শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মৌলভীবাজারের ডলি কানাডার বিরোধীদলীয় ডেপুটি হুইপ

জামশেদ আলম রনি

মৌলভীবাজারের ডলি কানাডার বিরোধীদলীয় ডেপুটি হুইপ

কানাডার অন্টারিওর প্রাদেশিক সংসদে বিরোধীদলীয় ডেপুটি হুইপ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপিপি (মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট) ডলি বেগম। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায়। তিনি সদর উপজেলার মনুরমুখ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সুজন মিয়ার নাতনি। তার বাবার নাম রাজা মিয়া এবং মায়ের নাম জবা বেগম। তিনি শিশু বয়স থেকেই কানাডায় বেড়ে উঠেছেন। তিনি প্রাদেশিক পরিষদে অফিশিয়াল বিরোধী দল এনডিপির ‘আর্লি লার্নিং অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার ক্রিটিক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে তিনি বিরোধীদলীয় ডেপুটি হুইপ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন।

কানাডায় এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাজনৈতিক এই ধরনের দায়িত্ব পেলেন। ডলি বেগমই প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইতিহাস গড়েছিলেন। কনজারভেটিভ প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ডের গণবিরোধী নানা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে খোলামেলা বক্তব্য রেখে ডলি বেগম ইতিমধ্যে অন্টারিওর প্রভিন্সিয়াল রাজনীতিতে আলোচনায় আসেন। অন্টারিওর পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন ডলি বেগম। বাবা রাজা মিয়া, মা জবা বেগম ও ভাই মহসিন আহমদের সঙ্গে কানাডায় বসবাস করছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারে ডলির স্লোগান ছিল, ‘আমাকে ভোট দিলে আপনারা আশাহত হবেন না।’ জনগণ তার কথায় বিশ্বাস করে ভোট দিয়েছেন।+

ডলি বেগম মৌলভীবাজারের স্থানীয় মনুমুখ বাজরাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষে মনুমুখ পিটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ২০১২ সালে টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ২০১৫ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে উন্নয়ন, প্রশাসন ও পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পড়ালেখা শেষ করার পর সিটি অব টরেন্টোতে প্রায় দশ মাস কাজ করেন ডলি বেগম। তিনি রিচার্স এনালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন দ্য সোসাইটি অব এনার্জি প্রফেশনালসে। ডলি বেগমের জন্ম মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাজরাকোনা গ্রামে। তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ডলির বাবা রাজা মিয়া প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখান থেকে ১৯৯৮ সালে তিনি কানাডায় যান। তার স্ত্রী জবা বেগমসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা হলেন ডলি বেগম (২৭) ও মহসিন মিয়া (২৪)। কানাডা যাওয়ার পর ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে পরিবার নিয়ে যাওয়ার আবেদন করে ১৯৯৯ সালে ডলি বেগমসহ সবাইকে কানাডায় নিয়ে যান রাজা। ডলির চাচা মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক আবদুস শহীদ জানান, ১৯৮৯ বাজরাকোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ডলি। অল্প বয়সে কানাডায় গিয়ে কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়েন ডলি। তার বাবা ২০০১ সালে এক মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। তখন তার বাবাকে হাসপাতালে দেখাশোনার সবকিছুই তাকে করতে হতো। ডলি বেগম প্রাদেশিক সংগঠন কিপ হাইড্রো পাবলিক ক্যাম্পেইনের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। এ ছাড়া স্কেয়ারবোরো হেলথ কোয়ালিশনের সহ-প্রধান ছিলেন তিনি। জানা যায়, বাংলাদেশে ডলির আরেক চাচা আছেন। তার নাম আবদুল মজিদ বাদশা (৬০)। তিনি বলেন, ‘আমার ভাতিজি কানাডার পার্লামেন্ট নির্বাচনে জিতে শুধু আমাদের গ্রামের সম্মান নয়, পুরো বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমি ডলির জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’

সর্বশেষ খবর