শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানুষের পাশে ডিএসই

কৌশিক

মানুষের পাশে ডিএসই

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনন্য এক আবিষ্কারের নাম ফেসবুক। এটির ইতিবাচক ও নেতিবাচকÑ দুটো দিকই বিদ্যমান ও দৃশ্যমান, কিন্তু একটু বিবেক বুদ্ধি থেকে বিবেচনা করে বিচক্ষণ হলেই এই সেবাকে একটি শক্তিতে রূপান্তরিত করে সমাজের তুমুল পরিবর্তন আনা সম্ভব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মানেই কী শুধুই বিনোদন! বরং এর মাধ্যমেও সম্ভব মানুষের সহায়তার হাত হয়ে দাঁড়ানো। আমাদের দেশে এমন নানান বিষয় আছে যা সমাজে ট্যাবু করে রাখা হয়, অনেক কিছুই মানুষ নিজের পরিবারের সঙ্গে মন খুলে শেয়ার করতে পারে না, এমন নানান জিনিস আছে যা গুগলে পাওয়া যায় না বিস্তারিত এবং তাৎক্ষণিক অনেক বিষয়েই কোথাও পাওয়া যায় না সঠিক সহায়তা। সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই কিছু করার প্রচেষ্টা শুরু। কাজে লাগালেন ফেসবুকের গ্রুপ অপশনকে। সময়টা ২০১৪ সাল, আশফাক ইসলাম ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলেই নাম দিয়ে দিলেন “Desperately seeking explicit (DSE), পরবর্তীতে শুধু হেল্প সিক ডিসকাসে সীমাবদ্ধ না থেকে আরও আলাদা কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে রূপ নেয় “Do something exceptional” (আলাদা কিছু করার প্রত্যয়ে) নামে। মূলত ব্যক্তিগত জীবন বা তাৎক্ষণিক যে কোনো সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যেই এই গ্রুপের পথচলা। যেখানে নিজের সমস্যা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিলেই তাৎক্ষণিক সেই সমস্যার সমাধান জানা থাকলে উত্তর দিতে চেষ্টা করতে এগিয়ে আসেন গ্রুপের অন্য সদস্যরা। বাড়তে থাকে গ্রুপের কার্যক্রমের পরিধি, যোগ হতে থাকেন দেশের স্বনামধন্য মানুষজন। ২৪/৭ সহায়তা করার চেষ্টায় ব্রত নিয়ে ফেসবুকেই একে অপরের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন অগণিত মানুষ। ইতিমধ্যেই রয়েছে হাজারো বদলে যাওয়ার উদাহরণ। যেমন : কারও পড়াশোনার বই কিনে দেওয়া, কারও ভর্তির ফি ব্যবস্থা করে দেওয়া কিংবা চিকিৎসার টাকা জোগাড় করে দেওয়া, কোনো এক শিশুর কিডনি অপারেশনের টাকা ব্যবস্থা করে দেওয়া, বৃদ্ধ এক বাবার কেম থেরাপির টাকা দেওয়া, এক কর্মজীবী ব্যাংকারের পায়ের অপারেশনের টাকা তুলে দেওয়া, কলেজ যেতে আসতে কারও সাইকেল কিনে দেওয়া। অপরদিকে একদিন এক বৃদ্ধলোকের খোঁজ আসে ডিএসই তে, তিনি ১১ বছর ধরে পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়ে ভবঘুরে! মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে পেয়ে এক সদস্য পোস্ট করেন। উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসার দায়ভার বহন করে ডিএসই। ১৪ দিন কুর্মিটোলা হাসপাতালে সকাল দুপুর রাত উনার পাশে থাকে ডিএসই সদস্যগণ, তাদের নানান পোস্ট শেয়ার নিউজ প্রিন্টমিডিয়ায় এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় খোঁজ মিলে পরিবারের এবং তাকে হস্তান্তর করা হয় সিলেট থেকে আগত উনার পরিবারের কাছে। অন্যদিকে দূরের কোনো জেলায় বাসে করে অপহরণ ঠেকাতে পাশে দাঁড়ায় ডিএসই। তেমনি এক কোম্পানির শ্রমিকদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে শুনে প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করতে ভূমিকা রাখে ডিএসই। এমন লক্ষাধিক ছোটখাটো উদাহরণের সাক্ষী এই গ্রুপ প্রতিনিয়ত দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু আছে বা প্রয়োজন হয় সবকিছুর পূর্ণ সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে এই গ্রুপ। আবার কারও চিকিৎসা প্রয়োজন অথবা তাৎক্ষণিক ডাক্তারি সহায়তা অথবা কোনো প্রেসক্রিপশন রিপোর্ট বুঝতে পারছে না কেউ। তখন মেডহেল্প হ্যাশট্যাগে চলে আসছে নানান বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। রেসপন্ডেড বাই ডক্টর লিখে সমাধানও দিয়ে দিচ্ছেন তারা। হালের ভয়াবহ রোগের নাম ডিট্রেশন : এই ধরনের সলুশন চাওয়া পোস্টে মনরোগ বিশেষজ্ঞ থেকে সাইকোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিস্টের চিকিৎসা, এমনকি মন ভালো করার জন্যও মুহূর্তেই তার পাশে হাজির হয়ে যান অন্যান্য সদস্য। একঝাঁক উদ্যমী তরুণদের এই ভার্চুয়াল পরিবার অনলাইনের পাশাপাশি কাজ শুরু করে দেন অফ লাইনেও। বছরের প্রথমদিন ডিএসই বেছে নেয় বৃদ্ধাশ্রম। প্রায় ২ লাখ টাকার চাল ডাল, খাবার, ডাক্তার, ওষুধ, কাপড়, ফার্নিচার সামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক্স মালামালসহ এগিয়ে আসেন কিছু আলোকিত মানুষ। ২০১৭ সালের পয়লা জানুয়ারি কাটানো হয় বৃদ্ধাশ্রমে, সেখানে সামর্থ্যবান ৭ সন্তানের মা এক বৃদ্ধার ছবি ডিএসই ভাইরাল করায় লজ্জায় পড়ে তার সন্তানরা তাকে ফিরিয়ে নেন। এটিও ডিবসেইর একটি অর্জন বটে। ২০১৭-এর শুরু থেকে ‘বর্ণ নিয়ে’ নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুল বানান সংবলিত সাইনবোর্ড ব্যানার এসব ঠিক করার পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হয় বানান শুদ্ধকরণ প্রজেক্ট। এভাবেই দিনশেষে অন্তত একজনের মুখের হাসিতেই নিজেদের সার্থকতা খুঁজে পান এই গ্রুপের সদস্যরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর