শিরোনাম
শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঝিনাইদহে ৩০০ বছরের বুড়ো বটগাছ

আবু আফজাল সালেহ

ঝিনাইদহে ৩০০ বছরের  বুড়ো বটগাছ

এশিয়ার অন্যতম বড় ও প্রাচীন বটবৃক্ষের অবস্থান বাংলাদেশে। ঝিনাইদহ উপজেলার কালীগঞ্জ উপজেলার সুইতলা-মল্লিকপুরে ছায়াঘেরা আর পাখিডাকা এ স্থান যে কাউকে মুগ্ধ করবেই। ৮ নম্বর মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী মৌজায় বর্তমানে ১১ একর জমিজুড়ে রয়েছে এর বিস্তার। বর্তমানে পুরোটাই সরকারের খাস জমির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট উচ্চতার বটগাছটি খন্ড খন্ড হয়ে ৫২টি বট গাছে রূপ নিয়েছে।  প্রতিদিনই প্রচুর দর্শনার্থী আসে এখানে। বটগাছটি ঘিরেই ছোট্ট একটি বাজার গড়ে উঠেছে। খাওয়া-দাওয়ার মোটামুটি ভালো ব্যবস্থা আছে। সীমিত আকারে থাকার ব্যবস্থাও আছে।

ঝিনাদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে চিকন পিচের রাস্তা ধরে প্রায় ১০ কিলোমিটার এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে একটি মোড়। একটা রাস্তা যশোরের খাজুরার দিকে আর অন্যটি মাগুরার আড়পাড়ার দিকে। এ মিলনস্থলেই সবুজের পাহাড়। যেন সবুজের শেষ নেই। সবুজ পাতার আড়ালে উঁকি দেয় শালিক। নানান পাখির কলতানে আর ছায়ানিবিড় এ স্থান দেখে যে কেউ থমকে দাঁড়িয়ে বলবে, হে পথিক! থমকে দাঁড়াও!

হ্যাঁ, এটিই এশিয়ার বড় বটগাছ। সুইতলা-মল্লিকপুরের বটগাছ। এ গাছটি প্রায় শতবর্ষের পুরনো। পুরনো আদি গুঁড়িটি এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বটগাছটির যেসব ঝুরি নেমেছিল সেগুলোই এখন আলাদা আলাদা গাছ হয়ে আছে। বটগাছের মাঝে মাঝে এখন অন্য গাছও হয়ে গেছে। বিস্তৃত বটগাছটির দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাখির কলরব, ছায়াঘেরা শীতল পরিবেশ মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। তবে ডালপালা কেটে ফেলে স্থানীয় লোকজন। ১৯৮৪ সালে বিবিসির জরিপে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছের মর্যাদা লাভ করে এটি। এর অবস্থান ও নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা। কারও কাছে সুইতলার বটগাছ, কারও কাছে সুইতলা-মল্লিকপুরের বটগাছ আবার কারও কাছে বেথুলীর বটগাছ বলে এটি পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে এর অবস্থান বেথুলী মৌজায় বলে জানান স্থানীয়রা। মল্লিকপুরের মৃত জহর আলীর স্ত্রী মোছা. কুন্টি বিবি ৩২ শতক জমি জেলা পরিষদের নামে দানপত্র লিখে দেন। পৃথিবীর অন্যতম বড় বটগাছটিকে ঘিরে গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্র।

বৃহৎ এ বটবৃক্ষকে রক্ষণাবেক্ষণ ও স্থানটিকে আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা করার লক্ষে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ। অনেক আগে এটি জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন বিভাগের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়। ২০০৯ সালে গাছটির আয়তন বৃদ্ধির জন্য নতুন করে দুই একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ১২ মে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান

ডব্লিউ মজিনা এশিয়ার এ বৃহত্তম গাছটি পরিদর্শন করেন।

নলডাঙ্গা মন্দির কমপ্লেক্স : বটতলা বা কালীগঞ্জের কয়েক কিলো দূরেই  নলডাঙ্গার ঐতিহাসিক মন্দির। পুরাকীর্তির এ স্পট ইতিহাস অনুসন্ধান করতে সহায়তা করবে। কালীগঞ্জ উপজেলায় নলডাঙ্গা মন্দির কমপ্লেক্স অবস্থিত। ১৬৫৬ সালে মহারাজ ইন্দ্রানারায়ণ দেব রায় এই মন্দির কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করেন। এই কমপ্লেক্সে মোট মন্দিরের সংখ্যা ছয়টি। সরকার এখানকার মন্দিরগুলো পুনঃনির্মাণ করলেও সেগুলো দাঙ্গার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে এই কমপ্লেক্সে পুনঃনির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এখানে অবস্থিত দেবতা কালীর মূর্তিটি ভারতের বেনারস থেকে আনা হয়েছে। বর্গাকারে নির্মিত এ মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য বাইরের দিকে ছিল ৩৯ ফুট ৩ ইঞ্চি মাপের। গর্ভ-মন্দিরের উপরে ১টি এবং চারকোণে ৪টি চূড়া ছিল। প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহের নামকরণ করা হয়েছিল ‘ইন্দ্রেশ্বরী’। পরে এর নাম রাখা হয়-‘সিদ্ধেশ্বরী’। নয়ানাভিরাম এ স্থাপত্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে। পাশের ‘বেগবতী’ নদীর নিচ দিয়ে নলডাঙ্গা রাজবাড়ির (এখন নেই) সুড়ঙ্গপথ ছিল। এ নদীও দেখতে পাবেন। স্রোত কমে গেছে। বেগবতী এখন গতি হারিয়ে ফেলেছে।.

সর্বশেষ খবর