শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

৬ বছর বয়সে হারানো মেয়েকে খুঁজে দিল ফেসবুক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

৬ বছর বয়সে হারানো মেয়েকে খুঁজে দিল ফেসবুক

বগুড়া থেকে চুরি হওয়া শিশু রানী (৬) ৯ মাস পর মা বাবার কোলে ফিরল। রানীকে দিনাজপুরের বিরামপুর কলেজ বাজার থেকে উদ্ধারের পর বগুড়া পুলিশ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আশ্রয় নিয়ে শিশুটির পরিচয় বের করে মা বাবার কাছে ফিরিয়ে দেন।

গত বছরের ডিসেম্বরের ১ তারিখে বগুড়া শহরের জয়পুরপাড়া নিজ বাড়ির পাশের সিএনজি স্টেশন এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় শিশু রানী। নিখোঁজ হওয়ার আগে অন্য শিশুদের সঙ্গে বাড়ির পাশে খেলছিল। সন্ধ্যায় রানীর বাবা-মা তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ে। স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় রানীকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে মাঝ বয়সী এক নারী তাকে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় নয় মাস ধরে শিশু রানীর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না তার বাবা-মা। বগুড়া সদর থানা পুলিশ সদস্যরা দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছিলেন এ বিষয়। রানীর বাবা বগুড়া শহরের জয়পুরপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থেকে রানা শেখ শহরে রিকশা চালান ও মা লিপি বেগম ঠিকা কাজ করেন। রানা শেখের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরাবাজার গ্রামে।

রানীর বাবা রানা শেখ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত বছরের ১ ডিসেম্বর রানী বিসিক এলাকার সিএনজি স্টেশনের সামনে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল। এ সময় এক নারী চকলেটের লোভ দেখিয়ে রানীকে ডেকে নেন। এরপর তাকে চুরি করে নিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রানীর সন্ধান না পেয়ে বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার দিনগত রাত ১২টায় বগুড়া সদর থানার তদন্ত ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম ফেসবুকে শিশু রানীর ছবি দিয়ে পরিবারের সন্ধান চেয়ে পোস্ট দেন। পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বিষয়টি নজরে পড়ে গণমাধ্যমকর্মী সাখাওয়াত জনির। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পোস্ট কপি করে নিজ ওয়ালে পোস্ট দেন এবং পরিচিত বিভিন্ন এলাকার বন্ধুবান্ধবদের ট্যাগ করেন। পোস্ট দেওয়ার ৫/৭ মিনিট পরেই বগুড়া শহরের জয়পুর পাড়া এলাকার মাসুম তালুকদার, আবরার হোসেন, অন্তর পলাশসহ বেশ কয়েকজন ফোন দিয়ে শিশু রানীর বাড়ি জয়পুরপাড়া এবং তার বাবার নাম রানা, পেশায় রিকশাচালক এবং শিশু রানী ৮ থেকে ৯ মাস আগে হারিয়েছে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মী সাখাওয়াত জনি বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে রাত দেড়টায় শিশু রানীর বাবা-মা বগুড়া সদর থানায় যোগাযোগ করেন। রাত ২টায় দিনাজপুরের বিরামপুর থানার উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় রানীর বাবা-মার সঙ্গে পরিবারের আরও দুজন সদস্য ছিল। সকালে তারা বিরামপুর থানায় উপস্থিত হয়ে নিজের সন্তানকে কোলে ফিরে পান।

দিনাজপুরের বিরামপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির জানান, ২৪ আগস্ট দুপুরে উপজেলার কলেজ বাজারের পাশে একটি পাম্পের সামনে কাঁদছিল। শিশুটির বিষয়ে কেউ কোনো সন্ধান না দিতে পারলে থানায় নেওয়া হয়। পরে বগুড়া পুলিশ বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে শিশুটির পরিচয় পাওয়া যায়। বগুড়া সদর থানার তদন্ত ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে শিশু রানীকে তার বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এবং তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফেসবুক বন্ধু মহলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। শিশু রানী বাবা-মার কোলে ফিরে আনন্দে আত্মহারা বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর