শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
উদ্ভাবন

মস্তিষ্কে ডিভাইস সংযোজন

মস্তিষ্কে ডিভাইস সংযোজন

চমকজাগানিয়া উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত ইলন মাস্ক। মাঝে মধ্যেই তিনি এমন সব উদ্ভাবনী ভাবনা নিয়ে হাজির হন, যা শুনে সাধারণের চোখ কপালে ওঠে। এবার এমনই একটি নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন এলন মাস্ক। মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে যন্ত্রের সংযোগ ঘটানোর অভিযানে নেমেছে তার প্রতিষ্ঠান। লিখেছেন- জামশেদ আলম রনি

 

টেসলা কিংবা স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অনেকেই হয়তো ইলন মাস্ককে চিনে থাকবেন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট (১) উৎক্ষেপণে  স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটের সুবাদে হলেও ইলন মাস্ককে আপনার চেনার কথা। তার আরও বেশকিছু প্রযুক্তি কোম্পানি আছে। এদের  কোনোটা মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে, আবার  কোনোটা মানুষের মস্তিষ্কের ভিতরে কি হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করছে। ইলন মাস্কের তেমনই এক  কোম্পানি হলো নিউরালিঙ্ক। মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে নিউরালিঙ্ক নামের এই প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন উদ্ভাবনী ধারণার জন্য পরিচিত এই মার্কিন প্রকৌশলী ও ধনকুবের। সম্প্রতি নিউরালিঙ্ক তাদের একটি যন্ত্রের  ঘোষণার পর  থেকে প্রযুক্তি বিশ্ব একটু নড়েচড়ে বসেছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় এর বিস্তারিতও জানিয়েছেন মাস্ক। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্তিষ্ক ও যন্ত্রের মধ্যে নতুন ধরনের এ সংযোগ স্থাপনের ব্যাপারে নেতৃত্ব দিচ্ছে মাস্কের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি নিউরালিঙ্ক। যন্ত্রের সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগ স্থাপনের প্রচেষ্টা অনেক দিন ধরেই করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতিও হয়েছে। যেমন পারকিনশন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য নিউরোসার্জনরা রোগীর মস্তিষ্কে কিছু ইলেকট্রোড স্থাপন করেন। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি দল একটি ‘ব্রেন টু ব্রেন নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছে, যার সাহায্যে কেবল নিজেদের চিন্তাকে কাজে লাগিয়েই ভিডিও গেম খেলতে পারবে মানুষ। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক কথা বলার সময় মানুষের মস্তিষ্ক থেকে স্নায়বিক সংকেত  রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছেন। পরবর্তী সময় ওই সংকেতকে তথ্যে রূপ দিয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক বক্তব্যেও পরিণত করেছেন তারা। তবে নিউরালিঙ্ক কেবল এর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে না; প্রতিষ্ঠানটির আকক্সক্ষা আরও  বেশি। মস্তিষ্ক ও যন্ত্রের উন্নত সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি একটি ‘নিউরাল লেস’ বা ‘স্নায়বিক ফিতা’ও তৈরি করতে চাইছে তারা। অত্যন্ত সরু ইলেকট্রোডের সমন্বয়ে গঠিত এই নিউরাল লেস মস্তিষ্ক থেকে আরও বেশি তথ্য জোগাড় করতে পারবে। তবে এই নিউরাল লেস স্থাপন করার প্রক্রিয়াটি এত সহজ নয়। ইলেকট্রোডগুলোকে অবশ্যই নমনীয় হতে হবে, যাতে করে মস্তিষ্কের টিস্যুর কোনো ক্ষতি না হয়। ইলেকট্রোডগুলো  যেন দীর্ঘমেয়াদি হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ সরবরাহের জন্য অন্তত কয়েক হাজার এমন ইলেকট্রোড মস্তিষ্কে স্থাপন করতে হবে। এত ইলেকট্রোড মস্তিষ্কে বসানোর প্রক্রিয়াটিকে নিরাপদ, ব্যথাবিহীন ও কার্যকর করতে হবে। নিউরালিঙ্কের দাবি, এসব লক্ষ্য পূরণের পথে তারা বেশ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়া একাডেমি অব সায়েন্সেসে দেওয়া এক উপস্থাপনায় তারা এক ধরনের নিউরোসার্জিক্যাল রোবটের প্রদর্শনী করেছে। এই নিউরোসার্জিক্যাল রোবট অনেকটা সেলাইযন্ত্রের মতো কাজ করবে। রোবটটি ইলেকট্রোড ভর্তি একটি বস্তু করোটির সূক্ষ্ম ফুটো দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করাতে পারবে। এই ইলেকট্রোড ভর্তি বস্তুটি মানুষের চুলের চেয়েও সরু! এগুলোয় থাকবে ৩২টি করে ইলেকট্রোড।  কোম্পানিটির দাবি, তারা এমন এক চিপের নকশা করেছে, যা একসঙ্গে ৩ হাজার ৭২টি ইলেকট্রোড থেকে পাঠানো সংকেত নিয়ে কাজ করতে পারবে। বর্তমানের সেরা প্রযুক্তির তুলনায় এই সংখ্যা ১০ গুণ বেশি। তবে বাস্তবে এ পরীক্ষা সফল হবে কিনা, তা নিয়ে কিছু সংশয় তো থেকেই যায়। মস্তিষ্কের ভিতর নিউরনগুলো সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর