শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

নোয়াখালীর রাজুব ভৌমিক নিউইয়র্ক পুলিশে হিরো

শনিবারের সকাল ডেস্ক

নোয়াখালীর রাজুব ভৌমিক নিউইয়র্ক  পুলিশে হিরো

রাজুব ভৌমিক। বাংলাদেশি আমেরিকান তিনি। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ-এনওয়াইপিডির কাউন্টার টেরর অফিসার। তার সাহসিকতায় প্রাণে বেঁচেছেন অনেকেই। আমেরিকান মিডিয়া তার প্রশংসায় বলেছে, সাহসী বীর, হিরো! বাড়ি বাংলাদেশের নোয়াখালীর কবিরহাট থানার শ্রীনদ্দি গ্রামে। পড়ুয়া, মেধাবী এই পুলিশ অফিসার কবি, লেখক হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন।

 

নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে (এনওয়াইপিডি)-এর অফিসার রাজুব ভৌমিক। তিনি বাংলাদেশি। নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) কাউন্টার টেরর অফিসার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন ড. রাজুব ভৌমিক রাজু। নোয়াখালীর এই তরুণকে নিয়ে এখন সরব আমেরিকার গণমাধ্যম। তার সাহসিকতায় রক্ষা পেয়েছে ড্রো টেন্ডলর জীবন। ম্যানহাটনের ১৪৫ স্ট্রিন ব্রিজ থেকে গত ১০ এপ্রিল স্থানীয় সময় ভোর ৪টায় টেন্ডল আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। নিজের জীবন বাজি রেখে রাজুব ভৌমিক ৩০ ফিট ওপরে উঠে তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে নিচে নামিয়ে আনেন। টেন্ডলের সঙ্গে রাজুব অন্তত ১০ মিনিট জোর-জবরদস্তি করে তাকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে দুজনেরই ৩ বার ব্রিজ থেকে হরলেম নদীতে পরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ড্রো টেন্ডলের মতো আরও অনেককেই বাঁচিয়েছেন এই বাংলাদেশি রাজুব।  রাজুব ভৌমিক ২০১২ সালে এনওয়াইপিডি-তে যোগ দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি এমন অনেক সাহসী কাজ করে আমেরিকান পত্রিকার খবরের পাতায় এবং টিভিতে এসেছেন। রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন এই আমেরিকায়। নিজের জীবন বাজি রেখে অন্যকে বাঁচানো রাজুবের কণ্ঠে বিনয়। তিনি বলেন, আমি যা করেছি এটা আমার দায়িত্ব। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের কাঁধে। রাজুব এখন কাউন্টার টেরর অফিসার

নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) কাউন্টার টেরর অফিসার হিসেবে প্রায় চার বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘নিউইয়র্ক সিটি হচ্ছে পৃথিবীর মোস্ট ডিজায়ারেবল টেররিস্ট অ্যাটাক স্পট। সব সময় এ সিটিতে টেররিস্ট থ্রেট থাকে। আমার প্রধান কাজ সম্ভাব্য সন্ত্রাসী আক্রমণ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী পুলিশি অ্যাকশন নেওয়া। উপরন্তু নিউইয়র্ক সিটিতে সব ধরনের নিউক্লিয়ার কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল এবং রেডিওলজিক্যাল আক্রমণেও রেসপন্স করতে হয়।’ রাজুব ভৌমিক আরও বলেন, ‘আমি মানুষের সেবা করতে পছন্দ করি। প্রায় সাত বছর ধরে এনওয়াইপিডিতে আছি। আশা করি ভবিষ্যতে আরও অনেক মানুষের সেবা করতে পারব।’ অধ্যাপনাও করেন এই সাহসী বাংলাদেশি। পুলিশে চাকরির ব্যস্ততা এর পাশাপাশি দুটি কলেজে অধ্যাপনাও করেন রাজুব ভৌমিক। সারারাত ডিউটি থাকে রাজুব ভৌমিকের। সকালে বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পরই সিটি ইউনিভার্সিটির জন জে কলেজ অব দ্য ক্রিমিনাল জাস্টিসে ক্লাস নিতে যান তিনি। সপ্তাহে তিন দিন এই দায়িত্ব পালন করে বাকি দুই দিন যান হসটজ কমিউনিটি কলেজ অব দ্য সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কে। সেখানে তিনি মনোবিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাস নেন। এত কঠোর পরিশ্রমী একজন মানুষ যে কারও জন্য নিঃসন্দেহে একজন অনুপ্রেরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার লেখা বই পড়ানো হয় জন জে-তে। এখন পর্যন্ত রাজুবের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা এগারো। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয় বরং ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা থেকেও বেরিয়েছে এই সব বই।

তিনি গল্প উপন্যাস লিখেন। এ ছাড়াও কয়েকশ সনেটও লিখেছেন। জন জে-তে রাজুর লেখা যে তিনটি বই পড়ানো হয় সেগুলো হলো ‘লিডিং থিওরিজ অব ডেলিনকুয়েন্ট বিহেভিয়ার অ্যান্ড ক্রিমিনোলজি’ (অস্টিন অ্যান্ড ম্যাকলি পাবলিশার্স), ‘অ্যাক্টিভ শ্যুটার : মোটিভ, মেথড, অ্যান্ড ম্যাডনেস (স্কলার্স প্রেস) এবং প্রিভেন্টিভ ডিপ্রেশন অ্যাট ওয়ার্কপ্লেস সাইকোলজিক্যাল ইন্টারভেনশন (স্কলার্স প্রেস)। রাজুব ভৌমিক নিজে অধ্যাপনার পাশাপাশি নিজেও এখনো পড়াশোনা করছেন। তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক থেকে ইনস্ট্রাকশন অ্যান্ড এডুকেশন বিষয়ে মাস্টার্স করছেন বর্তমানে। সাংবাদিকতায় মাস্টার্স করতে সম্প্রতি ভর্তি হয়েছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে। তিনি সাইকোলজি ইন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি ও ফরেনসিক সাইকোলজি বিষয়ে পিএইচডি করেছেন যথাক্রমে ক্যালিফোর্নিয়ার সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি এবং মিনেসোটার ওয়াল্ডেন ইউনিভার্সিটি থেকে। রাজুব ভৌমিক জন্মগ্রহণ করেন নোয়াখালীর কবিরহাটের শ্রীনদ্দী গ্রামে ১৯৮৮ সালে। তার বাবা মিসর ভৌমিক, মা পুতুল ভৌমিক। রাজুব ভৌমিক বিদেশের মাটিতে দেশের নাম উজ্জ্বল করছেন প্রতিনিয়ত।

সর্বশেষ খবর