শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাস্টের জয়জয়কার

জুবায়ের মাহমুদ

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাস্টের জয়জয়কার
‘লুনার ভিআর’ নামে একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ তৈরির মাধ্যমে ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ’ এ সারা বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ চারে উঠে এসেছে শাবির টিম সাস্ট অলিক। মোট ছয়টি ক্যাটাগরির মধ্যে ‘বেস্ট ইউজ অব ডাটা’ ক্যাটাগরিতে ক্যালিফোর্নিয়া, কুয়ালালামপুর ও জাপানের সঙ্গে শীর্ষ চারে স্থান পায় সাস্ট অলিক

 

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সফলতা পাচ্ছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। অনেক শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা (নাসা) কর্তৃক আয়োজিত ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতায় সারা বিশ্বে ২৭২৯টি দলকে পিছে ফেলে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেন শাবির শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ‘ইউনিভার্সিটি ফিজিক্স কম্পিটিশন’-এ লাভ করেন রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক। পাশাপাশি  প্রোগ্রামিংয়ে দেশসেরা হয়ে আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং কনটেস্টে অংশ নিতে পর্তুগাল যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থী। পদার্থবিজ্ঞান, অ্যাপস তৈরি আর প্রোগ্রামিংয়ের পাশাপাশি রোবটিক্সেও কম যান না এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আগামী মার্চে ভারতে আইআইটি রুর্কির আয়োজিত এক টেক ফেস্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে শাবির একটি রোবটিক্স টিম। সার্বিক বিষয়ে শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসব সাফল্য গর্বের ব্যাপার। এভাবেই শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাবে আমাদের প্রাণের এই বিশ^বিদ্যালয়।

 

নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে বিশ্বের শীর্ষ চারে

‘লুনার ভিআর’ নামে একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ তৈরির মাধ্যমে ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ’-এ সারা বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ চারে উঠে এসেছে শাবির টিম সাস্ট অলিক। মোট ছয়টি ক্যাটাগরির মধ্যে ‘বেস্ট ইউজ অব ডাটা’ ক্যাটাগরিতে ক্যালেফোর্নিয়া, কুয়ালালামপুর ও জাপানের সঙ্গে শীর্ষ চারে স্থান পায় সাস্ট অলিক। বিশে^র ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত ২৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেয় তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা (নাসা) এই ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

সাস্ট অলিকের মেন্টর বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী জানান, আমরা ‘লুনার ভিআর’ নামে একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ তৈরি করি। নাসা প্রদত্ত বিভিন্ন ডাটা ব্যবহার করে এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপটির মাধ্যমে নাসা আপোলো ১১ মিশনের ল্যান্ডিং এরিয়া ভ্রমণ, চাঁদ থেকে সূর্যগ্রহণ দেখা এবং চাঁদকে একটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়ালভাবে আবর্তন করা যাবে।

সাস্ট অলিকের সদস্যরা হলেন- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী এস এম রাফি আদনান, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী কাজী মাইনুল ইসলাম, একই বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী আবু সাদিক মাহদি ও একই বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান। 

বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে শাবির রোবটিক্স টিম

এবার বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স টিম ‘সাস্ট ক্র্যাকারনাট’। আগামী ১৫ থেকে ১৭ মার্চ ভারতের উত্তরাখণ্ডে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব  টেকনোলজি (আইআইটি) রুর্কি আয়োজিত অ্যানুয়াল টেক ফেস্ট ‘কগনিজেন্স’-এ যাচ্ছে তারা। এই টেক ফেস্টে ‘সাইবর্গ ব্রেক ইন’ কনটেস্টে অংশগ্রহণ করবে ‘সাস্ট ক্র্যাকারনাটের খুদে রোবটবিজ্ঞানীরা।

‘সাস্ট ক্র্যাকারনাট’ টিমে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফজলে এলাহি তন্ময়, রবি পাল, নুসরাত জাহান মীম, গণিত বিভাগের মিনহাজুল আবেদিন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের নুর-ই-জান্নাত। এরা সবাই ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী।

‘সাস্ট ক্র্যাকারনাট’র দলনেতা ফজলে এলাহি তন্ময় বলেন, ‘বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে প্রতনিধিত্ব করতে পারছি এটা ভেবে ভালো লাগছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ এবং নিজেদের সেরাটাই আমরা দিতে চাই।’

এর আগে গত ৩০ থেকে ৩১ জানুয়ারি আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ইন্টার ইউনিভার্সিটি ও কলেজ  টেক-বিজ কম্পিটিশন ‘মাইন্ডস্পার্ক’। এই প্রতিযোগিতার ‘রোবোরেস’ সেগমেন্টে সারা দেশের প্রায় ৫৮টি টিমকে পিছে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয় ‘সাস্ট ক্র্যাকারনাট’। এরই অংশ হিসেবে আইআইটি রুর্কির অ্যানুয়াল টেক ফেস্ট ‘কগনিজেন্স’-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায় শাবির এই রোবটিক্স টিম। সাফল্যের পিছনের গল্প বলতে গিয়ে টিমের অন্যতম সদস্য মিনহাজুল আবেদীন জানান, ‘রাতের পর রাত জেগে কাজ করেছি অনেক  কনটেস্টের জন্য। বার বার বিভিন্ন সমস্যায় পড়েও সামলে নিয়েছি আমরা। কনটেস্ট হারলে আমাদের মন খারাপ হয় কিন্তু হাল ছাড়িনি। আবার ঘুরে দাঁড়াই পরের কোনো কন্টেস্টের জন্য। কঠোর পরিশ্রম আর হার না মানার মানসিকতা আমাদের পথচলার মূলমন্ত্র।’

এই টিমের সদস্যরা চলতি বছর বুয়েটে অনুষ্ঠিত রোবো কার্নিভালের পাথফাইন্ডার সেগমেন্টে এডভান্স লাইন ফলোয়ারে চ্যাম্পিয়ন, মাইন্ড স্পার্কে রোবোরেস ও ন্যাশনাল সায়েন্স কার্নিভালে (ডিআরএমসি) লাইন ফলোয়ার রোবটিক্স সেগমেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়। এর আগে গত বছর শাবির ইইই ফেস্টিভ্যালে অটোনোমাস রোবোটিক্স চ্যালেঞ্জ সেগমেন্টের এডভান্স লাইন ফলোয়ার ও মেজ সলভিংয়ে চ্যাম্পিয়ন, আইআইটিতে অনুষ্ঠিত ইসোন্যান্স ইভেন্টে রোবোমানিয়া সেগমেন্টের এডভান্স লাইন ফলোয়ারে চ্যাম্পিয়ন, কুয়েটে অনুষ্ঠিত ইগনিশন ইভেন্টে লাইন ফলোয়ার রোবটিক্সে ফার্স্ট রানার্স আপ হয়েছে।

 

 

পদার্থবিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ লাভ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের দুটি টিম পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ‘ইউনিভার্সিটি ফিজিক্স কম্পিটিশন’-এ অংশ নিয়ে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেছেন। পুরো বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় চার শতাধিক টিমকে পিছনে ফেলে তারা এই জয় ছিনিয়ে আনেন।  যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারোল কলেজের প্রফেসর কেলি এস ক্লিনের পরিচালনা এবং ইউনিভার্সিটি অব উইনিপেগ এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপকদের তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয় এই অনলাইনভিত্তিক ‘ইউনিভার্সিটি ফিজিক্স কম্পিটিশন’। এই প্রতিযোগিতায় রৌপ্য পদক পান পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দুই শিক্ষার্থী আবরার নাফি ও নওশের জাহান পারভেজ। নাফি ও পারভেজ এই প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বলেন, হালকা শীতের মৌসুমে প্রতিযোগিতাটি পদার্থপ্রেমিকদের একটু উষ্ণতা এনে দেয়। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। পদার্থবিজ্ঞানের নীতিগুলো ব্যবহার করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুটি বাস্তবভিত্তিক সমস্যার মাঝে একটি সমস্যার সমাধান করতে হয়। কম্পিটিশনের মজার বিষয় হলো কোনো ব্যক্তির সাহায্য ব্যতিরেকে যে কোনো ধরনের বই, গবেষণাপত্র ও ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

 

বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছেন শাবির দেশসেরা তিন প্রোগ্রামার

প্রোগ্রামিং বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাকর ইভেন্ট ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্টের (এসিএম আইসিপিসি) ঢাকা সাইটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন তরুণ প্রোগ্রামার। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তিন শিক্ষার্থী মওদুদ আহমেদ শাহরিয়ার, জুবায়ের আরাফ, অভিষেক পাল। তিনজনের স্বপ্ন একই। এ বছরের এপ্রিলে পর্তুগালে অনুষ্ঠিত হবে ‘এসিএম আইসিপিসি’র ওয়ার্ল্ড ফাইনালে এশিয়া রিজিওনে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এর আগে ওয়ার্ল্ড ফাইনালে শাবির শিক্ষার্থীরা ছয়বার গেলেও সর্বোচ্চ সাফল্য পায় ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫৬তম হওয়া। তবে এবার সবকিছুকে ছাপিয়ে সাউথ এশিয়ান অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরতে চান তিন প্রোগ্রামার।

সর্বশেষ খবর