শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

রবিঠাকুরের কুঠিবাড়ি

শিলাইদহের কুঠিবাড়ি, ১৮০৭ সালে দাদা দ্বারকানাথ এই অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ এখানের জমিদার হয়ে আসেন। এখানে বসেই বিশ্বকবি রচনা করেন সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, গীতাঞ্জলি কাব্য।

আবু আফজাল সালেহ

রবিঠাকুরের কুঠিবাড়ি

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয় কুষ্টিয়াকে। ঐতিহাসিক এক উপজেলা কুমারখালী। এটি তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত। আছে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি; শিলাইদহে। সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা, লালনের আখড়া। আছে কাঙাল হরিনাথের বাড়ি ও মিউজিয়াম। এখানে আছে ঐতিহাসিক কিছু সাক্ষী। তাই বলা চলে, কোনো একটা স্থানে এলেই পাশাপাশি এসব দর্শনীয় স্থানের দেখা মিলবে। কুষ্টিয়া শহর থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই পড়বে। এবং সবই একই দিকে, একই রাস্তায়। লোকালপথ মাড়িয়ে যেতে হবে।

 

শিলাইদহ কুঠিবাড়ি কুষ্টিয়া শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে কুমারখালী উপজেলার অন্তর্গত শিলাইদহ ইউনিয়নের খোরশেদপুর কুঠিবাড়ি অবস্থিত। রবিঠাকুর বাংলাদেশে যত স্থানে পদচারণা করেছেন, তার মধ্যে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত এ শিলাইদহে কবিগুরু অনেক সাহিত্য রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এ অঞ্চলের জমিদারি পান। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। এখানে তিনি ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারি করেন। জানা যায়, এ সময় এখানে বসেই তিনি রচনা করেন তাঁর সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থের অনেক কবিতা।

 

মিউজিয়ামটি তিনতলা। ওপরের তলায় সামান্য স্প্রে।   প্রবেশ নিষিদ্ধ। ২০ টাকার টিকিট কেটে ঢুকে পড়েন। রবিঠাকুরের হাতের লেখা পান্ডুলপি, চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। ব্যবহৃত খাট, আলমারি, লোহার সিন্দুক, নৌকা, পারিবারিক দুর্লভ  ছবির সমাহার। মিউজিয়াম থেকে পুকুরঘাটে যাওয়ার পথে চোখে পড়বে কবির ব্যবহৃত (স্মারক) পাতকুয়া ও চৌবাচ্চা। ফুল আর নান্দনিক ফুটপাথ দিয়ে পুকুরঘাটে বিশ্রাম নিন। দেখুন বজরার রেপ্লিকা। বিশ্রামের সময় অস্থায়ী মঞ্চ (মাটিতে) থেকে রবীন্দ্রসুর ভেসে আসছে। হারিয়ে যাবেন আনমনে।

 

১৯৫৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িটি গৌরবময় স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত আছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুঠিবাড়ির গুরুত্ব অনুধাবন করে কবির বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহপূর্বক একে একটি জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করা হয়। পুরো ভবনটি এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। জাদুঘরের নিচ ও দ্বিতীয় তলায় ১৬টি কক্ষেই কবি রবীন্দ্রনাথ, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, কৃষকবন্ধু রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ নানা বয়সের বিচিত্র রবীন্দ্রনাথের ছবি। তাছাড়া রয়েছে শিল্পকর্ম এবং তাঁর ব্যবহার্য আসবাবপত্র। অন্যান্য ব্যবহার্যের মধ্যে আরও আছে চঞ্চলা ও চপলা নামের দুটি স্পিডবোট, পন্টুন, আট বেহারা পালকি, কাঠের চেয়ার, টি টেবিল, সোফাসেট, আরাম চেয়ার, পালংক ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস। রবিঠাকুরের ব্যবহৃত পাতকুয়া ও চৌবাচ্চাও আছে। শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে সামান্যই। পুকুরের কাছে শিশুকর্নার।

 

কীভাবে যাবেন

এখানে ঘুরতে যেতে হলে ঢাকা বা বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকে বাসে যেতে হবে কুষ্টিয়ায়। অথবা ঢাকা থেকে ট্রেনে যাওয়া যায় ভেড়ামারা বা পোড়াদহ স্টেশনে। তারপর অটো বা লোকাল বাসে কুষ্টিয়ায়। এরপর লোকাল বাস, অটো বা প্রাইভেটকারে আলাউদ্দিন নগর হয়ে কুমারখালীর শিলাইদহে। আর গাবতলী থেকে হানিফ, এসবি, শ্যামলীসহ বেশকিছু পরিবহন বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে অথবা দৌলতদিয়ার ঘাট হয়ে নিয়মিত যাতায়াত করে।

 

থাকা ও খাওয়া

থাকার জন্য জেলা পরিষদ ডাকবাংলো আছে, আছে রেস্ট হাউস, লাইব্রেরি রুম। একটু দূরেই রবীন্দ্রনাথের কাচারি বাড়ি। সেটিও দেখতে পারেন। পাশের গড়াই নদীর অপরূপ দৃশ্য মন মাতাবেই। আর কুষ্টিয়া শহরে থাকা ও খাওয়ার জন্য কোনো টেনশন দরকার নেই। আপনার বাজেটের মধ্যে হোটেল খুঁজে পাবেন। কুষ্টিয়ার কুলপি মালাইয়ের স্বাদ এখান থেকেই নিতে পারবেন। স্পেশাল কুলপি দারুণ মজাদার।

 

কুষ্টিয়া কুঠিবাড়ি বা টেগর লজ

কুষ্টিয়া বড়বাজার স্টেশনের একেবারেই কাছে কুষ্টিয়া কুঠিবাড়ি যা ‘টেগর লজ’ নামে পরিচিত। রবিঠাকুর মাঝে মধ্যে এখানে থাকতেন। অনেক স্মৃতি আছে এখানে।

 

পদ্মা-গড়াই নদীর মোহনা

শহরের কাছেই পদ্মা ও গড়াই নদীর মিলিত স্থানে অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পারেন বিকাল বেলা। সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য ভোলার নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর