রাষ্ট্র ও রাজধানীর নাম তিনি ধীরে ধীরে আত্মস্ত করেছেন বলে তাইফের দাবি।তাইফের মা আছমা আহমেদ বলছিলেন, ছোট থেকেই অন্য শিশুদের মতো আচরণ করত না তাইফ। এজন্য তাকে নেওয়া হয় চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসকের মতে সে জন্মগতভাবেই অস্বাভাবিক। তারপর তাকে বাড়িতে রেখেই লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করা হয়। একসময় তার বিশেষ কিছু কাজ পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছে বিস্ময় সৃষ্টি করে। এর মধ্যে যে কোনো মোবাইল নম্বর এক-দুবার শুনলেই মুখস্থ হয়ে যায়। মোবাইল, টিভি ও কম্পিউটারের ছোটখাটো কাজ ও সমস্যার সমাধান করতে শেখে সে। পরিবারের লোকেরা এক সময় আবিষ্কার করেন তৎক্ষণাৎ বলা তারিখে কী-বার তা বলতে পারে তাইফ। নিজেই আবিষ্কার করে এর বিশেষ সূত্র। যা সে তার পারিবারিকভাবে পাওয়া শিক্ষায় লিপিবদ্ধ করে রাখে। তাইফের এ বিস্ময় এলাকার গণ্ডি ছড়িয়ে জানাজানি হয় জেলাব্যাপী। এখন অনেকেই তাকে দেখতে আসে। এলাকাবাসী জানান, প্রথমদিকে তাইফের প্রতিভা দেখে এলাকার লোকজন বেশ আশ্চর্য হতো। এক সময় তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। এখন তাকে এলাকার গর্ব বলেও মনে করেন অনেকে। তাইফ যেহেতু মানসিক ভারসাম্যহীন, এজন্য ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তার পরিবার। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারেননি তারা। এজন্য সরকার ও বৃত্তবানদের কাছে ছেলের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার আবেদন জানিয়েছেন তাইফের মা।