শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

আকাশে উড়বে বিশ্বের প্রথম ৫ সিটের ট্যাক্সি

শনিবারের সকাল ডেস্ক

আকাশে উড়বে বিশ্বের প্রথম ৫ সিটের ট্যাক্সি

উড়ন্ত ট্যাক্সিতে করে চলাচল করবে সাধারণ মানুষ খুব শিগগিরই। ধরুন সকালে স্কুল বা অফিসে যাওয়ার জন্য বাইরে বের হলেন। স্মার্টফোনের ইশারায় একটি ড্রোন উড়তে উড়তে চলে এল আপনার সামনে। তাতে উঠে উড়তে উড়তে আপনি পৌঁছে  গেলেন গন্তব্যস্থলে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় মানুষ আজ অনেক উন্নত। তাই তো এখন মানুষ ছাড়াই বিমান  থেকে শুরু করে টেক্সিক্যাব পর্যন্ত সার্ভিস দিচ্ছে ড্রোন। সম্পূর্ণ কম্পিউট করা এ যন্ত্রটি দিয়ে গবেষণাও এগিয়ে যাচ্ছে অনেক দূর। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো,  ড্রোন কোনো বিজ্ঞানসম্মত নাম নয়। এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। তার মধ্যে ‘মনুষ্যবিহীন উড়ন্ত যান’ অন্যতম। এর জন্মই মূলত সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য। আইডিয়া আসে ক্ষেপণাস্ত্র থেকে। ১৮৫০ সালে অস্ট্রিয়ানরা যুদ্ধের সময় অনেকগুলো বেলুনে বিস্ফোরক দ্রব্য বোঝাই করে সেটাকে উড়িয়ে ভেনিসে ফেলার চেষ্টা করেছিল। কয়েকটা ঠিকমতো কাজও করেছিল বটে, তবে কিছু বেলুন আবার বাতাসে ঘুরে গিয়ে অস্ট্রিয়ানদের ওপরেই পড়েছিল। সেই থেকে ভাবনা। নিকোলা টেসলা সর্বপ্রথম ১৯১৫ সালে মনুষ্যবিহীন সামরিক বিমানের ধারণা দিয়েছিলেন। ১৯৩৫ সালে প্রথম রিমোট কন্ট্রোল উড়ন্ত যান নির্মাণে সফল হন হলিউড তারকা এবং শৌখিন নির্মাতা রেজিন্যান্ড ড্যানি। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১২ সালে একটি আইন অনুমোদন করেন। আইনে ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে (এফএএ) নির্দেশ দেওয়া হয় যেন ২০১৫ সালের মধ্যে আমেরিকার আকাশ ড্রোন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। আর এবার এমন ট্যাক্সি আসছে যা উড়তে সক্ষম। জার্মানির একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান এমন ট্যাক্সি প্রস্তুত করছে। এ ট্যাক্সিতে আসন সংখ্যা ৫টি। এ ধরনের ট্যাক্সি এটাই বিশ্বে প্রথম। জার্মান এ প্রতিষ্ঠানটির নাম লিলিয়াম এবং এ কোম্পানি মূলত এয়ার ট্যাক্সি নিয়ে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গত মে মাসের প্রথম দিক থেকে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়তে পারবে এমন ট্যাক্সি নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছে। পরীক্ষা চলাকালীন এটি সফলভাবে উড়তে সক্ষম হয় এবং কিছুক্ষণ আকাশে ভেসে থাকার পর নিরাপদে অবতরণ করে। লিলিয়াম জানায়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়তে সক্ষম এ ট্যাক্সি। এতে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যতিক্রমী এ ট্যাক্সিতে পাঁচটি আসন থাকবে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ পাঁচজন এতে যাত্রী হিসেবে উঠতে পারবেন। এটা ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সক্ষম। নিজেদের এ উদ্ভাবন সম্পর্কে লিলিয়ামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ড্যানিয়েল উগেন্ড বলেন, এ এয়ার ট্যাক্সিটিতে ৩৬টি ইলেকট্রিক মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত এগুলোর সাহায্যেই এটি উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। একবার চার্জে ট্যাক্সিটি ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সক্ষম। বড় পরিসরে এ ট্যাক্সি উৎপাদনের কাজ তারা ২০২০ সালের মধ্যেই শুরু করবে। একটা সময় ছিল যখন ড্রোন বিষয়টা মানুষের কাছে অতটা পরিচিত ছিল না। তখন দুই ধরনের মানুষ ড্রোন নিয়ে কাজ করত। প্রথম দলটি হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এরা মজা করে রেডিও-নিয়ন্ত্রিত বিমান ও হেলিকপ্টার ওড়াত। অপর দলটি হলো  সেনাবাহিনী। এরা জেনারেল অ্যাটমিকস প্রিডেটরের মতো মানুষবিহীন বিমানের সাহায্যে নজরদারির কাজ চালাত।

এরপর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেখা যায় মার্কিন বিমান বাহিনীর কাছে ড্রোন একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হয়। প্রিডেটর এবং তার চেয়েও বড় একটি মানুষবিহীন পাহারাদার বিমানকে অস্ত্র সজ্জিত করল পেন্টাগন। তাতে বসানো হয় ক্ষেপণাস্ত্র। এর উদ্দেশ্য, নিজের জায়গায় বসেই এসব বিমানের পরিচালক হাজার মাইল দূরের কোনো লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে কিংবা কোনো কিছুর ওপর নজরদারি করতে পারা যায়। তারপরই বিভিন্ন বিমান কোম্পানিগুলোতে ড্রোন বানানোর হিড়িক পড়ে যায়। এক সময় ড্রোনের আকার ছোট হতে থাকে। তাতে যোগ হতে থাকে ন্যানো  প্রসেসর, আরও স্পর্শকাতর সেন্সর, হাই রেজু্যুলেশনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার এলো প্যাসেঞ্জার ড্রোন। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট এনগেজেটের খবরে প্রকাশ করা হয়। গত তিন বছর ধরে যাত্রীবাহী ড্রোনের নকশা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে ইহ্যাং, এয়ারবাস, উবারের মতো নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদেরই প্রচেষ্টায় গত আগস্ট মাসে দুবাইতে পরীক্ষামূলক উড্ডয়নে বেশ কৃতিত্বের সঙ্গেই সফল হয়েছে যাত্রীবাহী ড্রোন বা প্যাসেঞ্জার ড্রোন। অনেকেই এ যাত্রীবাহী ড্রোন প্রযুক্তিকে বলছে উড়ন্ত ট্যাক্সি।

সর্বশেষ খবর