শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

হাত পাখার গ্রাম

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

হাত পাখার গ্রাম

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভালাইন গ্রাম। এ গ্রামটি এখন পাখা গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এ গ্রামের তিন শতাধিক দরিদ্র পরিবারের হাতপাখা তৈরি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছেন তারা। তালপাতা দিয়ে তৈরি এ হাতপাখার চাহিদা বেশি থাকায় এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে স্বল্প সুদে ঋণ এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে আরও এগিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন এসব কারিগররা।

মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে উত্তরগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত এ গ্রামটি ভালাইন। এ গ্রামে প্রায় ৬৫টি পরিবারের বসবাস। তিন শতাধিক নারী-পুরুষ হাতপাখা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দরিদ্র এসব পরিবার হাতপাখা তৈরিকেই এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। প্রায় ২৫ বছর থেকে এ গ্রামে তালপাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরি হয়ে আসছে। সময়ের পরিক্রমায় এ গ্রামটি এখন পাখা গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গ্রীষ্মকালীন বিশেষ করে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও চৈত্রসহ কয়েকটি মাসে প্রচ- তাপদাহ থাকে। ফলে এ সময় ভ্যাপসা গরম থাকে। এই সময় তালপাতা দিয়ে তৈরি হাতপাখার চাহিদা বেড়ে যায়। প্রতি বছর এ গ্রাম থেকে ঢাকা, সৈয়দপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড়, ফরিদপুর, দিনাজপুরসহ কয়েকটি জেলায় প্রায় পাঁচ লাখ পাখা সরবরাহ করা হয়ে থাকে। পাখা তৈরির উপকরণ তালপাতা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ এবং বিক্রির কাজ মূলত পুরুষরাই করে থাকে। পাতা রোদে শুকিয়ে পানিতে ভেজানোর পর পরিষ্কার করে পাখার রূপ দেওয়া হয়। এরপর রং মিশ্রিত বাঁশের কাঠি, সুই ও সুতা দিয়ে পাখা বাঁধার কাজটা করেন গৃহবধূরা। সংসারের কাজের পাশাপাশি তৈরি করা হয় এ তালপাখা। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পাখা তৈরি করে বাবা-মাকে সহযোগিতা করে থাকে। তবে পাখা তৈরিতে যে পরিশ্রম ও খরচ সে তুলনায় দাম পান না কারিগররা। বিভিন্ন এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে কাজ করতে হয় কারিগরদের। তবে স্বল্প পরিশ্রমে টাকা বিনিয়োগ করে বেশি লাভে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

গৃহবধূ আনজুয়ারা বেগম বলেন, ২৫ বছর আগে বিয়ে হওয়ার পর ভালাইন গ্রামে আসেন। এরপর দরিদ্র স্বামী মুক্তার হোসেনের কাছে এ পাখা তৈরির কাজ শেখেন। সেই থেকে এ পাখা তৈরি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। পাখা তৈরি করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই সন্তানকে পড়াশোনার খরচ বহন করছেন। এ পাখা তৈরি করেই সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। গৃহবধূ ফাহিমা, খোরশেদা, কোহিনূরসহ কয়েকজন বলেন, পুরুষরা শুধু তালপাতা নিয়ে এসে শুকানোর পর পরিষ্কার করে দেন।  এরপর আমরা সাংসারিক কাজের পাশাপাশি পাখাকে সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করি।  প্রতিদিন আমরা               ৫০-১০০টা পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর