শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রবাসের মুখ

সিঙ্গাপুরের হিরো বাংলাদেশের রাজীব

শনিবারের সকাল ডেস্ক

সিঙ্গাপুরের হিরো বাংলাদেশের রাজীব

সিঙ্গাপুরে টাউন কাউন্সিলে ৯ বছর ধরে কাজ করছেন রাজীব। তার সততার খবর প্রকাশ করে স্থানীয় কিছু পত্রিকা তাকে হিরো বলে শিরোনাম করেছে

শরীয়তপুরের যুবক রাজীব। সিঙ্গাপুরে টাউন কাউন্সিলে ৯ বছর ধরে কাজ করছেন। কাজে যাওয়ার সময় ১০ হাজার ডলারসহ একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পান তিনি। সেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য দিনের পর দিন খুঁজে বেড়িয়েছেন সত্যিকারের মালিককে। মায়ের চিকিৎসার জন্য এই টাকা সংগ্রহ করেছিলেন প্রকৃত যুবক। টাকা হারিয়ে তিনি ছিলেন পাগলপ্রায়। বাংলাদেশি রাজীব সেই টাকা পৌঁছে দেন। এ ঘটনায় তিনি পেয়েছেন সততার সার্টিফিকেট। পত্রিকায় তাকে বলা হলো সিঙ্গাপুরের হিরো...

 

 

সিঙ্গাপুরে সততার পরিচয় দিয়ে রীতিমতো হিরো হয়ে উঠেছেন এক বাংলাদেশি যুবক। সেখানকার কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে তাকে নিয়ে ছাপা হয়েছে খবর। সেই যুবকের নাম রহমত উল্লাহ রাজীব। তার বাড়ি বাংলাদেশের শরীয়তপুরে। তার বাবার নাম আবদুল মোতালেব মোল্লা। সিঙ্গাপুরে টাউন কাউন্সিলে ৯ বছর ধরে কাজ করছেন রাজীব। কয়েক মাস আগের ঘটনা। সিঙ্গাপুরে কাজের সাইটে কার পার্কে ১০ হাজার ডলার মানিব্যাগসহ কুড়িয়ে পান। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি ৬ লাখ টাকার উপরে। টাকাগুলো পেয়ে প্রথমে রাজীব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তিনি টাকাগুলো তার প্রকৃত মালিককে ফেরত দেবেন। এর জন্য তিনি কার পার্কে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। কিন্তু মালিকের সাক্ষাৎ পেলেন না। পরে রাজীব টাকা নিয়েই বাসায় চলে যান। বাসায় এসে অপেক্ষা করেন প্রকৃত মালিক হয়তো টাকার খোঁজে এসে তার কথা জানতে পারবেন এবং ফোন দেবেন। কিন্তু কারও কল আসে না। মালিকের কাছে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে সময় পার করতে থাকেন। এরপর দুই দিন সময় করে কার পার্কে মালিকের সন্ধানে এসে বসে থাকেন। কিন্তু কারও দেখা পান না। উপায়হীন হয়ে অফিসে বসকে টাকা পাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন। বস সব শুনে অবাক হয়ে বলেন, এতগুলো টাকা তুমি কেন ফেরত দিতে চাও? নিজের কাছেই রেখে দাও। কিন্তু রাজীব নাছোড়বান্দা।  তিনি মালিকের কাছে টাকা ফেরত দেবেনই। বস রাজীবকে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে হাজির হন। পুলিশও সব শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। রাজীবের ১০ মাসের বেতনের সমান এই টাকা। একজন মানুষের এমন সততায় পুলিশ অফিসারও অভিভূত। পুলিশের সহায়তায় টাকার মালিকের বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পুলিশের কাছে সব শুনে মহিলা বলেন, ‘এই টাকা তার ভাই সংগ্রহ করেছিল তার মায়ের চিকিৎসা করানোর জন্য। টাকা হারানোর পর ভাই আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। ভাই ভেবেছে আমি তার টাকা চুরি করেছি। শুধু এই টাকার জন্য ভাই বোন একে অপরের শত্রু হয়েছি।’ মহিলার কথা শুনে রাজীব নিজেই আনন্দে কেঁদে ফেলেন। পরেরদিন টাকার মালিক পুলিশ স্টেশনে এসে টাকা সংগ্রহ করে রাজীবের বসকে কল করেন। রাজীবের বস রাজীবকে সঙ্গে করে পুলিশ স্টেশন হাজির হন। টাকার মালিক রাজীবকে জড়িয়ে কেঁদেই ফেলেন। রাজীবের সততার পুরস্কার স্বরূপ টাউন কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সততার সার্টিফিকেট তুলে দেন সিনিয়র স্টেট মিনিস্টার হেং চি হাউ। রাজীব বলেন, ‘আমি এই যে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলাম এটাই আমার জীবনের সেরা অর্জন। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই আমি অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। এর আগেও আমি একজনকে ৫০ গ্রাম  সোনা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তখন সে সোনার মালিক তার হারানো সম্পত্তি ফিরে পেয়ে আনন্দে কেঁদেই ফেলেছিলেন। এই যে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারছি এটাই আমার জীবনের সেরা পাওয়া। প্রবাসে আমরা একেকজন প্রবাসী একেকটা বাংলাদেশ। কেউ খারাপ কিছু করলে তার সব দায়ভার বাংলাদেশের সবার হয় আর ভালো কিছু করলেই পুরো দেশ ও জাতির সুনাম হয়।’

সর্বশেষ খবর