শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

আমেরিকার বুকে বাংলাদেশ ধারণ করছে ফোবানা

সাইফ ইমন

আমেরিকার বুকে বাংলাদেশ ধারণ করছে ফোবানা

ছবি : রাফিয়া আহমেদ

আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের রয়েছে অনেক রকম সংগঠন। আর এই সংগঠনগুলোকে একসূত্রে গেঁথেছে ‘ফোবানা’ বা ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা’। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিন অফিসে এসেছিলেন সংগঠনটির এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি জাকারিয়া চৌধুরী। সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। “আওয়ার চিলড্রেন, আওয়ার প্রাইড” এ প্রতিপাদ্য সামনে নিয়ে এ বছর ৩০, ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর হতে যাচ্ছে উত্তর আমেরিকায় ফোবানা সম্মেলন...

 

আমেরিকায় বসবাস করছেন প্রচুর বাংলাদেশি। তাদের সাফল্যও শিরোনাম হচ্ছে বিশ্ব মিডিয়ায়। নিজ নিজ ক্ষেত্রে তারা কাজ করে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের রয়েছে অনেক রকম সংঘটন। আর এই সংঘটনগুলোকে এক সূত্রে গেঁথেছে ‘ফোবানা’ বা ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা’। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের অফিসে এসেছিলেন সংগঠনটির এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি জাকারিয়া চৌধুরী। সংঘটনের কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। ‘আওয়ার চিলড্রেন আওয়ার প্রাইড’ এই প্রতিপাদ্য সামনে নিয়ে এ বছর আগামী ৩০, ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উত্তর আমেরিকায় ফোবানা সম্মেলন।

উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত বাংলাদেশিদের সংগঠনগুলোকে একই ছাতার নিচে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে ১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু করে ফোবানা। জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা সেতুবন্ধন হলো এই ফোবানা। এর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে বাংলাদেশি সংস্কৃতির একটা আদান প্রদান তৈরি হয়েছে। শুধু আমেরিকাতে নয় কানাডা, মেক্সিকোসহ অর্থাৎ পুরো উত্তর আমেরিকাজুড়ে কাজ করে আমাদের এই সংগঠন। উত্তর আমেরিকাতে যে বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে সেসব সামাজিক সাংস্কিৃতিক সংগঠন তারাই হচ্ছে আমাদের সদস্য। ওইসব সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অথবা সেক্রেটারি আমাদের সংগঠনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। তাদের ভোটেই ফোবানার নেতা-নেত্রীরা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। প্রতি বছর ফোবানার কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। আমেরিকায় লেবার ডে উইকেন্ড নামে একটি বিষয় আছে। এই লেবার ডে উইকেন্ডে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবার এটা পড়েছে আগস্টের ৩০ ও ৩১ তারিখ এবং সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ। এই তিন দিন এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে। এবার ফোবানার ৩৩তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে আরও ৩২টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিউইয়র্ককে বলা হয়ে থাকে বিশ্বের রাজধানী। এই নিউইয়র্কে এবারের সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর এবার এই সম্মেলনটি হোস্ট করতে যাচ্ছে পুরনো নামি সংগঠন ড্রামা সার্কেল। তাদের আয়োজনেই এবারের সংগঠনটি অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন স্টেটে ঘুরে ঘুরে ফোবানার সম্মেলনটি হয়ে থাকে। এবার এই সংগঠনের একটি বিশেষ দিক রয়েছে। এবার নিউইয়র্কের যে হলটিতে আমরা সম্মেলনটি করছি সেটি হচ্ছে বিশ্বের বিখ্যাত ১০টি ভেন্যুর মধ্যে একটি। নাম হচ্ছে নাসাও কলেসিয়াম। এর দর্শক ধারণক্ষমতা হচ্ছে সাড়ে ১৭ হাজার। আমরা আশা করছি সেখানে এটলিস্ট ১৫ হাজার দর্শক সমাগম হবে আমাদের ফোবানা সম্মেলনে। এটা আমাদের জন্য প্রেস্টিজিয়াস।

