শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

শিক্ষার ফেরিওয়ালা গাড়িচালক ফারুক শিক্ষা পদকে সম্মানিত

দিনাজপুর প্রতিনিধি

শিক্ষার ফেরিওয়ালা গাড়িচালক ফারুক শিক্ষা পদকে সম্মানিত
পেশায় ড্রাইভার। নিজ উপার্জনের ২৫ শতাংশ খরচ করেন শিক্ষাবঞ্চিত শিশু ও বয়স্কদের মাঝে। মহৎ এই সমাজ সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী কর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

 

পেশা কোনো বিষয় নয়, ইচ্ছা থাকলে কর্ম দিয়ে রাষ্ট্র জয় করা যায়। তারই জ্বলন্ত উদাহরণ গাড়িচালক ফারুক হোসেন। দিনাজপুরের গ্রামে গ্রামে ঘুরে কিংবা স্কুলে তিনি অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিতদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছেন।

প্রাথমিক শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে দিনাজপুরের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ অবদান রাখার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদকের জন্য মনোনীত করা হয় দিনাজপুর সদর উপজেলার কাশিমপুর (মালিপুকুর) গ্রামের এই তরুণকে। গত ১৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পেশায় ড্রাইভার ফারুক হোসেনকে শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী সমাজকর্মী হিসেবে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদ্বোধনকালে শিক্ষা পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিশু-বয়স্কদের হাতে বিনামূল্যে বই-খাতা-কলমসহ বিভিন্ন উপকরণ তুলে দিয়ে নীরবে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন ফারুক হোসেন। এক যুগেরও বেশি সময় থেকে পেশায় ড্রাইভার এই তরুণ নিজের উপার্জনের ২৫% টাকা অসহায় ও ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যয় করে আসছেন। অর্থাভাবে নিজের পড়ালেখার চাকা চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেছে তার, এরকম আর কারও যেন না হয়-এই প্রত্যয় নিয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে অন্ধকারের কালিমা দূর করে আলোকিত মানুষ গড়তে নীরব কারিগর হয়ে কাজ করছেন গাড়িচালক ফারুক। আর তাকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন তারই সহধর্মিণী ছাবেরা আক্তার। শুধু শিশু নয়, এলাকার শিক্ষাবঞ্চিত বয়স্কদের হাতেও ফেরিওয়ালার মতো বিনামূল্যে তুলে দেন শিক্ষা উপকরণ। সাইকেল কিংবা ভ্যান নিয়েও শিক্ষার্থীদের বই-খাতা-কলমসহ শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন। নিজের যা আছে তাই নিয়ে নিরক্ষর মানুষের মাঝে আলো ছড়াতে দরিদ্রদের নিয়ে কাজ করছে ফারুক দম্পতি। এটাই তার আত্মতৃপ্তি।

ফারুকের এ কাজ দেখে প্রথম প্রথম গ্রামের অনেকে পাগল ছাড়াও অনেকই টিটকারি করে বিভিন্ন কথা বললেও এ নিয়ে তার কোনো আক্ষেপ নেই। সে তার লক্ষ্যে অটুট। ড্রাইভার মো. ফারুক হোসেন জানান, বাড়ির আঙিনায় বসে বয়স্ক মহিলাদের শিক্ষাদান, বিনামূল্যে শিক্ষাদানের কাজটি করেন তার স্ত্রী ছাবেরা আক্তার। বিএডিসি রংপুর দফতরের চাকরিতে থাকার কারণে আমার স্ত্রী এ কাজটি করেন। তবে আমি প্রতি মাসে এখানে আসি। ১৯৯৭ সালে শিক্ষা উপকরণ দিয়ে অভাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করা শুরু করলেও ২০০৫ সালে গ্রামের সর্বত্র এটা ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, তার মতো দেশের যে যেখানে আছে এ ধরনের ঝরে পড়া শিশুসহ নিরক্ষরদের শিক্ষা কাজে এগিয়ে আসুক। উল্লেখ্য, নিজ পরিবারের অভাবের তাড়নায় শিক্ষাবঞ্চিত এই যুবক অষ্টম শ্রেণি পাসের পর আর পড়ালেখা করার সুযোগ পাননি। সংসারে সহায়তার জন্য তাই গাড়ি ড্রাইভার বাবা মাহবুব হোসেনের কর্মস্থল বিএডিসি বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণে ফারুক বস্তা টানার কাজ নেন। পরে সবার আন্তরিকতা ও গাড়ি চালনায় প্রশিক্ষণ ও দক্ষ হলে তিনি ড্রাইভারের কাজ নেন। ফারুক জানান, তার দুই ভাই এবং চার বোনের মধ্যে তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। এখন বোন, ভাই, মাসহ নিজ স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার।

সর্বশেষ খবর