শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

অগ্নিনির্বাপণে স্বপ্ন দেখাচ্ছে রোবট বিআরএফ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

অগ্নিনির্বাপণে স্বপ্ন দেখাচ্ছে রোবট বিআরএফ

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর। ঘটনাস্থল আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশন ফ্যাক্টরি।  পোশাক কারখানার ইতিহাসের ভয়াবহ এক অগ্নিকান্ডে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয় কমপক্ষে ১১২ পোশাক শ্রমিক। আহত হন অসংখ্য। তৎকালীন সময়ে ওই ঘটনা টেলিভিশনে দেখে দাগকাটে কিশোর জাহেদ হোসেন নোবেলের। তখনই পণ করেন অগ্নিনির্বাপণে আগুনি প্রযুক্তি আবিষ্কার করার। আগুন নির্বাপণে কিছু করার স্বপ্ন বুনতে থাকেন তখন থেকে। অবশেষে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয় চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অষ্টম পর্বের ছাত্র জাহেদ হোসেন নোবেলের। সঙ্গে সারথী হিসেবে নেন একই বিভাগের ছাত্র ফাহিম জাওয়াদ ও ইমতিয়াজ বিন আহমেদকে। প্রায় এক বছর  অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরি করেন ফায়ারম্যান রোবট। তারা এ রোবটের নাম দিয়েছেন ‘বাংলাদেশ  রোবট ফোর্স’ (বিআরএফ)। যেটি ফায়ারম্যানের পরিবর্তে আগুন নির্বাপণের কাজ করবে। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান স্বপন কুমার নাথ বলেন, ‘অগ্নিনির্বাপণে বিআরএফ যুগান্তকারী আবিষ্কার। এ রোবটটি অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহার করা গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমে আসবে। এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভাব হবে।’

বিআরএফ আবিষ্কারে নেতৃত্ব দেওয়া জাহেদ হোসেন নোবেল বলেন, ‘এ রোবটটি অগ্নিনির্বাপণের পাশাপাশি আক্রান্ত স্থানে খাবার, মেডিসিনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবারহ করবে। এতে করে অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমে আসবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ রোবট বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ছাত্রদের উদ্ভাবিত রোবট বাংলাদেশ রোবট ফোর্স (বিআরএফ) মূলত ফায়ারম্যানের পরিবর্তে আগুন নির্বাপণের কাজ করবে। যা রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হবে। এ  রোবটে রয়েছে আগুন নির্বাপণে ফায়ার এক্সিটিংগুইশার, কালো ধোঁয়া টেনে নিতে কুলিং ফ্যান, অন্ধকারে আলোর সুবিধার্থে দুটি হেডলাইট, মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে লাইভ ক্যামেরা ও জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম। আর পানি ছিটানোর জন্য লাগানো আছে নল। ফায়ার সার্ভিসের পানির ট্যাংকের পাইপটি এ নলে যুক্ত করে দিলেই পানি ছিটানোর কাজ করবে। সর্বোচ্চ ৮০০ মিটার নিরাপদ দূরত্বে থেকে যে কেউ রিমোটের মাধ্যমে এ রোবট পরিচালনা করতে পারবে। অগ্নিনির্বাপণের পাশাপাশি অগ্নিকান্ডের স্থানে খাবার, মেডিসিন, মাস্ক ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও নিয়ে যাবে এ রোবটটি। এটির বহন ক্ষমতা ১৮ কেজি। রোবট ফোর্সটি উদ্ভাবন করে দেশসেরা খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে পুরস্কৃত হন জাহেদ হোসেন নোবেল ও তার দল। গত ২৭ জুন ঢাকার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে অনুষ্ঠিত ৪০তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা-২০১৯ এর সমাপনী দিনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে দেশসেরা খুদে বিজ্ঞানীর চ্যাম্পিয়নশিপ সম্মাননা তুলে দেন। ইতিপূর্বে উদ্ভাবিত রোবট  ফোর্স প্রজেক্টটি স্কিল কম্পিটিশন-২০১৮ এ ইনস্টিটিউট পর্যায়ে প্রথম, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রথম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম, জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় এবং সর্বশেষ গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  মেলা-২০১৯ এ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশসেরা খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে পুরস্কৃত হন।

জাহেদ হোসেন নোবেল বলেন, অগ্নিকা- থেকে মানুষকে বাঁচাতে বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিসের জন্য এটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের বাজারে আনতে মাত্র ১০ লাখ টাকা খরচ পড়বে। এটি সম্পূর্ণ  দেশীয় প্রকৌশলী দ্বারা দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা সম্ভব। 

নোবেল আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু উদ্ভাবন করে দেশের জন্য কিছু করার প্রবল ইচ্ছা আমার। আর সে লক্ষ্যে নিজেকে কারিগরি শিক্ষায় মনোনিবেশ করি।

তাই ২০১৫ সালে ইলেকট্রনিক্স বিভাগে ভর্তি হই । তৃতীয় সেমিস্টার থেকেই রিসার্চ শুরু করি স্বপ্নের ড্রোন নিয়ে। অবশেষে আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষক, সহকর্মী ও পরিবারের সবার সহযোগিতায় ইনশাআল্লাহ্ আমি সফল হয়েছি।

 

 

সর্বশেষ খবর