‘ফোবানা’ বা ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা’ শুধুই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ বিষয়ে সংগঠনটির এই এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, অনেকের ধারণা ফোবানার কার্যক্রম সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ এটি একেবারেই সঠিক নয়।

একবারে প্রারম্ভিক অবস্থায় যখন শুরু হয়েছিল তখন হয়তো সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজকে ফোবানার ডালপালা অনেক বিস্তৃত। আমাদের ফোবানার সেন্ট্রাল কমিটিতে ২৫টা সাব কমিটি রয়েছে। যেমন- বিজনেস সাবকমিটি, মিডিয়া সাবকমিটি, কালচারাল সাবকমিটি এ রকম অনেক সাবকমিটি রয়েছে। যারা সারা বছরব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে। স্কলারশিপ একটা সাব কমিটি রয়েছে। এক সময় একটা ধারণা ছিল যে ফোবানা শুধু নাচগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু তা নয় ফোবানা এখন অনেক কাজ করে যাচ্ছে উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়ে। সম্মেলনে বিজনেস নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট হয়। যেখানে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা যায় এবং সেখানে মার্কিন ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে একটা সেতু বন্ধন তৈরি হয়। অনেক রকম ট্রেড ইনভেস্টমেন্ট সম্পর্কিত চুক্তি সম্পন্ন হয়। এতে দুপক্ষই লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

ফোবানা মেধাবী ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থাও করে থাকে। মাসিক হারে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ প্রদান করা হয় স্কলারশপি কমিটির মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্কলারশিপ কমিটির মাধ্যমে আমরা সেসব বাংলাদেশি বাচ্চারা সেখানে জন্মগ্রহণ করছেন বা পড়ছেন তাদের মধ্য থেকে আমরা নির্বাচিত করে স্কলারশিপ দিয়ে থাকি। মেধা তালিকার ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই নির্বাচন করা হয়ে থাকে। আমরা ১০ জনকে স্কলারশিপ দিয়ে থাকি।

এতদিন এই সুযোগ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার বাংলাদেশেও এই স্কলারশিপ চালু করতে ইচ্ছুক ‘ফোবানা’ বা ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা’।

এ প্রসঙ্গে জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, আমার এই স্কলারশিপ দেশে চালু করা যায় কি না তা নিয়ে ভেবেছি। আমরা খুব শিগগিরই দেশে এই স্কলারশিপ চালু করব। আমেরিকায় যে ছাত্র পড়াশোনা করে তারা আমেরিকা গভর্নমেন্ট থেকে অনেক রকম স্কলারশিপ পায়। আমেরিকাতে যারা থাকে তারা অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। সেই ক্ষেত্রে আমরা যদি বাংলাদেশের একটা ছেলেকে এই স্কলারশিপের এক হাজার ডলার দেই তাহলে সে অনেক বেশি উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশে যা প্রায় ৮৫ হাজার টাকা। এটা দিয়ে কিন্তু একজন ছাত্র তার সারা বছরের পড়াশোনা চালাতে পারে বাংলাদেশে। অথচ আমেরিকাতে এক মাসও চলে না।

আমরা বর্তমানে ১০ জনকে ১ হাজার ডলার করে স্কলারশিপ দিয়ে আসছি। কিন্তু আমরা এখন চিন্তা করছি যে আমরা ২০ জনকে ১ হাজার ডলার করে দিব খুব শিগগিরই।

উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী সংগঠন ‘ফোবানা’ বা ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা’ এর ২০১৮ সালের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল জর্জিয়া ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সেন্টারে। ২৭, ২৮ ও ২৯ জুলাই তিন দিনব্যাপী ফোবানা সম্মেলনের আয়োজনে ছিল জর্জিয়ার ‘বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব জর্জিয়া’। আমেরিকার বুকে বাংলাদেশকে ধারণ করা এই সংগঠনটির পথ চলা চলছেই   সাফল্যের সঙ্গে।

সর্বশেষ খবর