শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দেশের আট জেলার কর্ণধার নারী

নিজামুল হক বিপুল

দেশের আট জেলার কর্ণধার নারী

নারীরা এখন কোনো কিছুতে পিছিয়ে নেই। রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে দেশের আটটি জেলায় জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আট নারী কর্মকর্তা। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদক। পঞ্চগড়ের ডিসি দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

 

নাজিয়া শিরিন

জেলা প্রশাসক, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন গত ২৭ জুন। প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা এর আগে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক হিসেবে প্রায় ১১ মাস দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ২৮ মে চাকরিতে যোগ দেওয়া নাজিয়া শিরিন এর আগে সহকারী কমিশনার ভূমি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিভিন্ন দফতরে দায়িত্ব পালন করেন।

বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলায় জন্ম নেওয়া নাজিয়া শিরিনের বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক, সমাজসেবক ও রাজনীতিক। তিনি জানান, ‘মাঠে কাজ করার আনন্দটাই অন্যরকম। বহু মানুষের সান্নিধ্য পাওয়া যায়। নানারকম অভিজ্ঞতা হয়। তবে মৌলভীবাজারের মানুষ যেভাবে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে আমাকে গ্রহণ করেছে তাতে আমি আপ্লুত। তারা আমাকে নারী হিসেবে নয়, একজন প্রশাসক হিসেবে, তাদের সেবক হিসেবে কাছে টেনে নিয়েছে। আমি চেষ্টা করব যতদিন এই জেলায় দায়িত্ব পালন করব ততদিন যেন তাদের সেবা করে যেতে পারি। আমাকে সর্বতোভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছেন জেলার রাজনীতিক থেকে শুরু করে, সমাজকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সুধীসমাজ।

 

ফারহানা কাউনাইন

জেলা প্রশাসক, নরসিংদী

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন কালেই নরসিংদীর ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান ফারহানা কাউনাইন। মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব পালনকালে সফলতার স্বাক্ষর রাখা ফারহানা প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা। ২০০১ সালের ২৮ মে চাকরিতে যোগ দেওয়া এই নারী কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। তখন সরকারের একটি খামার একটি বাড়ি প্রকল্পের সফলতার জন্য সারা দেশে শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ঢাকা জেলার এডিসি, পানি সম্পদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপসচিব হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেন।

নরসিংদীর ডিসি হিসেবে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ‘কর্মসংস্থান নরসিংদী’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৩২১ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান করেছেন। আরও প্রায় ৪০০ যুবকের কর্মসংস্থান এখন প্রক্রিয়াধীন। তিনি ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসক হিসেবে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ও চলতি বছর জনপ্রশাসন পদকও অর্জন করেন।

ফারহানা কাউনাইন বলেন, ‘আমার ধ্যান-জ্ঞান শুধু জেলার উন্নয়ন আর মানুষের সেবা করা। এখন পর্যন্ত নরসিংদীর সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাকে সহযোগিতা করছেন।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের সন্তান ফারহানার বাবা অ্যাডভোকেট সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রাজনীতিক। ১৯৭০-এর নির্বাচনে তিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচনে এমপি হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। তার স্বামী মো. সায়েদুর রহমান অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে কর্মরত আছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই)। 

 

শাহিদা সুলতানা

জেলা প্রশাসক, গোপালগঞ্জ

প্রশাসন ক্যাডারের ২১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত আছেন। সর্বশেষ দায়িত্ব পালন করেছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে। তিনি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফাস্ট সেক্রেটারি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এটুআই প্রকল্পেও দায়িত্ব পালন করেন। যশোরের অভয়নগর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি), কেশবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বাসিন্ধা শাহিদা সুলতানার বাবা গোলাম মাওলা ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবী।

তিনি চাকরিতে যোগ দেন ২০০৩ সালের মে মাসে। তিনি বলেন, ‘আমি যে একজন নারী; কাজের ক্ষেত্রে সেটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। স্থানীয় রাজনীতিক থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষই সহযোগিতা করছেন কাজের ক্ষেত্রে। আর জেলার দায়িত্বপালনকারী সরকারি কর্মকর্তাও সব সময় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’

 

আনার কলি মাহবুব

জেলা প্রশাসক, শেরপুর

বিসিএস ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা আনার কলি মাহবুব শেরপুরের ডিসি হিসেবে গত ২৭ জুলাই থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০১ সালের ২৮ মে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। মাঠ প্রশাসনে তিনি সহকারী কমিশনার, ইউএনও, এডিসি হিসেবে কাজ করেছেন। রংপুর শহরের মেয়ে আনার কলির বাবা প্রয়াত এ কে এম মাহবুব উল আলম ছিলেন সরকারের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক। আনার কলি বলেন, ‘ডিসি হওয়ার আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর এবং নীফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায়। এরপর কুষ্টিয়ার এডিসি ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আইএমইডি বিভাগে উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। কাজের ক্ষেত্রে কোনো রকম প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়নি। মানুষের ভালোবাসা এবং সহযোগিতায় সরকারের অর্পিত দায়িত্ব সফলভাবে করার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে প্রতিশ্রুতি সেটি বাস্তবায়নে কাজ করছি। আমার বাবাও ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাবার কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখেছি। সেগুলোকে এখন কাজে লাগাচ্ছি।’

আনার কলির স্বামী মো. মুজিব-উল ফেরদৌস সরকারের একজন উপসচিব হিসেবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) দায়িত্ব পালন করছেন।

 

আনজুমান আরা

জেলা প্রশাসক, নড়াইল

আনজুমান আরা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২১ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি জেলা প্রশাসক হিসেবে সফলভাবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করছি। নড়াইলের মানুষের উন্নয়ন ও তাদের সমস্যা দেখেশুনে সমাধান করাই আমার মূল কাজ। সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ায় সরকারের যে স্বপ্ন সেটি বাস্তবায়নেই আমার মনোযোগ বেশি। জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ইউনিয়ন পরিষদে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার গড়ে তুলেছি। যাতে করে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারে। অসহায় ও দুস্থদের জন্য একটি শান্তিনিবাস এবং জেলায় একটি পার্ক করে দিচ্ছি। এ ছাড়া ক্লিন নড়াইল, গ্রিন নড়াইল নামে প্রকল্প হাতে নিয়েছি।’ 

আনজুমান আরা মাঠ প্রশাসনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), স্থানীয় সরকার বিভাগে উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্বামী সরকারি তিতুমীর কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. রিজাউল হক।

 

দিলসাদ বেগম

জেলা প্রশাসক, রাজবাড়ী

দিলসাদ বেগম বিসিএস প্রশাসনের ২১তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা। সর্বশেষ উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন গত ২৩ জুন। তিনি বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে একজন নারী হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধকতা পাইনি। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরা সবাই যেভাবে সহযোগিতা করছেন তাতে কোনো রকম প্রতিকূলতা দেখা যায়নি। সরকারি কর্মকর্তারাও অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন, সহযোগিতা করছেন।’

দিলসাদ বেগম ২০০৩ সালের মে মাসে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে মাঠ প্রশাসনে কাজ করেছেন অনেকদিন।

এর মধ্যে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় আড়াই বছরেরও বেশি সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন।  

 

সুলতানা পারভীন

জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম

প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছেন গত বছরের ৩ মার্চ। এখন পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০১ সালের মে মাসে চাকরিতে যোগ দেওয়া এই কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন রংপুরের কাউনিয়া ও বগুড়া সদর উপজেলায়। এরপর এডিসি ছিলেন রংপুর জেলায়। তার চাকরি জীবনের বড় অংশই কেটেছে মাঠ প্রশাসনে।

 

সাবিনা ইয়াসমিন

জেলা প্রশাসক, পঞ্চগড়

গত বছরের ৯ অক্টোবর পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন। প্রশাসন ক্যাডারের ২১তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ২০০৩ সালের মে মাসে। তারপর দীর্ঘদিন কাজ করেছেন মাঠ প্রশাসনে।

ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও। সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব থাকাকালীন তিনি ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান।

সর্বশেষ খবর