শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্বজয়ী অণুজীব বিজ্ঞানী সমীর সাহা

শনিবারের সকাল ডেস্ক

বিশ্বজয়ী অণুজীব বিজ্ঞানী সমীর সাহা

বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার রোগ ছড়ানোর কৌশল নিয়ে গবেষণা করে ড. সমীর কুমার বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তাঁর এ গবেষণার ফলে বিশেষ কিছু রোগের টিকা আবিষ্কারের পথ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। উল্লেখযোগ্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিস; যা মারাত্মক প্রভাব ফেলে শিশুস্বাস্থ্যে। হ্যামিফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্যালমনেল্লা, প্যারটাইফির মতো জীবাণু নিয়েই তাঁর গবেষণা চলছে...

 

বাংলাদেশের অণুজীব বিজ্ঞানী অধ্যাপক সমীর কুমার সাহা। আন্তর্জাতিক পরিম-লে আলোচনায় আসেন ২০১৭ সালে ইউনেস্কোর কার্লোস জে ফিনলে পুরস্কার জিতে। ১৯৭৮ সাল থেকে দেওয়া হচ্ছে এ পুরস্কার। ২৯ বছরের পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে এ উপমহাদেশ তো বটেই, এশিয়ার কোনো দেশের বিজ্ঞানীর নামও নেই। যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডার বাইরে এ পুরস্কার আগে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার রোগ ছড়ানোর কৌশল নিয়ে গবেষণা করে ড. সমীর কুমার বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তাঁর এ গবেষণার ফলে বিশেষ কিছু রোগের টিকা আবিষ্কারের পথ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। উল্লেখযোগ্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিস; যা মারাত্মক প্রভাব ফেলে শিশুস্বাস্থ্যে। হ্যামিফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্যালমনেল্লা, প্যারটাইফির মতো জীবাণু নিয়েই তাঁর গবেষণা চলছে। অণুজীব বিজ্ঞানী সমীর সাহার কয়েক দশক ধরে গবেষণা শিশুদের প্রাণসংহারী রোগের জীবাণু নিয়ে। বাংলাদেশে কোনো কোনো ধরনের নিও মোকাস নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিসের কারণ ২০ বছরের গবেষণায় ধরা পড়ল তাঁর অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে। তাঁর পথচলা সহজ ছিল না। সাল ১৯৮৩। শিশু হাসপাতালের রোগবিদ্যা বিভাগের বারান্দায় হয় এর যাত্রা। যখন যোগ দিয়েছিলেন তখন একটি মাত্র ঘর ছিল। এখন পরিসর বেড়েছে, জীবাণু নিয়ে গবেষণা বা জীবাণু শনাক্ত করার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি যোগ হয়েছে। কম্পিউটারে জীবাণুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও সংরক্ষণের সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের একটি গবেষণাগারের তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের গবেষণাগারের তথ্যভান্ডার যেমন ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে তেমন তারাও এ দেশের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করতে পারছেন। ব্যবসায়ী চন্দ্রকান্ত সাহা ও গৃহিণী দুলানী প্রভা সাহার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের একজন সমীর সাহা। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মনমোহনী হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও চাঁদপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে অণুজীব বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন সমীর সাহা। এর পরই যোগ দেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের এই গবেষণাগারে। ১৯৮৯ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ভারতের বেনারসে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স থেকে। ভারত থেকে ফিরে যোগ দেন শিশু হাসপাতালের গবেষণাগারে। তারপর ঠিক করলেন, শিশুমৃত্যুর হার বেশি এমন রোগের জীবাণু নিয়ে কাজ করবেন। সেই থেকে জীবাণুর তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান তিনি।

দীর্ঘ গবেষণা জীবনে অণুজীব বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নালগুলোয় ১৫০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে সমীর সাহার। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, এডিনবরা ইউনিভার্সিটি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে কাজ করছেন নিয়মিত। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বপ্নসারথি ড. সমীর মনে করেন সম্পদের সীমাবদ্ধতা নয়, বরং কর্মপদ্ধতিতেই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। তিনি মনে করেন, তাঁদের গবেষণার সবচেয়ে বড় সফলতা নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিস রোগের জীবাণু সঠিকভাবে শনাক্ত করা। এই শনাক্তকরণ সাহায্য করে সঠিক টিকা আনতে।

ইউনেস্কোর কার্লোস জে ফিনলে পুরস্কার ছাড়াও অণুজীব বিজ্ঞানের প্রায়োগিক চিকিৎসার (ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি) গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি-স্বরূপ ২০১৭ সালে আমেরিকান সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর