শিরোনাম
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সিডনি আধুনিক স্থাপত্যের বৈচিত্র্যময় এক পর্যটন নগরী

এম. জহিরুল হক (জহির)

সিডনি আধুনিক স্থাপত্যের বৈচিত্র্যময় এক পর্যটন নগরী

দেশের নাম অস্ট্রেলিয়া। প্রভিন্স নিউ সাউথ ওয়েলস। রাজধানী সিডনি। সিডনি মহানগরী দুই ভাগে বিভাজিত। তাহলো সিডনি মহানগরী এবং সাব আরবান সিডনি। সিডনির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৫ বর্গ কিলোমিটার। সিডনি সিটি এবং সাব আরবান, নিউ ক্যাসেলসহ কয়েকটি প্রভিন্স মিলিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলস। সিডনি মহানগরী এক আধুনিক স্থাপত্য ও আধুনিক অবকাঠামোতে সমুজ্জ্বল এক পর্যটক নগরী। মহানগরীতে রয়েছে প্রায় ১০০ কিলোমিটার মাটির নিচে টানেল স্ট্রিট। টানেলের উপরিভাগে রয়েছে রাস্তা। রাস্তায় শুধুমাত্র প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য গাড়ি এবং অত্যাধুনিক বাস ছাড়া আর কিছু চলে না। প্রতিটি রাস্তার পাশে ফুটপাথ আছে। কিন্তু ফুটপাথে কোনো মানুষ নেই। রাস্তায় গাড়ি আর গাড়ি। নিউ সাউথ ওয়েলস প্রভিন্সে কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই। সিডনি মহানগরী ও সাব আরবান এলাকায় শত শত মাইল রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি চলছে কিন্তু কোথাও কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই। নির্দিষ্ট ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়িগুলো থামছে আর সবুজ বাতি জ্বলার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িগুলো সারিবদ্ধভাবে চলছে। একটি সিগন্যালেও ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি চালানোর কোনো সুযোগ নেই। এমনকি একটি সিগন্যালে চার দিকের রাস্তায় কোনো গাড়ি না থাকা সত্ত্বেও কোনো ১টি গাড়ি ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি চলে না। সিডনি এবং সাব আরবান এলাকায় গ্রাম সদৃশ্য কোনো এলাকা নেই। সিডনি মহানগরী থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে প্রতিটি রাস্তা মসৃণ এবং রয়েছে ট্রাফিক সিগন্যাল। সিডনি মহানগরী বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম একটি পর্যটক নগরী। এ আধুনিক সিটিতে রয়েছে পর্যটক আকর্ষণের নানাবিধ আকর্ষণীয় আধুনিক স্থাপনা। হারবার ব্রিজ ও সিডনি সিটির একটি আকর্ষণীয় ও নান্দনিক স্থাপনা হচ্ছে হারবার ব্রিজ। এ ব্রিজের উচ্চতা ভূমি থেকে প্রায় ৩০০ ফুট। হারবার নদীর ওপর স্থাপিত এ ব্রিজটিতে সিডনি সিটি এবং সিটির বাইরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হয়েছে। এ ব্রিজের ওপর দিয়ে একপাশে গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন চলে ও অন্য পাশে চলে ইলেকট্রিক ট্রেন।

অপেরা হাউস : হারবার ব্রিজের স্থাপনা সংলগ্ন রয়েছে অপেরা হাউস। আধুনিক স্থাপত্য কলায় নির্মিত অপেরা হাউস নগরীর সাংস্কৃতিক বিনোদন কেন্দ্র। এ হারবার ব্রিজ ও সিডনি অপেরা হাউস দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসছেন। এক জরিপে দেখাগেছে হারবার ব্রিজ ও সিডনি অপেরা হাউস দেখতে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫ হাজার পর্যটক এখানে আসেন যা বিশ্বের পর্যটক পরিদর্শনে সর্বোচ্চ রেকর্ড বিশ্বের আর কোনো জায়গায় প্রতি ঘণ্টায় এত বিপুল পর্যটকের আগমন ঘটে বলে জানা নেই।

