শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

গ্রামে গ্রামে ছুটছে পল্লী অ্যাম্বুলেন্স

শনিবারের সকাল ডেস্ক

গ্রামে গ্রামে ছুটছে পল্লী অ্যাম্বুলেন্স

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গ্রামের রাস্তায় চোখে পড়ে কলাপাতা রঙের একটি গাড়ি। গাড়ির গায়ে লাল কালিতে লেখা আছে ‘পল্লী এ্যাম্বুলেন্স’। সদর উপজেলায় এ ধরনের পল্লী অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে ৭টি। গ্রামের অসুস্থ মানুষদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিংবা হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে এসব অ্যাম্বুলেন্স। ইতিমধ্যেই হাজারো মানুষ এর সেবা পেয়েছেন।

পল্লী অ্যাম্বুলেন্স স্থানীয়দের উপকারে আসছে। ৩ চাকার ব্যাটারিচালিত এ অ্যাম্বুলেন্স চালকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহে রাখেন গ্রামবাসী। প্রয়োজনের সময় এক ফোনকলেই বাড়িতে পৌঁছে যায় পল্লী অ্যাম্বুলেন্স। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা যে কোনো সময় পল্লী অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকে অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

যেভাবে শুরু :

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াশীমুল বারী পরিকল্পনা করেন পল্লী অ্যাম্বুলেন্সের। পরিকল্পনা অনুযায়ী সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ইজিবাইকের মতো ব্যাটারিচালিত সাতটি পল্লী অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করা হয়। প্রতিটি পল্লী অ্যাম্বুলেন্স তৈরিতে খরচ হয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা। অ্যাম্বুলেন্সগুলো ৭টি ইউনিয়নের  সাত চেয়ারম্যানের হাতে হস্তান্তর করা হয়।

অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া রোগী বহনের অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গ্রাম থেকে অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে আনা- নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগী ও স্বজনদের। হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে খবর দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। কম খরচে গ্রামের অসুস্থ রোগীদের হাসপাতাল কিংবা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। পল্লী অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের কিছু নীতিমালা আছে। ২৪ ঘণ্টা পল্লী অ্যাম্বুলেন্স রোগীর সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের গ্রামের কোনো মানুষ ফোন করলেই পল্লী অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যাবে রোগীর কাছে। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের মতো সাধারণ ভাড়া নিয়ে রোগীকে পৌঁছে দেওয়া হবে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা ক্লিনিকে। চালকের মোবাইল ফোনে কল করলেই পল্লী অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যাবে। চালকের নম্বর যদি না থাকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কাছেও ফোন করে পল্লী অ্যাম্বুলেন্সের সেবা নেওয়া যাবে। সম্প্রতি সদর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের গৃহবধূ সোনিয়া খাতুনের প্রসব বেদনা ওঠে। স্বামী দিনমজুর মহিনউদ্দিন ফোন করে পল্লী অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে আনেন। ওই অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি ক্লিনিকে। সেখানে কন্যা সন্তান প্রসব করেন সোনিয়া খাতুন। সোনিয়ার স্বামী মহিনউদ্দিন বলেন, চুয়াডাঙ্গা থেকে অ্যাম্বুলেন্স ডাকলে অনেক টাকা লাগত। পল্লী অ্যাম্বুলেন্স এসে সুবিধা হয়েছে অনেক। গ্রামের অসুস্থ রোগীরা সেবা পাচ্ছে।

শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের জালশুকা গ্রামের হারেজ আলী বলেন, হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। পল্লী অ্যাম্বুলেন্স আমাকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে গেল। আমি হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছি।

আলোকদিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের শাহাদত আলী বলেন, আমার মা নূরজাহান বেগমের বয়স ৬০ বছর। মা প্যারালাইসিস হয়ে পড়েন। পল্লী অ্যাম্বুলেন্স ডেকে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। অ্যাম্বুলেন্সের চালককে খুশি হয়ে ১০০ টাকা দিয়েছিলাম। পল্লী অ্যাম্বুলেন্স মানুষের উপকারে আসছে।

 

আলোকদিয়া ইউনিয়নের পল্লী অ্যাম্বুলেন্সের চালক রাজাপুর গ্রামের মো. নয়ন আলী বলেন, আগে আমি মাঠে কাজ করতাম। পল্লী অ্যাম্বুলেন্স চালানো শুরু করে মনে হলো মানুষের সেবা করতে পারছি। কত অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিয়েছি বলে শেষ করা যাবে না।

নয়ন জানান, পল্লী অ্যাম্বুলেন্সে করে অসুস্থ মানুষদের নিয়ে যাই। যে যা দেন তাই নিই। এমনও হয়েছে, খুব গরিব মানুষ টাকা দিতে পারেনি। কেউ কেউ খুশি হয়ে দুই-তিনশ টাকাও দেন।

শহর থেকে দূরে গ্রামের পথে চলছে পল্লী অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতালে পৌঁছার জন্য গ্রামের মানুষরা হাতের কাছে পাচ্ছে পল্লী অ্যাম্বুলেন্সের সেবা। এতে খুশি গ্রামবাসী। আগে ভ্যানে শুয়ে গ্রাম থেকে রোগী শহরে নিতে দেখেছি। মহিলা রোগী হলে তাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতো। পল্লী অ্যাম্বুলেন্স চারদিকে ঘেরা। রোগীদের নির্বিঘেœ নিয়ে যাওয়া যায়।

পল্লী অ্যাম্বুলেন্স ব্যাটারিতে চলে। রাস্তা ভালো হলে দ্রুত যেতে পারে। বেশিরভাগ রাস্তা এখন ভালো। পল্লী অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে। এই সেবা গ্রহণ করছে মানুষ। তারা প্রশংসা করেছে। অনেকে উপকৃত হচ্ছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসুস্থ মানুষের কথা ভেবে পল্লী অ্যাম্বুলেন্সের পরিকল্পনা করা হয়। এখন দেখা যাচ্ছে বেশ সাড়া মিলেছে। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য আগে ভালো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। যানবাহনের কারণে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হতো। এতে জীবনের ঝুঁকি দেখা দেয়। সেই অসুবিধা দূর করার জন্যই পল্লী অ্যাম্বুলেন্সের পরিকল্পনা করা হয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পল্লী অ্যাম্বুলেন্স চলছে। চালু হওয়ার পর থেকে পল্লী অ্যাম্বুলেন্সের বেশ সাড়া মিলেছে।

সর্বশেষ খবর