শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নড়াইলে সাইকেল বালিকা

সাজ্জাদ হোসেন, নড়াইল

নড়াইলে সাইকেল বালিকা
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ছেলেদের মতো মেয়েদেরও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াতের জন্য প্রেরণা দেওয়া হয়...

 

নড়াইল সদর উপজেলার গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের  ১৫০ ছাত্রী এখন ছেলেদের মতোই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়। এখন আর তাদের ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। বাবা-মায়ের কাছ থেকেও বাড়তি টাকা নিতে হয় না। বখাটেরাও রাস্তা থেকে আগের মতো ইভ টিজিং সুযোগ পায় না। প্রথমদিকে অনেকেই নানা রকম কথা বলেছে। সবকিছু উপেক্ষা করে ওরা ১৫০ ছাত্রী নিয়মিত ও সময়মতো স্কুল করতে পারছে। পড়াশোনা ভালো হওয়ায় বিদ্যালয়ের ফলাফলও ভালো। আগামীতে বাল্যবিবাহ, ইভ টিজিং, নারী নির্যাতনসহ সমাজ থেকে সব প্রকার কুসংস্কার দূর করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

নড়াইল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন শতাধিক। এই বিদ্যালয়ে নড়াইল সদর ও যশোরে বাঘারপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এগারোটি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে। বাকলী গ্রামের মেয়ে স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নিপা বলে, দুই জেলার সীমান্তবর্তী এই এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট কাঁচা। ৫/৭ কিলোমিটার দূরের শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে থাকে। তাই বাইসাইকেলে করে স্কুলে আসলে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচে। ছেলেরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসলেও মেয়েদের ভ্যানে ও হেঁটে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হতো। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ প্রয়াসে সাইকেল কিনে দেওয়া হয়  মেয়েদের। চার বছর আগে প্রথমে কয়েকজন ছাত্রী সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু করে। বর্তমানে ১৫০ ছাত্রী নিয়মিত সাইকেলে চলাচল করে। শুধু নিজে নয়, বান্ধবীদেরও সাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে আসে। তবে সাইকেল নিয়ে যাতায়াতে প্রথম দিকে অনেক রকম কথা শুনতে হলেও এখন আর কেউ কিছু বলে না। এখন তারা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আগামীতে বাল্যবিবাহ, ইভ টিজিং, নারী নির্যাতনসহ সমাজ থেকে সব প্রকার কুসংস্কার দূর করার ইচ্ছা তাদের। এই বিদ্যালয়ের ছাত্ররাও নিয়মিত সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। ছাত্রীদের কোনো বখাটে উত্ত্যক্তের চেষ্টা করলে ছাত্ররা প্রতিহত করে থাকে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ছেলেদের মতো মেয়েদেরও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াতের জন্য প্রেরণা দেওয়া হয়।

এখন আমরা ছেলে ও মেয়েদের আলাদা করে দেখা হয় না। তিনি আরও বলেন, গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিভিন্ন খেলাধুলায় নিয়মিত অংশ গ্রহণ করা সত্ত্বেও স্কুলের মাঠের অবস্থা শোচনীয়, সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠে হাঁটু পানি জমে যায়। তাছাড়া স্কুলের বাউন্ডারি প্রাচীর না থাকায় মেয়েরা মারাত্মকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। এ বিষয় জেলার বিভিন্ন মহলে বলার পরেও কোনো ফয়সালা হয়নি। তাই এ ব্যাপারে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এই স্কুলের মেয়েদের মতো অন্যান্য স্কুলের মেয়েরাও এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর