শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

তাশি লাপচা পাস পেরোনো প্রথম বাংলাদেশি নারী শায়লা

রফিকুল ইসলাম রনি

তাশি লাপচা পাস পেরোনো প্রথম বাংলাদেশি নারী শায়লা

হিমালয়ের অত্যন্ত দুর্গম তাশি লাপচা পাস পেরোনোর কৃতিত্ব অর্জন করেছেন পর্বতারোহী শায়লা পারভীন বীথি। তিনি প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে এ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। গত ২ জুন বাংলা মাউন্টিনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের ৪ সদস্যের একটি দলসহ তিনি এ পাস অতিক্রম করেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছেন ৫৭৫০ মিটার উঁচু দুর্গম তাশি লাপচা পাস অতিক্রমের নানা রোমাঞ্চকর ঘটনা।

বাংলা মাউন্টিনিয়ারিং ক্লাবের (বিএমটিসি)সদস্যরা বিগত ১৫ বছরে হিমালয়ের দুর্গম পর্বতগুলোতে বহু অভিযান চালিয়েছেন। এবার ক্লাবটির লক্ষ্য ছিল হিমালয়ের ফার্চামো পর্বত শিখর জয় ও তাশি লাপচা পাস অতিক্রম করা। খুবই প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফার্চামো শিখরের খুব কাছাকাছি গিয়ে ফিরে আসতে হলেও তাশি লাপচা পাস ঠিকই অতিক্রম করতে সক্ষম হন বিএমটিসির চার অভিযাত্রী।

১৪ দিনের রোমাঞ্চকর সেই অভিযানের কথা জানিয়ে শায়লা পারভীন বীথি জানান, গত ১৭ মে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি কনফারেন্স কক্ষে এক অনুষ্ঠানে ফার্চামো শিখর অভিযানে যাওয়া পর্বতারোহীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। দলটি ২১ মে নেপালের কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে। তারা ৩ দিন কাঠমান্ডুতে অবস্থান করে অভিযানের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। এরপর ২৪ মে ফার্চামো পর্বতের উদ্দেশে রওনা হন। শায়লা বলেন, এবারের অভিযানে মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল প্রতিকূল আবহাওয়া। এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে গিয়ে এবার বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। আমাদের অভিযানেও হোয়াইট আউট, তুষারপাতের সঙ্গে লড়তে হয়েছে ভীষণ রকম। হোয়াইট আউটের কারণে আমরা পথ হারিয়েছি একাধিকবার। চুগিমা নামক জায়গা থেকে লোয়ার জেবুক যেতে ট্রাকার্ডিং গ্লেসিয়ার (বরফ জমা নদী) পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু এবার জায়গায় জায়গায় এই গ্লেসিয়ারের ভাঙনের ফলে আমরা মাঝে মধ্যেই পথ হারিয়ে ফেলছিলাম। এই পথটুকু পাড়ি দিতে আমাদের যথেষ্ঠ ভুগতে হয়েছে। এরপর আমাদের লক্ষ্য ছিল- লোয়ার জেবুক থেকে তাশি লাপচা পাস পাড়ি দিয়ে মাউন্ট ফার্চামো বেস ক্যাম্পে পৌঁছানো। এই পথটুকু ছিল খুবই কঠিন। বড় আকারের পাথরের (বোল্ডার) ওপর দিয়ে যেতে হয়েছে। কিছু জায়গায় পথ এতটাই দুর্গম ছিল যে, সেখানে রোপ ফিক্সড করা ছিল। আমাদের যেদিন বেস ক্যাম্পে পৌঁছানোর কথা ছিল সেদিন বেলা এগারোটার দিক থেকে ব্যাপক তুষারপাত শুরু হয়। বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও যখন ভারী তুষারপাত বন্ধ হলো না তখন আমরা মাঝপথেই ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নিই। এরপর পরের দিন বেস ক্যাম্প অভিমুখে যাত্রা শুরু করি।

শায়লা বলেন, বেস ক্যাম্পের পথে প্রায় একশ মিটার খাড়া বরফের দেয়াল রশির সাহায্যে বেয়ে উঠতে হয়। এখান থেকে কিছুটা সামনে এগোনোর পর আবারও রোপ ফিক্সড করতে হয়। এরই মধ্যে হোয়াইট আউট হয়ে যায়। যার ফলে আমাদের শেরপারা আর পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন প্রায় এক ঘণ্টার মতো একটা জায়গায় থেমে থাকি। পরে শেরপারা পথ খুঁজে পায়।

তখন আমরা ঘণ্টাখানেক পথ চলার পর তাশি লাপচা পাসে পৌঁছাই। প্রথম বাংলাদেশি দল হিসেবে আমরা এই পাস অতিক্রম করি। আমার আগে কোনো বাংলাদেশি নারী এই পাস অতিক্রম করেনি। এই পাসটি হিমালয়ের রোলওয়ালিং এবং সলোখুম্বু অঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে। উচ্চতা, পৌঁছানোর দুর্গম পথ বিবেচনায় মাকালু বরুন অঞ্চলের শেরপেনি কোলকে সবচেয়ে কঠিন পাস বিবেচনা করা হয়। এরপরই বিবেচনা করা হয় তাশি লাপচাকে।

 

সর্বশেষ খবর