শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অন্যরকম এক শিক্ষক

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর থেকে

অন্যরকম এক শিক্ষক

এখন লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাতেও স্বপ্ন দেখেন মেয়েরা

দিনাজপুর শহরের ঈদগাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান। নিজেই বাস্তবতার আলোকে ছাত্রী ঝরে পড়া, বাল্যবিয়ে রোধ এবং স্কুলমুখী করতে স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাউন্সেলিং করেন...

 

বাল্যবিয়ে রোধ কিংবা সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী না হয়ে কর্মমুখী হওয়ায় দিনদিন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। সুবিধাবঞ্চিত এসব ছাত্রীর কারও বাবা নেই, মা নেই কিংবা কারও দুজনই নেই, আবার কারও মা-বাবা ইটের  খোয়া ভাঙে, হোটেলে কাজ করে কিংবা ভ্যান চালায় এসব পরিবারে নানা কারণে কারও বাল্যবিয়ে দেওয়া হতো কিংবা কাজ করতে যেতে হতো।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দিনাজপুর শহরের ঈদগাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান নিজেই বাস্তবতার আলোকে ছাত্রী ঝরে পড়া, বাল্যবিয়ে রোধে এবং স্কুলমুখী করতে কাজ শুরু করেন। তিনি স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাউন্সেলিং শুরু করেন, যা এখনো অব্যাহত রেখেছেন। কারণ এই স্কুলের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী।

স্কুলের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাতেও স্বপ্ন দেখান এই প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান। তাদের উৎসাহ আর আনন্দ দিতে খেলার মাঠেও তাদের সঙ্গে খেলার অনুশীলনে নেমে পড়েন তিনি।

স্কুলে যেহেতু কোনো খেলার মাঠ নেই, তাই তারা স্কুলের ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল দলের সদস্য হয়ে অনুশীলন করেন দিনাজপুর বড় ময়দানে। লেখাপড়ার পাশাপাশি এখন তারাও দেখেন খেলা নিয়ে স্বপ্ন। এ কারণে প্রতিটি খেলাতেই স্বাক্ষর রেখেছে এসব সুবিধাবঞ্চিত এ স্কুলের মেয়েরা।

এসব খেলোয়াড়ের বাবা-মার টানাপড়েনের সংসার। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে স্কুলে। খেয়ে না খেয়ে যাদের দিন পার হয়। এ স্কুলের প্রায় ৯৫ ভাগই সুবিধাবঞ্চিত বাবা-মায়ের সন্তান। সুবিধাবঞ্চিত এসব ছাত্রী প্রতিদিনের কষ্ট ভুলে ডুবে থাকে পড়ালেখার পর খেলার অনুশীলনে। তাই তারা সাফল্য পেয়েছে ২০১৯ সালের শীতকালীন ক্রিকেট খেলায় উপজেলা ও জেলায় চ্যাম্পিয়নে। ২০১৮ সালে গ্রীষ্মকালীন ফুটবল খেলায় বিভাগীয় পর্যায়ে রানারস আপ এবং ফুটবল ও হ্যান্ডবলে উপজেলা ও জেলা চ্যাম্পিয়ন, ২০১৬-১৭ সালে গ্রীষ্মকালীন ফুটবল খেলায় উপজেলা ও জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অন্যদিকে এই শিক্ষক ফজলুর রহমান স্কুল ছুটির পর কোনো স্কুল সংক্রান্ত কাজ না থাকলেও ছুটির পর ছাত্রীদের বাড়ির দরজায় গিয়ে তাদের সমস্যার কথা শোনেন এবং কোনো কারণে ওই ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে না যায় সে লক্ষ্যেই কাজ করেন। এ কারণে ছাত্রী হাজিরার পাশাপাশি বাল্যবিয়ে রোধ ও স্কুলমুখী করার কারণে এরই মধ্যে তাকে সম্মানিত করা হয়েছে। শিক্ষা সামাজিক অবদানের জন্য শিক্ষা অফিস ছাড়াও ঢাকার ওয়াই.এস.এস.ই (ysse) সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এ স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ফজলুর রহমান যোগদান করেন ২০০৬ সালে।

ঈদগাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান জানান, ২০০৬ সালে ছাত্রী যেখানে ৯০ জন ছিল আজ তা বেড়ে ৫২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। অথচ এ স্কুলের শতকরা ৯০ ভাগ ছাত্রীই সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের। আজ এ স্কুলে মিড ডে মিল চালু রয়েছে। আর এই মিড ডে মিলের এবং খন্ডকালীন শিক্ষকের যাবতীয় সহায়তা করছেন দ্যা ইস্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের এমডি ইঞ্জিনিয়ার এম. এ আউয়াল। স্কুলে এখন প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ ছাত্রী উপস্থিত হয়। এ স্কুলে এখন শিক্ষকদের ডিজিটাল এটেনডেন্ট চালু করা হয়েছে এবং শিগগিরই ছাত্রীদেরও ডিজিটাল এটেনডেন্ট চালু করা হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা করে তারা। খেলাধুলা করতে নিয়ে যান বড় ময়দানে। খেলার পর নাস্তাটাও তাকেই খাওয়াতে হয়। এতে দিন দিন তাদের পড়ালেখাসহ খেলাধুলাতেও সাফল্য বাড়ছে। পাশাপাশি বাল্যবিয়ে বা ঝরে পড়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে ছাত্রীরা। 

তিনি আরও জানান, আন্তরিকতা থাকলে কী পেলাম আর পেলাম না চিন্তা না করে কাজ করলে অবশ্যই সাফল্য পাওয়া যাবেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর