শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

নওগাঁয় সবুজ জ্ঞানের ব্যতিক্রমী সুফলা

নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁয় সবুজ জ্ঞানের ব্যতিক্রমী সুফলা

কৃষি মানে কৃষক আর কৃষক মানে আমাদের সবুজ বাংলাদেশের চালক। এই চালিকা শক্তিকে আরও শক্তিশালী করতে যুক্ত হচ্ছে পরিবেশবান্ধব আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে ফসলের ফলন আর লাভবান হচ্ছে দেশের কৃষকরা। আর এসব পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তিগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করছে কৃষি অধিদফতরের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিসগুলো। এর পাশাপাশি কৃষক ও কৃষি সম্পর্কিত সমাজের সাধারণ মানুষদের নিয়ে ব্যতিক্রমী কাজ করে আসছে নওগাঁর রানীনগর উপজেলার কৃষিভিত্তিক একটি ব্যতিক্রমী সংগঠন ‘সুফলা নওগাঁ’। সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের অবসরপ্রাপ্ত চারকিজীবী, সমাজসেবক, সমাজ সংগঠক, কৃষি উদ্যোক্তা, কৃষি অনুরাগী ও কৃষকসহ নানা পেশার মানুষদের নিয়ে ‘সবুজ মননে সবুজ সৃজন’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গঠন করা হয়েছে ব্যতিক্রমী সংগঠন সুফলা নওগাঁ। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে রানীনগর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের সচেতন করার লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠক, কৃষক-কৃষাণীদের সমাবেশ, উচ্চমূল্যের ফলের বাগান সৃজন, জৈব সার উৎপাদন ও প্রয়োগ, বিনামূল্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানা কর্মকা- পরিচালনা করে আসছে। রানীনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সবুজ মনের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবীব রতন নিজ উদ্যোগে এ সংগঠনটি তৈরি করেছেন। আধুনিক কৃষি ও কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাতে সংগঠনটি বিভিন্ন সময়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষক ও সাধারণ মানুষদের নিয়ে সবুজ জ্ঞানে সজীব ভ্রমণ নামের এক কৃষি ভ্রমণের আয়োজন করে আসছে। সম্প্রতি সংগঠনটি তার কৃষি উদ্যোক্তা, কৃষি অনুরাগী ও সবুজ মনের কৃষকসহ ৩৮ জন সদস্য নিয়ে নওগাঁর মান্দার শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর ভ্রমণ করেছে। জাদুঘরের সভাকক্ষে আমাদের কৃষি ঐতিহ্য, খাদ্য পুষ্টি ভাবনা বিষয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা জাহাঙ্গীর আলম শাহের হাতে রানীনগর উপজেলায় মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ আঁচ ও মাকু তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সংগঠনের পক্ষ থেকে কৃষি জাদুঘর প্রাঙ্গণে একটি পারুল ও মাল্টা গাছের চারা রোপণ করা হয়।

সংগঠনের সদস্য কৃষি গবেষক মুরাদ আলী বলেন, আমাদের কৃষিতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির অনেক কিছুই যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের কৃষকরা এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে তেমন সচেতন নয়। আমরা এ সংগঠনের মাধ্যমে কৃষকদের ও সমাজের কৃষি অনুরাগী ব্যক্তিদের নিয়ে কৃষি সম্পর্কিত বিখ্যাত স্থানগুলো ভ্রমণ করে থাকি যাতে কৃষক ও কৃষি অনুরাগী মানুষরা বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আমি এ ব্যতিক্রমী সংগঠনের সদস্য হতে পেরে খুবই খুশি, কারণ এ সংগঠনের সঙ্গে থাকতে পেরে কৃষি সম্পর্কিত নতুন নতুন অনেক কিছুই জানতে ও শিখতে পারছি। যা আমার গবেষণা কাজে পাথেয় হিসেবে কাজ করছে।

সংগঠনের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কৃষি উদ্যোক্তা হারুনুর রশিদ বলেন, অনেক আগে থেকেই কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত। চাকরি শেষে আমার বাড়িতে কৃষি অফিসের ও সুফলা নওগাঁর উদ্যোগে স্থাপন করেছি অধিক মুনাফার মাল্টার বাগান। আমরা এ সংগঠনের মাধ্যমে কৃষক ও সাধারণ মানুষদের একঘেয়েমি ফসলের চাষ করা থেকে বিরত রাখার এবং অল্প খরচ ও পরিশ্রমে বেশি লাভজনক ফসলের চাষের দিকে আগ্রহী করার চেষ্টা করে আসছি। সুফলা নওগাঁর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আহসান হাবীব রতন বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়মনীতির মধ্য থেকে কৃষক ও সাধারণ মানুষদের তেমনভাবে কৃষি বিষয়ে সচেতন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তালিকাভুক্ত কৃষক ছাড়া সাধারণ কৃষকরা কৃষির প্রতি তেমন আগ্রহী হয় না। তাই সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে এ সংগঠনটি তৈরি করা হয়েছে। চাকরির পাশাপাশি সংগঠনে সময় দিয়ে আসছি।

সর্বশেষ খবর