শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অনাথদের নিরাপদ ঠিকানা নীলফামারীর চাঁদমণি আশ্রম

আবুল বারী, নীলফামারী

অনাথদের নিরাপদ ঠিকানা নীলফামারীর চাঁদমণি আশ্রম

চাঁদমণি আশ্রম অনাথদের দিয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। বাবা-মায়ের আদর-ভালোবাসা। লেখাপড়ার সুযোগ। করেছে ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা। দিয়েছে জীবনের নিশ্চিত নিরাপত্তা। এই আশ্রমটি চালাচ্ছেন অবসর নেওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা মানব প্রেমের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত আলহাজ পিজিরুল আলম দুলাল। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের চাওড়াডাঙ্গী গ্রাম। তিস্তা প্রধান খালের কোল ঘেঁষে চাওড়াডাঙ্গী গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে চাঁদমণি আশ্রম। যেখানে আশ্রয় দেওয়া হয় অসহায় ও অনাথ বালিকাদের। আর এ চাঁদমণি এখন প্রায় ৫০ অসহায় ও অনাথ বালিকার ‘অন্ধের যষ্টি’। এখানে আশ্রয় নেওয়া বালিকাদের কারও বাবা নেই, কারও নেই মা। আবার কারও বাবা-মা কেউই নেই।

পিজিরুল আলম (দুলাল) নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চাওড়াডাঙ্গী বালাপাড়া গ্রামে একজন সাদামনের মানুষ। ছিলেন উত্তরা ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক। তার ঘরে কোনো সন্তান নেই।  পৈতৃকসূত্রে পাওয়া ১০ শতক জমিতে ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করে চাঁদমণি। এরপর থেকে এখানে আশ্রয় নেওয়া বালিকাদের মানুষের মতো মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করাটাই হয়ে যায় পিজিরুলের ধ্যানজ্ঞান। সে থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জনের মতো অনাথ চাঁদমণিতে থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে। এরপর কেউ চাকরি করছে আবার কেউ মনোযোগী হয়েছে সংসারে। এদের মধ্যে দুজন কৃতিত্বের সঙ্গে মাস্টার্স এবং ৬ জন অনার্স শেষ করেছেন।

চাঁদমণিতে বর্তমানে থাকছে ৫০ জন অনাথ। তাদের পেছনে প্রতিমাসে খরচ হয় ৭০ হাজার টাকার মতো। এর পুরোটাই বহন করছেন পিজিরুল আলম এবং তার আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীরা। চাঁদমণির সার্বিক বিষয় দেখভালের জন্য রয়েছেন দুজন পুরুষ শ্রমিক। রয়েছে দুজন নারী বাবুর্চিও। প্রতিষ্ঠানটি এখনো কোনো ধরনের সরকারি সহযোগিতা নেয়নি। কথা হয় চাঁদমণির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক পিজিরুল আলমের (দুলাল) সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে উত্তরা ব্যাংক থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তাকে স্ত্রী মোতাহারা আলম সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু ২০১০ সালে স্ত্রী মারা গেলে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন তিনি।

পিজিরুল আলম বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৭৫ বছর। আমার মৃত্যুর পরও যেন চাঁদমণি ভালোভাবে চলতে পারে এ জন্য ১১ সদস্য নিয়ে একটি পারিবারিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমার অবর্তমানে আমার ভাগ্নি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কণা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদা টুম্পা এর দেখভাল করবেন। চাঁদমণিকে আর্থিকভাবে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই পিজিরুল আলমের। বিশেষ করে বোন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মাসুদা বেগম, ভগ্নিপতি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আবদুল কাদের ও চাচাতো ভাই ডা. শামীমের সহযোগিতা তাকে এ কাজে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। একইসঙ্গে তিনিও বিনা শর্তে যে কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহযোগিতা নেন। চাঁদমণিতে পাকা টিনশেডের ১০টি রুমে বসবাস করেন অনাথ বালিকারা। যেখানে রয়েছে শোয়ারঘর, নামাজঘর, রান্নাঘর ও বাথরুম। খেলাধুলার জন্য পেছনে রয়েছে প্রশস্ত জায়গা। এখানে একটি বাউন্ডারি ওয়াল খুবই প্রয়োজন। লাইব্রেরি থাকলেও সেটি তেমন একটা সমৃদ্ধ নয়। সামান্য কিছু বই রয়েছে। সংগ্রহ শালায় পুরনো রেডিও, পালকি, গরুর গাড়ি, ঘানি ইত্যাদি রাখা হয়েছে। এ বছর ডিসেম্বরে হস্তশিল্প মেলার আয়োজন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চাঁদমণির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।

সর্বশেষ খবর