প্রশান্ত মহাসাগর হারবার ব্রিজ থেকে শিপে করে পর্যটকরা যাচ্ছেন প্রশান্ত মহাসাগরের সৈকতে। প্রতি আধ-ঘণ্টা পর পর শিপে করে পর্যটকরা যাচ্ছেন প্রশান্ত মহাসাগর সৈকত এলাকায় এবং কিছু সময় অতিবাহিত করে পুনরায় শিপে করে হারবার ব্রিজে ফিরে আসছেন। সিডনি সিটি ও সাব আরবান সিটি সিডনির প্রাণকেন্দ্র। সিডনি সিটি নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজধানী এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের প্রাণ কেন্দ্র। রানী ভিক্টোরিয়ার স্ট্যাচু সমেত প্রাসাদ রয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলসের গভর্নরের প্রাসাদ, আরও রয়েছে টাউন হল, রয়েছে সিডনি মেয়রের আবাস ও কার্যালয়। আরও রয়েছে সিডনি টাওয়ার যার ওপর থেকে সমগ্র সিডনি মহানগরীকে প্রত্যক্ষ করা যায়। রয়েছে সিডনি চার্চ, বিভিন্ন সুউচ্চ বাণিজ্যিক ভবন, হাইড পার্ক, বড় বড় শপিং মল, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। সিডনি সিটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১ হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত। ম্যাককোয়ারি ইউনিভার্সিটি ও সিডনি সিটি ও সিটির বাইরে ২টি ইউনিভার্সিটি রয়েছে। যেখানে বাংলাদেশি স্টুডেন্টরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছেন। ম্যাককোয়ারি ইউনিভার্সিটি সিডনি মহানগরীর গ্রায় ৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে অবস্থিত। এ ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি স্টুডেন্টরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে স্টুডেন্টরা এখানে কেউ মাস্টার্স করছেন কেউবা এমএস বা পিএইচডি করছেন আরও করছেন আন্ডার গ্রেড। সিডনির একমাত্র ম্যাককোয়ারি ইউনভার্সিটিতে রয়েছে একটি মসজিদ। ইউনিভার্সিটি মালিকানাধীন একটি বিল্ডিংয়ের। একটি কক্ষে এ মসজিদ যাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের স্টুডেন্টরা নামাজ আদায় করেন। ১৯৬০-এর দশকে নিউওয়েলস কর্তৃপক্ষ ম্যাককোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সিডনি নগরী প্রায় ৫ শতাংশ জায়গাজুড়ে ম্যাাককোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এর বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বাংলাদেশের কয়েক শত কৃতী শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন, আন্ডার গ্রেড, মাস্টারস, এমএস ও পিএইচডিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬টি ফ্যাকাল্টি রয়েছে যাতে ইঞ্জিনিয়ারিং, স্ট্যাটিস্টিকস, গণিত, অর্থনীতি, ফিন্যান্স, অ্যাকাউনটিং, পাবলিক হেলথ, বিবিএ, এমবিএ, ফার্মেসি, পরিবেশ বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনাদের সংখ্যাধিক্য। বিশ্ববিদ্যালয় হলসমূহ খেলার মাঠ, জিমনেশিয়াম, লাইব্রেরি ছাড়াও রয়েছে একটি বিশাল শপিংমল যাকে বলা হয় ম্যাককোয়ারি সেন্টার। এত বিশাল শপিং মল ব্রিটেন, আমেরিকা, ইউরোপে আমার চোখে পড়েনি। সিডনিতে অবস্থানরত আমার পুত্র আসিফ জহির গহন ও পুত্রবধূ মায়িশা তানজিন আনিকার সুহৃদ আমন্ত্রণে আমি ও আমার পত্নী দীনা আহসান হক ও একমাত্র কন্যা জয়ীতা ফাবলিহা জহির মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে ৮ মে ২০১৯ সিডনি পৌঁছি। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে দেখি আমার পুত্র ও পুত্রবধূ ফুলের তোড়া নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমার পুত্র সিডনির ম্যাককোয়ারি ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করছে। পুত্রবধূ এম আই এস এ মাস্টার্স করেছে এবং সেও একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। আমাদের সিডনি পৌঁছার পরবর্তী দিন থেকে শুরু হলো নিউ সাউথ ওয়েলস (যার রাজধানী সিডনি) বেড়ানো। প্রথম দিন শুক্রবার প্রথমেই হারবার ব্রিজ সংলগ্ন সমগ্র এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। দিনের চেয়ে রাতের হারবার এলাকা অপূর্ব রূপ ধারণ করে। হারবার ব্রিজ দিয়ে হাজার হাজার গাড়ি চলছে। ব্রিজের পাশ দিয়েও হাজার হাজার গাড়ি চলছে। ব্রিজের পাশ দিয়ে মেট্রোরেল চলছে। হারবার নদীতে পর্যটন শিপগুলো নানা রং মিশিয়ে আলো আঁধারে পর্যটক ফেরি করছে। হারবার ব্রিজের পাশে শিশু এমিউজমেন্ট পর্যটক শিশু, বয়স্কসহ নানা বয়সের পর্যটক আনন্দ মেলা দেখছে। আশপাশের রেস্টুরেন্টগুলোতে ঠাসা পর্যটক নানা ধরনের আপ্যায়ন করছে। হারবার ব্রিজ সংলগ্ন রয়েছে সিডনি অপেরা হাউস। আধুনিক নান্দনিক স্থাপত্যে নির্মিত সিডনি অপেরা দেখতে শত শত পর্যটক ভিড় করছে।

রুমাউন্টেন ও থ্রি সিস্টার্স ও সিডনি থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে সিডনির ঐতিহ্যবাহী পর্যটন স্থাপনা ব্লুমাউন্টেন ও থ্রি সিস্টার্স। এ বুমাউন্টেন ও থ্রি সিস্টার্স মনুমেন্ট সি লেভেল থেকে প্রায় ৩০০০ ফুট ওপরে অবস্থিত। রাতের আঁধারে এবং সূর্যের আলোতে ব্লুমাউন্টেনের বৃক্ষরাজিতে ছায়া পড়লে পুরো মাউন্টেনটি ব্লু আকার ধারণ করে এবং অপরূপ মায়াবী দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। মাউন্টেনের বিপরীত অংশে তিনটি পাহাড় কেটে ৩টি মানুষ আকৃতির মনুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে- যার নাম দেওয়া হয়েছে থ্রি সিস্টার্স। কথায় আছে এক জাদুকর সেখানকার ৩ বোনকে জাদু দিয়ে মেরে ফেলেছে। এ ৩ বোনের মানবিক স্মৃতি ধারণ করার জন্য পাহাড়ের বুক কেটে ৩টি মনুষ্য আকৃতি মনুমেন্ট বানানো হয়েছে যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ ফুট হবে। এ ৩টি মনুষ্য মনুমেন্টকে থ্রি সিস্টার্স নামে রূপায়ণ করা হয়েছে। ব্লু মাউন্টেন ও থ্রি সিস্টার্স দর্শন করতে দিনের বেলার চেয়ে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটক ভিড় জমায় সেখানে। রাতের বেলায় থ্রি সিস্টার্স ও ব্ল­ু মাউন্টেনে দূর থেকে আর্টিফিশিয়াল ফোকাস লাইট স্থাপন করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস কর্তৃপক্ষ পাহাড়ের বুক কেটে সমতল করে অল্পটুকু জায়গায় রেলিং দিয়েছে যেখান থেকে ব্লুু মাউন্টেন ও থ্রি সিস্টার্স প্রত্যক্ষ করা যায়। দিনের আলোর চেয়ে রাতের অন্ধকার থ্রি সিস্টার্স ও ব্লুু মাউন্টেনকে বেশি প্রাণবন্ত করে তোলে। মে-জুন মাসে সিডনির তাপমাত্রা কমে যায়। ফলে ব্লু মাউন্টেন শূন্য ডিগ্রির নিচে চলে যায়। তখন বরফে ব্লুু মাউন্টেন ঢেকে অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। রাতের অন্ধকারে আকাশের চাঁদটিকে মনে হয় ব্লুু মাউন্টেনের সঙ্গে সখ্য করতে নিচে নেমে আসে। চাঁদটিকে এত কাছে মনে হয় যেন হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। কথিত আছে ব্লুু মাউন্টেন এলাকায় সিডনির খ্যাতনামা লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীরা বসবাস করেন। এ এলাকায় কবি সাহিত্যিকরা তাদের লেখার উপজীব্য খুঁজে পান।

পামবিচ : নিউ সাউথ ওয়েলসের বিখ্যাত পামবিচ পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক পামবিচের নীলাভ পানির সৌন্দর্য উপভোগ করতে সেখানে যান। আমার বউমা মায়িশা সিডনি সিটি থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে আমাদের পামবিচে নিয়ে যায়। হাজার হাজার পর্যটক প্রতিদিন পামবিচে অবকাশ করে আবার সিডনি ফিরে আসে। কারণ সেখানে রাতে অবস্থান করার মতো হোটেল নেই। নিউ সাউথ ওয়েলস প্রশাসন পামবিচের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাতে এতটুকু ব্যাহত না হয় সেজন্য পামবিচ এলাকায় কোনো হোস্টেল গড়ে তুলেনি।

ওয়াইজ ম্যান ফেরি : ওয়াইজম্যান ফেরি স্থানটি একটি পর্যটক কেন্দ্র। সিডনিক থেকে দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে আমরা ওয়াইজম্যান ফেরিতে পৌঁছি। ওয়াইজ ম্যান স্থানটি পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত। প্যাসিফিক সাগরের কোল ঘেঁষে ওয়াইজ ম্যান ফেরি অবস্থিত। ওয়াইজ ম্যান ফেরিতে দাঁড়ালেই নিচে সাগরের ঢেউ প্রত্যক্ষ করা যায়। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সাগরের ঢেউয়ের মাঝে সি বোট অথবা পর্যটক তরীতে পর্যটকরা সাগরে ঘুরে বেড়ায়।

দি এন্ট্রান্স : সিডনি থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে এন্ট্রান্স অবস্থিত। সিডনি থেকে রওনা হয়ে আসিফ ও মায়িশা ভাগাভাগি করে গাড়ি চালিয়ে আমাদের এন্ট্রান্স নিয়ে যায়। সিডনি থেকে ৩০ কিলোমিটার অতিক্রম করার পরই পাহাড়। আর পাহারের গাঁ ঘেঁষে প্রায় ৫৩ কিলোমিটার রাস্তা গাড়ি চালানোর পর হাইওয়েতে পৌঁছায়। তারপর হাইওয়েতে দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে আসিফ এবং মায়িশা আমাদের এন্ট্রান্সে নিয়ে যায়। প্রায় ৩ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর সময় রাস্তায় চার পাশে কোনো বাড়িঘর মানুষজন লক্ষ্য করিনি। শুধু হাইওয়ে-সাবওয়ে আর রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি। রাজধানী সিডনি থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরত্বে সাব আরবান এলাকা হলেও প্রতিটি রাস্তার ক্রসিংয়ে। অসংখ্য ট্রাফিক সিগন্যাল দেখা গিয়েছে। এ এক অভিনব অভিজ্ঞতার ভ্রমণ।

এন্ট্রান্স পৌঁছানোর পর বিরাট পর্যটন এলাকা লক্ষ্য করলাম। এন্ট্রান্স তীর ঘেঁষে প্যাসিফিক ওশান। প্যাসিফিক ওশানের এ অংশেই জিব্রাল্টার এবং ইন্টারন্যাশনাল ডেডলাইন। এন্ট্রান্সের পাড়ে দাঁড়িয়ে প্যাসিফিকের নীল পানির সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করে অপরূপ মায়াবী অনুভূতিতে শিহরণ জাগে। শত শত পেলিক্যান পাখি আর সাগরের মাছগুলো তীরে এসে পর্যটকদের চোখের ক্ষিধে পরিপূরণ করে দিচ্ছে। স্থানটি পাহাড় সদৃশ্য হলেও সাগর কূল ঘেঁষে সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে প্রচুর রেস্টুরেন্ট আর ক্যাফে- যাতে পর্যটকরা অবস্থান করে চা কফি স্ন্যাকস্ ইত্যাদি উপভোগ করে থাকে।

ভিভিড লাইটিং : প্রতি বছর মে-জুন মাসে সিডনির হারবার ব্রিজ, অপেরা হাউস সিটি সেন্টারের সুরমা স্কাইস্কেপার্সগুলোতে ভিভিড লাইটিং প্রদর্শিত হয়। এ বছর ২৫ মে থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত এ ভিভিড লাইটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভিভিড লাইটিং এ সিডনি নগরীর হারবার ব্রিজ, অপেরা হাউসসহ বড় বড় বাণিজ্যিক ভবনগুলো নানা রঙের আলোক রশ্মি শো হয়। আলোক রশ্মিগুলো এক স্থান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় কিন্তু প্রতিটি স্থাপনায় ভিন্ন ভিন্ন রঙে আলোকিত হয়ে আলো ছড়ায়। প্রতি মিনিটে মিনিটে আলোক রশ্মির ভিন্নতা পরিবর্তিত হচ্ছে। যে কেউ ইচ্ছে করলে নিজের ইচ্ছেমতো নিজ দেশের পতাকার রঙে এ আলোক রশ্মি রং পরিবর্তন করতে পারে। প্রদর্শিত আলোক রশ্মিগুলোর প্রতিচ্ছবি হারবার নদীর অন্ধকার পানিতে ফোকাস হলে এক অপরূপ ছন্দময় দৃশ্যের সৃষ্টি হয় যা দেখে নগরবাসীসহ বিশ্ব পর্যটকবৃন্দ মোহময় আনন্দ উপভোগ করে থাকে। বিশ্ব ভ্রম্মান্ডে এমন আলোর প্রদর্শনী আর কোথাও হয় না বলে সিডনিবাসী দাবি করেন। এ আলোর প্রদর্শনী বিশ্বের সেরা আলোক প্রদর্শনী। বহুমাত্রিক ও নান্দনিক আলোক প্রদর্শনী উপভোগ করতে সিডনির বিভিন্ন সাব আরবানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক হারবার ব্রিজ ও সিডনি সিটিতে সমবেত হয়।

চালকবিহীন ট্রেন : সিডনি মহানগরীর বিভিন্ন রুটে বিশেষ করে পাতাল রেল পথে চলে চালকবিহীন ট্রেন। সিডনি মহানগরীর বিভিন্ন রুটে বিশেষ করে পাতাল রেলপথে চালকবিহীন ট্রেন একটি আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় বিষয়। প্রতিটি স্টেশনে প্রতি ৫ থেকে ১ মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন এসে স্টেশনে থামলে অটোমেটিক দরজা খুলে যাচ্ছে। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা প্রথমে নামে। যাত্রীরা নামার পর স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা ট্রেনে ওঠে। অত্যাধুনিক ইলেকট্রিক ট্রেন। যাত্রীরা বেইজমেন্ট ফ্লোর ছাড়াও দোতলা ফ্লোরে আসন গ্রহণ করে। দরজা বন্ধ হওয়ার পূর্বে একটি ঘোষণা করা হয়। যাত্রী নামা ওঠা ব্যতিত এক মুহূর্তের জন্যও বিলম্ব করে না চালকবিহীন ট্রেনগুলো। ট্রেনের কামরার ভিতরে পরবর্তী যে স্টেশনে ট্রেনটি থামবে তা ডিজিটাল ডিসপ্লে­ হয়। এ চালকবিহীন ট্রেন সিডনি নগরীকে এক অনন্য আকর্ষণ ও ঐতিহ্যর উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা ও সিডনি নগরীতে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ভারতীয়, লেবাননি, চীনা, মেক্সিকান, অধ্যুষিত এলাকা রয়েছে। বাংলাদেশি ও  পাকিস্তানি অধ্যুষিত এলাকাটির নাম লাকেম্বা। লাকেম্বাতে একটি রেল স্টেশন আছে। রেল স্টেশনের দক্ষিণ প্রান্তে পাকিস্তানি দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং উত্তর প্রান্তে বাংলাদেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো অবস্থিত। বংলাদেশি দোকানগুলোতে আখের রস থেকে শুরু করে পুঁটি মাছের চাপা শুঁটকি পর্যন্ত পাওয়া যায়। রয়েছে পদ্মার ইলিশ, ছোট বড় রুই মাছ, চিংড়ি মাছসহ রকমারি বাংলাদেশি খাবার পণ্য। রয়েছে খুশবো রেস্টুরেন্টসহ আরও কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। দক্ষিণ দিকে গেলে দেখা যাবে পাকিস্তানি লেবানিজ, মিক্সিকান, নেপালি, ভারতীয়সহ বিভিন্ন দেশের খাবার দোকান। এ এলাকা গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের নারী পুরুষ বিভিন্ন রকমারি খাবার উপভোগ করছে এবং গভীর রাত পর্যন্ত গ্রুপে গ্রুপে বসে গল্প করছে আর আড্ডা মারছে। সিডনি এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন ও সিডনি এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনে কোনো পুলিশ কাউন্টার, পুলিশ চেকিং ইত্যাদি কিছুই নেই। ইমিগ্রেশনে এসে নিজের পাসপোর্ট মেশিনে পাঞ্চ করলে ভেলিড ভিসা ধারীরা অটোমেটিক ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বহির্গমনে চলে আসে। অস্ট্রেলিয়া একটি বহুমাত্রিক দেশ। বিশেষ করে সিডনিতে পৃথিবীর বহুদেশের বংশোদ্ভূত মানুষ বাস করছে। সিডনির ইপিং (Epping) এলাকায় চীনা বংশোদ্ভূত নাগরিকদের আধিক্য চোখে পড়ার মতো। আবার সিডনি সিটিতে আশ্চর্যজনকভাবে নেপালি বংশো™ভূত মানুষের আধিক্য। তাছাড়া রয়েছে লেবানিজ, মেক্সিকান, ইউরোপীয়, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, ফিলিপাইন, থাই, মালয়েশীয়, হংকং, ভারতীয় ও বাংলাদেশি বংশো ভূত মানুষ। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখ করার মতো। অ্যাথনিক অস্ট্রেলিয়ানদের বলা হয় অ্যাব অরিজিন ABORIGIN) বা অস্ট্রেলিয়া বর্ণ অরিজিনাল। এ অ্যাব অরিজিনরাই সিডনির আদি বাসিন্দা। কিন্তু পুরো নিউ সাউথ ওয়েলস ঘুরে কদাচিত কয়েকশ অ্যাব অরিজিন ABORIGIN) এর দেখা পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

আধুনিক সংস্কৃতি, বহু বর্ণ, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের সমুজ্জ্বল উদাহরণ মাতৃসম সিডনি।

লেখক :  বিমানের সাবেক কর্মকর্তা

সর্বশেষ খবর