শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

জলকাব্যের নিকলী হাওর

জলকাব্যের নিকলী হাওর

চারদিকে বিস্তৃত জলরাশি। কিছুদূর পর পর পানিতে দ্বীপের মতো ভেসে বেড়ানো গ্রাম। দূর দিগন্তে দেখা মেলে মাছ ধরা নৌকায় জেলেদের ব্যস্ততা আর রাতারগুলের মতো ছোট ছোট জলাবন। এসব নিয়েই নিকলী হাওর ছড়ায় তার প্রাকৃতিক রূপ। বর্ষা এলেই বাড়ে এর জৌলুস। লিখেছেন- শাকীর এহসানুল্লাহ

 

হাওরে কেন যাবেন

শহুরে জ্যাম, ব্যস্ততা, অফিস, সংসার- এমন সবকিছুর ভিড়ে আপনার মাথা যখন প্রায় হ্যাং, তখন এমন একটা জায়গা আপনাকে  দেবে পেছনের সবকিছু ভুলে নতুন করে ফ্রেশ হওয়ার সুযোগ। বিশাল জলের ওপর ভাসতে ভাসতে নীল রঙা আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের দেহ-মন সবই হালকা করে নিতে পারবেন। যেহেতু প্রসিদ্ধ পর্যটন জায়গাগুলোতে সবসময়ই পর্যটকদের ভিড় থাকে, তাই এমন অপ্রসিদ্ধ কিছু স্থানে আপনি নিজের মতো করে ঘুরে আসতে পারেন অনায়াসে। সাধারণ পর্যটন প্লেসের মতো কোনো ঝামেলা নেই। পানিতে ভাসতে ভাসতে হাওরের ভিতরের দিকে গেলে একপর্যায়ে যখন কোনো গ্রাম দেখা যাবে না, তখন হাওরকে আপনার শান্ত একটা সাগরের মতোও মনে হতে পারে। আবার ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়বে পানির ওপর ভাসমান অসম্ভব সুন্দর ছোট ছোট সবুজ গ্রাম। নৌকা থামিয়ে গ্রামটি একটু ঘুরে আসতে পারেন। অবাক হবেন মানুষের কাছে গিয়ে কথা বললে। আপনার কাছে মনে হবে পানির সঙ্গে বসবাস করতে করতে মানুষের স্বভাব-চরিত্রও পানির মতো হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রামের বাজার থেকে হালকা নাস্তা কিনে নিতে পারেন। খোলা আকাশের নিচে এলোমেলো বাতাসে নৌকার ছাদে খেতে বসলে আপনি পেতে পারেন অ™ভুত এক খাওয়ার আনন্দ।

 

হাতের কাছে আরেক রাতারগুল

হাওরে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাবেন ছাতিরচরে। পানির নিচে ডুবন্ত এক সবুজ বন। লেয়ারে লেয়ারে সাজানো সুবজ গাছ। গাছের বুক বরাবর পানিতে ভাসতে থাকবেন আপনি। হুট করে দেখে আপনার কাছে মনে হতে পারে এটা আরেক রাতারগুল। নিকলী বেড়িবাঁধ থেকে নৌকায় সরাসরি ছাতিরচর যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। নৌকায় ৩ ঘণ্টা ঘুরলে মোটামুটি অনেকটা জায়গা ঘুরে আসতে পারবেন।

 

নৌকা ভাড়া

সাধারণত এক ঘণ্টার জন্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা নেয়। আবার কয়েক ঘণ্টার জন্য নিতে পারেন প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ টাকার মতো করে। অবশ্যই ভাড়া দামাদামি করে নিবেন। এতে আরও কমতে পারে। নৌকাগুলো বেশ বড়সড়ও হয়। ১৫-২০ জন পর্যন্ত অনায়াসে নাচানাচি করে ঘুরে আসতে পারবেন। নৌকার সাইজ অনুযায়ী ভাড়া খুব একটা কমবেশি হয় না।

 

নিকলীতে খাবারের ব্যবস্থা

মূলত নিকলীতে ভালো মানের খুব বেশি খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে বাজারে বেশ কয়েকটা রেস্তোরাঁ আছে। মোটামুটি মানের তাজা মাছের রান্না দিয়ে খেতে ভালোই লাগবে। এছাড়াও বেড়িবাঁধে ঢোকার সময়ই একটা রেস্তোরাঁ পড়ে; সেই রেস্তোরাঁয় নদীর তাজা মাছের আঞ্চলিক স্বাদের খাবার খেয়ে নিতে পারেন।

 

রাত কাটাতে পারেন নৌকায়

ভরপুর কোনো পূর্ণিমা রাতের গাঢ় নীল আকাশের নিচে নৌকার ছাদে কাটিয়ে দিতে পারেন পুরো একটি রাত। ওখানে রাতে থাকাটা মোটামুটি নিরাপদ। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে। তবে পুরোপুরি নিরাপত্তার জন্য নিকলী থানায় ইনফর্ম করে নিতে হবে। তাহলে চিন্তামুক্ত ও আরামদায়ক একটি রাত কাটাতে পারবেন আপনি। রাতে অবশ্যই বেড়িবাঁধের কাছাকাছি কোনো স্থানে অবস্থান করতে হবে। যদিও নিকলীতে ডাঙায় থাকার কোনো সুব্যবস্থা নেই, তবে ইমার্জেন্সি থাকার প্রয়োজন হলে নিকলী থানা পুলিশের আওতায় একটি ডাকবাংলো আছে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সেখানে ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। এটাও যদি না হয়, তাহলে তো হাতের কাছে কিশোরগঞ্জ শহর আছেই।

 

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে যদি ভোরে রওনা করে রাতের মধ্যে চলে আসতে চান, তাহলে সবচেয়ে সুন্দর পন্থা হচ্ছে পুলেরঘাট দিয়ে যাওয়া। নিকলী হাওর সবচেয়ে বেশি কাছে হয় কিশোরগঞ্জের পুলেরঘাট থেকে। যেতে পারবেন ঢাকার সায়েদাবাদের পাশে গোলাপবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে ‘অনন্যা সুপার’ ও ‘যাতায়াত’ বাসে সোজা পুলেরঘাট। ভাড়া ২২০ টাকা। সময় লাগবে ৩ ঘণ্টা। পুলেরঘাট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে ১ ঘণ্টায় নিকলী বেড়িবাঁধ। সিএনজিতে জনপ্রতি ভাড়া ৮০ টাকা।

 

গোলাপবাগ থেকে একদম ভোর থেকেই বাস পাবেন। তবে ভালো থাকা-খাওয়ার চিন্তা করলে আপনাকে কিশোরগঞ্জ শহরেই যেতে হবে। নিকলী থেকে কিশোরগঞ্জ শহরে যেতে সিএনজিতে ঘণ্টাখানেক লাগে। আর যদি মনে করেন, কিশোরগঞ্জ শহর ও শহরের আশপাশে আরও কিছু ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন যেমন ইশা খাঁর বাড়ি, চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির, ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ইত্যাদি ঘুরে আসবেন। তবে আপনি ঢাকা থেকে সরাসরি কিশোরগঞ্জ শহরে চলে যেতে পারেন। কিশোরগঞ্জ শহর থেকেই আবার যেতে পারবেন নিকলী হাওরে। রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশ  থেকে সিএনজি অটোরিকশা যায় নিকলীর দিকে। মাথাপিছু ৮০ টাকা ভাড়ায় মাত্র ১ ঘণ্টায় আপনি নিকলী হাওর বেড়িবাঁধে পৌঁছতে পারবেন।

 

অথবা শহর থেকে চলে যেতে পারেন শহরের খুব কাছেই চামড়াবন্দরে। সেখান থেকেও নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারেন হাওরের আরেক পাশ। শহরের একরামপুর  রেলক্রসিং থেকে চামড়াবন্দরে যাওয়ার সিএনজি অটোরিকশা বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাওয়া যায়। সিএনজিতে সময় লাগবে আধা ঘণ্টারও কম। ভাড়া মাথাপিছু ৪০-৫০ টাকা।

 

কিশোরগঞ্জ হয়ে যেতে চাইলে

গোলাপবাগ বাসস্ট্যান্ড বা মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে  ভোর থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের বাস পাওয়া যায়।

মহাখালী থেকে ছেড়ে যাওয়া কিশোরগঞ্জের বাসগুলো একটু ছোট টাইপের। অথবা ট্রেনে  যেতে পারেন। কিশোরগঞ্জে যাওয়ার সবচেয়ে আরামদায়ক জার্নি হচ্ছে ট্রেন। সারা দিনে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা-কিশোরগঞ্জ আসা-যাওয়া করে।

 

ট্রেনের সময়সূচি

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ

সকাল ৮টায় এগারসিন্দুর প্রভাতী

সকাল ১০টায় কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস

সন্ধ্যা ৬টায় এগারসিন্দুর গোধূলী

 

কিশোরগঞ্জ-ঢাকা

সকাল সাড়ে ৬টায় এগারসিন্দুর প্রভাতী

দুপুর সাড়ে ১২টায় এগারসিন্দুর গোধূলী

বিকাল সাড়ে ৩টায় কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস

 

ট্রেনের ভাড়া

শোভন ১২০ টাকা

শোভন চেয়ার ১৫০ টাকা

প্রথম শ্রেণি চেয়ার ১৮৫ টাকা

ট্রেনে যেতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর