শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক

আবু আফজাল সালেহ

ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক

এই পার্কে আছে তথ্যকেন্দ্র, প্রাকৃতিক ঐতিহাসিক জাদুঘর এবং বিশ্রামাগার। প্রকৃতির সবুজ চাদরে মোড়ানো নির্জন উঁচু-নিচু টিলা, প্রবহমান ছড়া, হ্রদ, বিচিত্র গর্জনের মতো সুউচ্চ বৃক্ষ, চিরসবুজ বনের জানা-অজানা গাছ ও ভেষজ উদ্ভিদ-লতার অপূর্ব সমাহার ও ঘন আচ্ছাদনে গড়ে উঠেছে এ সাফারি পার্ক।

 

কক্সবাজার, দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত এখানে। ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে হিমছড়ি, ইনানি বিচ, সোনাদিয়া, মহেশখালি, রামু আর ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক। আজ জানব পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ডুলাহাজরা সাফারি পার্কটি সম্পর্কে।

 

সাফারি পার্ক হচ্ছে বন্য পশু-পাখির অভয়াশ্রম। চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণীরা থাকে বন্দী ও মানুষ থাকে খোলা অবস্থায়। সাফারি পার্কে মানুষ থাকে বন্দী আর বন্যপ্রাণীরা থাকবে খোলা অবস্থায়। এই তত্ত্বে নির্মিত হয়ে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাফারি পার্ক। আমাদের দেশেও তেমনি সাফারি পার্ক রয়েছে। যদিও আমাদের দেশে সাফারি পার্কের সংখ্যা একেবারেই কম। কিন্তু যেগুলো আছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম কক্সবাজারের এই  ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি কক্সবাজার জেলা। বন, সাগর, পাহাড়, নদী, ঝরনা নিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। পৃথিবীর কোথাও এরকম সমন্বয়ের শহর নেই বললেই চলে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক  বৈচিত্র্যে ভরপুর এ জেলা। আছে সাংস্কৃতিক বিচিত্রতা। এ জেলার চকরিয়া উপজেলায়ই ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক। এটি ‘ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক’ নামেও পরিচিত। নান্দনিক ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বুনো জীবজন্তুর সমাহারে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ভিড় করছেন অগণিত দেশি-বিদেশি পর্যটক।

 

ডুলাহাজরা সাফারি পার্কটি কক্সবাজার জেলা সদর থেকে ৪৮ কিলোমিটার উত্তরে এবং চকরিয়া থানা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার জেলা সদরের দক্ষিণ বন বিভাগের ফাসিয়াখালি রেঞ্জের ডুলাহাজরা ব্লকে অবস্থিত। মূলত হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় পার্কটি প্রতিষ্ঠিত করেছিল। বর্তমানে পার্কটি অসংখ্য দেশি বিদেশি বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। এই সাফারি পার্কটি ৬০০ হেক্টর এলাকায় বিস্তৃত। যদিও স্থানীয়রা পার্কটিকে কেউ কেউ সাফারি পার্ক বলতে রাজি নন, কারণ এখানে প্রাকৃতিক অবকাঠামোর বদলে অত্যাধুনিক ও কৃত্রিম অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে বেশি। বাংলাদেশ বন বিভাগের তথ্যমতে, পার্কটিতে বছরে প্রায় ১,০০,০০০ পর্যটক ঘুরে বেড়াতে আসেন।

 

পার্কটির প্রধান ফটকের বাম পাশে রয়েছে ডিসপ্লে ম্যাপ। বেষ্টনীর ভিতরেই বাঘ, সিংহ ও তৃণভোজী প্রাণীর বিচরণ। এরা পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করছে। বেষ্টনীর ভিতরেই প্রাণীগুলো থাকায় সাফারি পার্ক হিসেবে মেনে নেন না অনেকেই। তারপরও প্রাণিবৈচিত্র্যের অপার সৌন্দর্য আপনাকে মোহিত করবেই। অনায়াসে বাঘ-সিংহসহ অন্যান্য প্রাণী পর্যবেক্ষণ করার জন্য রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। যে কেউ চাইলেই বাসে করে ঘুরে ঘুরে পুরো পার্ক দেখতে  পারছেন। এ পার্কে তথ্য শিক্ষা কেন্দ্র, প্রাকৃতিক ঐতিহাসিক জাদুঘর এবং বিশ্রামাগার রয়েছে। প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত নির্জন উঁচু-নিচু টিলা, প্রবহমান ছড়া, হ্রদ, বিচিত্র গর্জনের মতো সুউচ্চ ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক বৃক্ষ, চিরসবুজ বনের জানা-অজানা গাছ-গাছালি, ফল-ভেষজ উদ্ভিদ-লতার অপূর্ব সমাহার ও ঘন আচ্ছাদনে গড়ে উঠেছে এ সাফারি পার্ক। ছায়াঘেরা পথ, সবুজ বনানী, জানা-অজানা গাছের সারি, পাখি আর বানরের কিচিরমিচির সবকিছু মিলিয়ে যেন এক অসাধারণ অনুভূতি।

 

অস্বচ্ছ জলে জলহস্তীর মুখ উঁচিয়ে থাকা বা বেষ্টনীর ভিতর বাঘের হালুম, হাজার পাখির কিচিরমিচির মুগ্ধ করবেই। কিছুদিন আগে যোগ হওয়া জেব্রার দল, বুনোহাতির বিচরণ ও বানরের দুষ্টামি প্রাকৃতিক পরিবেশ পাবেন। মনে হতে পারে চ্যানেলে সাফারি পার্ক দেখছেন। ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক মূলত হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ পার্কে স্বাদু পানির কুমির যেমন আছে, তেমনি আছে লোনা পানির কুমিরও। এখানে বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে জেব্রা, বাঘ, সিংহ, হাতি, ভালুক, গয়াল, জলহস্তী, মায়া হরিণ, সাম্বা হরিণ, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণসহ পাখ-পাখালির সমাহার। পথের ধারে উঁচু ওয়াচ টাওয়ারে উঠে যে কেউ দেখতে পারবেন পুরো পার্কের সীমানা পর্যন্ত। উপভোগ করতে পারবেন অপার সৌন্দর্য।

 

পার্কজুড়েই রয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য। আছে পার্কের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। ভিতরে রয়েছে দর্শনীয় বাংলো। দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ ফি ২০ টাকা। আর শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা ও বিদেশিদের জন্য ৫০ টাকা। রয়েছে ২০ টাকায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।

 

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী সৌদিয়া, এস আলম, গ্রিনলাইন, হানিফ, শ্যামলী প্রভৃতি পরিবহনে সরাসরি ডুলাহাজরা সাফারি পার্কের সামনে নামতে পারবেন। শ্রেণিভেদে বাসগুলোর প্রতি সিটের ভাড়া জনপ্রতি ৮০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে ট্রেনে ভ্রমণ করতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশন হতে সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, চট্টগ্রাম মেইলে চট্টগ্রাম যাত্রা করতে পারেন। এরপর নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে কক্সবাজার যাওয়া যাবে। বা আগেই ডুলাহাজরা পার্কের রাস্তায় নেমে যেতে পারেন। বিভিন্ন ধরন ও মানের বাসে ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে আসতে পারবেন। এছাড়া কক্সবাজার এসে সিএনজি, মাইক্রো কিংবা লোকাল বাসে চড়ে অনায়াসেই ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে যেতে পারবেন।

 

থাকা ও খাওয়া

থাকা ও খাওয়ার জন্য কক্সবাজারই বেটার। কক্সবাজারের বিভিন্ন বিচ হতে উত্তরে পার্কটির দূরত্ব ৪০-৪৫ কিলোমিটার। এখানে নানা মান ও দামের আবাসিক হোটেল ও খাওয়ার সুবিধা পাবেন। চকরিয়া হতে দক্ষিণে ৭-৮ কিলোমিটার। তাই একেবারেই কাছের চকরিয়ায়ও থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। লম্বা ছুটির দিনে বা বিশেষ দিনগুলোতে প্রচন্ড রকমের ভিড় থাকে। তাই আগে থেকেই হোটেল ও বাসের বুকিং দিয়ে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর