শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্বের প্রথম সোনালি আঁশের দ্বিচক্রযান

অপেক্ষাকৃত মজবুত ও হালকা সাইকেল তৈরির নেশায় থাকা নোমান তৈরি করে ফেলেছেন সোনালি আঁশের দ্বিচক্রযান...

রিশাদ হাসান

বিশ্বের প্রথম সোনালি আঁশের দ্বিচক্রযান

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং এলাকা। সেখানে একটি ৬তলা বাসার ছাদ একটু ভিন্ন রকম। চারপাশে বিভিন্ন রকম গাছ আর মাঝে বিভিন্ন সাইকেলের যন্ত্রাংশ, টায়ার, টিউবে ভরপুর। প্রথমে দেখলে পুরনো সাইকেলের গোডাউন মনে হতে পারে আদতে তা নোমানের সাইকেল তৈরির ছোট্ট কারখানা।

আবু নোমান সৈকত লেখাপড়া করেছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। একবার তার একটি শখের সাইকেল চুরি হয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন দোকানে পছন্দের ডিজাইন আর ব্র্যান্ডের সাইকেল খুঁজতে শুরু করেন তিনি। যেটাও পছন্দ হলো তা হাতে পেতে সময় লেগে যাবে অন্তত ৪ মাস। দামও পড়বে লাখের ওপর। সেই থেকে নোমানের মাথায় আসে নিজ হাতে সাইকেল তৈরির বুদ্ধি। প্রথমে অল্প হলেও দিনে দিনে বাড়তে থাকে নোমানের হ্যান্ড মেইড সাইকেলের চাহিদা। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো যিনি সাইকেল কিনবেন তার উচ্চতা, দৈহিক গড়নের ওপর ভিত্তি করে যুতসই সাইকেল বানিয়ে দেওয়া যায়। এ ছাড়াও যে কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গেই রিপেয়ার আর রিপ্লেসের সুবিধাও পাওয়া যায়। নোমান ছোট্ট এই প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন বাইক স্মিথ। অপেক্ষাকৃত মজবুত ও হাল্কা সাইকেল তৈরির নেশায় থাকা নোমান প্রথমে চেয়েছিলেন কার্বন ফাইবার জাতীয় কিছু তৈরি করতে। যা ওজনে কম হলেও যথেষ্ট মজবুত হবে। পরে কাঁচা মাল হিসেবে রেজিনের সঙ্গে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন পাট। এরপর কাছে-দূরের পরিচিতদের কাছে বলেছিলেন পাট দিয়ে সাইকেল বানাবেন। দূরের যারা তারা এক কথায় পাগল ভেবেছিল তাকে। আর যারা কাছের তারা বলেছিল, এসব চিন্তা বাদ দিয়ে অন্য ভালো কাজে মন দিতে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ২০১৫ সালে ৭ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি হয় তার প্রথম পাটের সাইকেলের কাঠামো। তার সঙ্গে যুক্ত করেন সাইকেলের বাকি অংশগুলোও। ২০১৫ সালে প্রথম সাইকেল তৈরির পর খুব একটা সাড়া না পেলেও তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকেন তিনি। পাট সহজে পচনশীল। তবে তার সঙ্গে রেজিন থাকায় পানি ও মরিচারোধী হয়ে উঠেছে। তবে এই সাইকেলের জীবনকাল শেষে এটাকে ক্রাশ করে দিলে তা সহজেই মিশবে মাটিতে। নোমান জানান, ‘ভালো ব্র্যান্ডের সাইকেলের চেয়ে এটার আয়ুষ্কাল বেশি বলা যাবে না তবে এটা অন্তত ৫০ বছর টেকসই হবে। এ ছাড়াও বিদেশি ব্র্যান্ডের ভালো সাইকেল কিনতে আমাদের দেশে অনেক টাকা লাগে কিন্তু এটার বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে দশ হাজার টাকায় ভালো মানের পাটের সাইকেল তৈরি করা যাবে।’ যদিও চলতি বছর নোমান যে পাটের সাইকেলটি তৈরি করেছেন তা তৈরি করতে খরচ পড়েছে ১৫ হাজার টাকা। সময় লেগেছে দুই দিন। তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে গেলে এক দিনেই এক ইউনিট সাইকেলের প্রোডাকশন সম্ভব। নোমানের মতে এই সাইকেল পরিবেশবান্ধব।

তাছাড়াও বর্তমানে সাইকেলটির হ্যান্ডেল, সিটসহ বেশ কিছু জায়গা পাটের তৈরি নয়। ভবিষ্যতে এটাও পাট দিয়ে তৈরির পরিকল্পনা আছে তার।

সর্বশেষ খবর