শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুখ দিয়ে ছবি আঁকেন নওগাঁর মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

মুখ দিয়ে ছবি আঁকেন নওগাঁর মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম

হুইল চেয়ারে বসা। দুই পা পুরোপুরি অবশ। তবে মাথা ও মুখ খুব ব্যস্ত। মুখে তুলি। ঘাড় ঘুরিয়ে বার বার রং নিচ্ছেন আর ছবি আঁকছেন। হুইল চেয়ারের সঙ্গে বিশেষ উপায়ে লাগানো ক্যানভাসে গরু, গাছ, মানুষসহ বিভিন্ন ছবি আঁকছেন নওগাঁর মান্দার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। তবে সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধী ভাতা ও মায়ের বিধবা ভাতা দিয়ে কোনোরকমে চলছে তার সংসার। দুই পা সচল ছিল। পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। কাজ করতেন দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে। গত ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার কারণে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে পড়ে হারিয়েছেন দুই হাত, আর পঙ্গু হয়েছে তার পা দটি। এতে করে তার সব ওলট-পালট হয়ে গেল। লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ঘটল দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় তিনি হারিয়ে ফেলেন তার দুটি হাত। চিকিৎসার খরচ পল্লী বিদ্যুৎ নিলেও নেয়নি তার ভবিষ্যৎ জীবনের দায়িত্ব। তাই নিজ চেষ্টায় তিনি ছবি আঁকা শিখে নিজের কর্মকে সবার কাছে তুলে ধরেছেন। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নেন দীর্ঘ আট বছর।

হাত নেই, পঙ্গু হয়েছে দুই পা। তবে কি হয়েছে তাতে। তবুও মুখ দিয়ে এঁকে চলেছেন একমনে বিভিন্ন রকমের ছবি। কথাগুলো বলা হচ্ছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিমের। মুখ দিয়ে ছবি আঁকা প্রসঙ্গে ইব্রাহিম বলেন, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় সবার কাছে শুনেছেন লাভলী নামে একজন মুখ দিয়ে ছবি আঁকতেন। লাভলীর সঙ্গে তার কখনো দেখা হয়নি। লাভলীর গল্প শুনেই অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন, প্রথমদিকে ছবি আঁকতে বসলে মাথা ঘুরত। বমি করতাম। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবি আঁকতে পারতেন। বেশি ভালো লাগে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে। তবে বর্তমানে বেশি সময় ছবি আঁকতে পারেন না। একটানা ছবি আঁকলে গায়ে জ্বর আসে। শরীরের সার্বিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নেই। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়ির পুকুরপাড়ে বসে মুখের সাহায্যে পেনসিল ও রং-তুলি দিয়ে ছবি আঁকেন।

সর্বশেষ খবর