শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ক্রীড়া সাংবাদিক

মেসি-রোনালদোর সঙ্গে রেশমিন

জামশেদ আলম রনি

মেসি-রোনালদোর সঙ্গে রেশমিন

কথার জাদুতে তিনি সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। যেখানেই পা রেখেছেন এঁকেছেন সফলতার চিহ্ন। একাধারে সাংবাদিক, সংগীতশিল্পী, উপস্থাপিকা হিসেবে বাজিমাত করেছেন তিনি। বলছিলাম বাংলাদেশি বংশো ভূত ব্রিটিশ ক্রীড়া সাংবাদিক রেশমিন চৌধুরীর কথা। টানা তিনবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্র অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন তিনি। যা নিঃসন্দেহে তার ক্যারিয়ারে অনন্য অর্জন হয়ে থাকবে।

সর্বশেষ মোনাকোয় চ্যাম্পিয়নস লিগ ড্র অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ ব্রিটিশ ক্রীড়া সাংবাদিক রেশমিন। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়নস লিগ ড্রয়ের উপস্থাপনা করলেন তিনি। গত ২৯ আগস্ট রাতে মোনাকোর গ্রিমালদি ফোরামে মঞ্চ আলোকিত করে রেখেছিলেন রেশমিন। প্রাণবন্ত উপস্থাপনার সঙ্গে মেসি-রোনালদোকে কিছু প্রশ্নও করেছেন ৪১ বছর বয়সী এ সংবাদকর্মী। মঞ্চে ওঠার আগেই টুইটার বার্তায় নিজে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন রেশমিন, ‘আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ ড্র। আমি হ্যাটট্রিকের দোরগোড়ায়।’ উপস্থাপনা শেষেও ধন্যবাদ জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফাকে। রেশমিন টুইট করেন, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমাকে ফিরিয়ে আনা এবং উপস্থাপনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য উয়েফাকে ধন্যবাদ।’ কিছুদিন আগে ‘টকস্পোর্ট’-এ গেম ডে কভারেজের উপস্থাপিকা হিসেবে যোগ দেন রেশমিন।

এর আগে গত ২০১৭-১৮ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন লিগের ড্র অনুষ্ঠানে তার উপস্থাপনায় মুগ্ধ হয়েছেন লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, জিয়ানলুইজি বুফন, লুকা মডরিচ, লিকে মার্টেনসহ আরও অনেকেই।

উয়েফা সেরা স্ট্রাইকার রোনালদো, সেরা গোলরক্ষক বুফন, সেরা ডিফেন্ডার সার্জিও রামোস ও সেরা মিডফিল্ডার লুকা মডরিচসহ বর্ষসেরা নারী ফুটবলার লিকে মার্টেনের নাম রেশমিনের মুখেই ঘোষণা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে এসব তারকার সঙ্গে রেশমিনের কৌতুক ও খুনসুটিও করতে দেখে গেছে।

বিবিসি ও বিটি স্পোর্টসে রেশমিন একজন ক্রীড়া সাংবাদিক ও উপস্থাপিকা হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়াও তিনি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগ কাভার করে থাকেন।

একজন সফল ক্রীড়া সাংবাদিক রেশমিন চৌধুরীর জন্ম ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশি এক পরিবারে। বেড়ে উঠেছেন যুক্তরাজ্যেই। ইংল্যান্ডের ওডফোর্ড কাউন্টি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে শৈশব ও কৈশরের পাঠ শেষ করেন রেশমিন। এরপর ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০০৩ সালে হার্লো কলেজে সাংবাদিকতার ওপর স্নাতকোত্তর ডিপ্লে­ামা অর্জন করেন। শিক্ষার্থী

থাকার সময়েই রয়টার্স টিভির নিউজ হেল্প ডেস্ক অপারেটর হিসেবে তার কর্মজীবনের শুরু। আইটিভিতে প্রচারিত ব্রিটিশ জনপ্রিয় রিয়েলিটি গেম শো সারভাইব অনুষ্ঠানের কাজে তিনি পাপুয়া নিউগিনির বোর্নিও দ্বীপ ভ্রমণ করেন। এ ছাড়াও তিনি পেশাগত কাজে মাদাগাস্কার, গ্রিস, দুবাই, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া ভ্রমণ করেন।

বিবিসি, ব্লুমবার্গ ও আইটিএনে কাজ করার পর ২০০৮ সালে রেশমিন যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদ টিভিতে। পরের বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তখন প্রথম সাংবাদিক হিসেবে রোনালদোর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন রেশমিন। এরপর রিয়ালের চাকরি ছেড়ে বিবিসি স্পোর্টে যোগ দেন রেশমিন। এ ক্রীড়া সাংবাদিক লন্ডন অলিম্পিকেও কাভার করেছেন। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের জরিপকৃত শীর্ষ ক্ষমতাধর ৫০ নারী ক্রীড়া সাংবাদিকের তালিকায় ঠাঁই করে নেন রেশমিন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রেশমিন চৌধুরী ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হন। একই বছরের নভেম্বরে এশীয় ফুটবল অ্যাওয়ার্ডে মিডিয়া পুরস্কার জিতে নেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে রেশমিন দুই সন্তানের মা। স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন তিনি। তার পছন্দের ক্লাব টটেনহ্যাম। স্বাচ্ছন্দ্যভাবে বাংলা বলার পাশাপাশি স্প্যানিশ ও ফরাসি ভাষায়ও দক্ষতার সঙ্গে কথা বলতে পারেন তিনি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সংগীতশিল্পীও। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নেমসেক’ ছবিতে তার কণ্ঠে একটি গান রেকর্ড করা হয়। তার বাল্যকাল সম্পর্কে রেশমিন বলেন, অত্যন্ত স্বাধীনচেতা ও প্রগতিশীল বাঙালি মুসলিম পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। যেখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, সংগীত এসবের সংমিশ্রণে তার জীবনের ভীত গড়ে ওঠে।

সর্বশেষ খবর