শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

কেক বানিয়ে বাংলাদেশি কন্যার বাজিমাত

নাহিদুর রহমান হিমেল

কেক বানিয়ে বাংলাদেশি কন্যার বাজিমাত

মায়ের কাছ থেকে শখের বশেই কেক বানানো শুরু করেন তাসনুতা আলম। কিন্তু এই শখই যে তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দেবে তা কখনো ভাবেননি তিনি। কেক বানিয়ে খুব অল্প সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন এই বাংলাদেশি কন্যা। এ পর্যন্ত ৩০টির মতো বিভিন্ন দেশের কেক কলাবোরেশনে অংশ নিয়েছেন। কেকের মাঝে নানা কারুকাজ ফুটিয়ে তুলে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলেছেন তিনি। এরপর একে একে জিতেছেন, তিনটি স্বর্ণ, দুটি রৌপ্য ও চারটি ব্রোঞ্জ পদক। শুরুটা করেছিলেন ২০১৭ সালে। ওই বছর কেক ইন্টারন্যাশনাল বার্মিংহাম প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পদক জিতে নেন তিনি। এর পরের বছর ২০১৮ সালে একই প্রতিযোগিতায় আরও দুটি ব্রোঞ্জ পদক জয়লাভ করেন। এ বছর কেক ইন্টারন্যাশনাল লন্ডন প্রতিযোগিতায় তৃতীয়বারের মতো অংশগ্রহণ করে ৪ ক্যাটাগরিতে একাধারে ২টি স্বর্ণ, ২টি রৌপ্য এবং একটি ব্রোঞ্জ অর্জন করেন। সবশেষে গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত ব্রিটিশ সুগারক্রাফ্ট কেক এক্সপোতে অংশ নিয়ে কাপকেকের ক্যাটাগরিতে শতভাগ নম্বর পেয়ে আরও একটি স্বর্ণপদক অর্জন করেন। এই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আশা প্রতিযোগীরা মোট ২১টি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে প্রায় ২৫ জন বিচারকের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে এই স্বর্ণপদক অর্জন করেন তিনি। ব্রিটিশ সুগার ক্রাফট গিল্ড নামক প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট পেট স্মিথের কাছ থেকে এই পদকটি গ্রহণ করেন।

তাসনুতা জানান, যুক্তরাজ্যে কেক বানানোর ইতিহাস বহু বছরের। ফলে বেশিরভাগ নাম করা কোম্পানিগুলোর অবস্থান ওখানে। এর মধ্যে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। যখনই কোনো সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, তারা অন্তত ৬ মাস আগে থেকেই এর প্রচারণা চালায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কেক বেক এবং কেক ডেকোরেশনের ওপর বহু ছোট ছোট প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এসব জায়গায় অভিজ্ঞদের সাথে কাজ করতে পেরে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন বলে মনে করেন তিনি। তাসনুতা বলেন, কেক বানাতে পছন্দ করি ছোটবেলা থেকেই। আম্মুর (কাওসার আলম) পাশে দাঁড়িয়ে কেক বানানো দেখা এবং তাকে ছোটখাটো সহযোগিতা করার মাধ্যমে কেক বানানো শুরু। এরপর প্রথম কেক বানাই প্রিয়জনকে খুশি করার জন্য। তিনি বলেন, কেকের এত দোকান, অথচ তখন কেন আমার নিজের তৈরি করা একটা কেক বানাতে ইচ্ছা হলো তা জানি না। সেই প্রথমবার যে সফলতা আর আনন্দ আমি পেয়েছি যার কারণে আজ আমার এতদূর পথচলা। কেক নিয়ে কোনো পড়াশোনা ছিল না। একান্ত ইচ্ছা-একাগ্রতায় তিনি এখন কেক মাস্টার। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসচি সম্পন্ন করে অ্যাকাউন্টিং এ সিটি কলেজ থেকে গ্র্যাজুুয়েশন শেষ করেন তাসনুতা। এরপর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। চলে যান লন্ডনে স্বামীর কাছে। সেখানে কাজ করার পাশাপাশি পেরোল ম্যানেজমেন্ট এর উপর প্রফেশনাল লেভেল ৩ ডিপ্লোমা শেষ করেন এবং এসিসিএ পাট-২ শেষ করেন। বর্তমানে রবার্ট গর্ডন ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছেন। তিনি বলেন, ঢাকাতেই বড় হয়েছি। ছবি আঁকা পছন্দ করতাম, স্বপ্ন ছিল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হব। কেকের জগতে আশা পুরোটাই আমার ভাগ্য। কেক বানালেই মুখরোচক হতো এবং ডিজাইনও ভালোই করতে পারতাম। তিনি আরও বলেন, কেক বানানো অথবা এটাকে প্রধান পেশা হিসেবে সামনে এগোনোটা ছিল আমার চিন্তার বাইরে। এক বন্ধুর উৎসাহে ২০১৩ সালে খুলে ফেললাম আমার বিসনেস পেজ Cake Topperz। তখনও আমি ভাবিনি সামনে আর কি অপেক্ষা করছে, তারপর ২০১৪ সালে আবেরডিনে স্থানীয় এক কেক কম্পেটিশনে আমার এক বন্ধু আমাকে জোর করে নিয়ে গেল। সেখানেও পেয়ে গেলাম বেস্ট অপিয়ারেন্স এবং বেস্ট টস্টের ভিত্তিতে প্রথম পুরস্কার। আলহামদুলিল্লাহ আবেরডিন খুব ছোট সিটি হওয়ায় আমার কেকের সুনাম খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। এরপর আমি বিগত ৩ বছরে অর্জন করেছি কেক ইন্টারন্যাশনালে দুটি স্বর্ণ, দুটি রৌপ্য, চারটি ব্রোঞ্জ এবং ব্রিটিশ সুগার খ্র্যাফট থেকে ১টি স্বর্ণ উইথ বেস্ট ইন ক্লাস। এছাড়া আমি এখন ব্রিটিশ কোয়ালিফাইড ইন্সট্রাক্টর উইথ মাস্টার্স অফ কেক ডেকোরেটিং।

বাংলাদেশকে নিয়ে ভবিষৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তাসনুতা আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে একটি কেক আর্ট কলাবোরেশন করছি ইন্টারন্যাশনালি, যার নাম ম্যাগনিফিসেন্ট বাংলাদেশ (Magnificent Bangladesh)। খুব শিগগিরই সেখানে বাংলাদেশের দক্ষ কেক আর্টিস্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সব বিখ্যাত কেক আর্টিস্টরা অংশগ্রহণ করবেন। আমি চাই, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অনেক বড় একটা কেক ইন্ডাস্ট্রি হোক, যেখান থেকে প্রচুর ভালো কাজ বেরিয়ে আসবে এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। শখকে গুরুত্ব দিলেই ভালো কিছু করা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর