শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
শেকৃবিতে গবেষণা

ফুলরাজ্যে দুই নন্দিনী

ওলী আহম্মেদ, শেকৃবি

ফুলরাজ্যে দুই নন্দিনী

নন্দিনী। না, রূপকথার কোনো মানবী নয়- দেশীয় ফুলরাজ্যে ব্যতিক্রমী বিশেষত্বের গোলাপসদৃশ এক স্বতন্ত্র ফুল। আজ থেকে এক যুগ আগে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব খামারে নন্দিনী প্রথম ফোটে। পরে ক্রমাগত গবেষণায় সম্প্রতি নন্দিনীর দুটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন শেকৃবি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের পিএইচডি ফেলো নাজনীন সুলতানা। তিনি একই বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি সম্পন্ন করেছেন। নন্দিনীর নতুন দুই জাতের একটি গাঢ় নীল রঙের, অন্যটি হালকা গোলাপি। ইতোমধ্যে নিবন্ধনের মাধ্যমে নীলরঙা ফুলটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ আর গোলাপি ফুলটি ‘বঙ্গবন্ধু-২’।

২০০৪ সালে জাপান থেকে নন্দিনীর বীজ ও উপযোগী মাটি এনেছিলেন ড. জামাল। প্রথম ফুল ফোটে ২০০৭ সালে। বিস্তর গবেষণায় কাক্সিক্ষত ফলাফল আসলে পরে ২০১৪ সালে নন্দিনী নামে এর নিবন্ধন করা হয়। তাই বিশ্বব্যাপী ফুলটিকে ‘লিসিএন্থাস’ নামে পরিচিত করানো হলেও বাংলাদেশে পরিচিত ‘নন্দিনী’ নামে। বাণিজ্যিক ফুল (কাটফুল) হিসেবে ফুলটির রয়েছে কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য। বুনো প্রকৃতির হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টি, প্রচন্ড গরম বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফুলের পাপড়ি নষ্ট হয় না। ফুলগুলো শক্ত বৃন্তের ওপর থাকে বলে এর দলমন্ডল নুয়ে পড়ে না। ফুলদানিতে সাধারণ দ্রবণে ১৫ দিন ও সুক্রোজ (চিনি) দ্রবণে ২৫ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ তাজা থাকে ফুলটি। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে ফুটলেও সারা বছরই এর উৎপাদন সম্ভব। বাজারে তাই চাহিদাও বেশি নন্দিনীর।

এ সম্ভাবনা থেকেই পিএইচডি গবেষণায় নন্দিনী বেছে নিয়েছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা। তিনি বলেন, ‘গবেষণা শুরুর আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। বুঝলাম, গোলাপের প্রতি আগ্রহ বেশ। কিন্তু গোলাপের চারা খানিক বৃষ্টিতেই নষ্ট হয়ে যায়। আর নীল রঙের প্রতি আদি আগ্রহ মানুষের। এ ক্ষেত্রে নীল নন্দিনী গোলাপের বিকল্প হতে পারে। দেশে শীতকাল বাদে সারা বছর সেভাবে কাটফ্লাওয়ার উৎপাদিত হয় না বলে নন্দিনী সেই চাহিদা পূরণ করবে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট এ গবেষক। গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নন্দিনীর চারা উৎপাদন করতে হয় বিধায় এখনো মাঠপর্যায়ে এটি সহজলভ্য নয়। অবশ্য ৩ বছর আগে যশোরের ২৫ জন ফুলচাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নন্দিনীর চারা সরবরাহ করেছিলাম। এতে চমৎকার ফল এসেছিল। কিন্তু বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনের জন্য প্রারম্ভিক পর্যায়ে প্রচুর অর্থ ও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার যা এখনো হয়ে ওঠেনি। তবে তিনি আশা করছেন সব বাধা কাটিয়ে দেশে নন্দিনীর বাণিজ্যিক চাষাবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর