শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দৃষ্টিনন্দন আরব আমিরাত

মুহাম্মদ সেলিম, আরব আমিরাত থেকে ফিরে

দৃষ্টিনন্দন আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সম্পদশালী দেশ। যাকে সবাই আরব আমিরাত হিসেবেই বেশি চেনেন। এ দেশের জীবনযাত্রার মান অনেক ক্ষেত্রে ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে অনেক আগে। এ দেশের প্রতিটি রাজ্যেই রয়েছে যেমন দৃষ্টিনন্দন ও গগনচুম্বী ভবন, তেমনি রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান, কৃত্রিম দ্বীপ, সাদা বালির সৈকতসহ কেনাকাটার জন্য বিলাসবহুল শপিং মল। যার কারণে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসেন লাখ লাখ পর্যটক। আমিরাতের দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

 

কোরআন পার্ক

ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনে উল্লিখিত বিভিন্ন উদ্ভিদ ও অলৌকিক মহিমা সব ঘটনার সমাহার যেন এক পার্কেই। অসাধারণ শিল্পকর্ম, কারুকাজ ও শৈল্পিক নকশায় তুলে ধরা হয়েছে সব কিছু। পার্কে প্রবেশ করলেই দর্শন মিলবে পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত সব উদ্ভিদের। যাতে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে যে কারও। যে কোনো ধর্মের অনুসারীর। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থিত অসাধারণ পার্কটি। যার নাম দেওয়া হয়েছে কোরআন পার্ক। দুবাইয়ের আল খাওয়ানিজ অঞ্চলের ৬০ হেক্টর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে কোরআন পার্ক। পার্কটি তৈরি করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা গাছ-গাছালি এবং উল্লিখিত অলৌকিক ঘটনাবলির চিত্রায়ণের মাধ্যমে। পার্কের কাচ হাউসটিই পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ করে। এ কাচ হাউসে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত ২৯ প্রজাতির সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এসব উদ্ভিদ বিশেষ তাপমাত্রা ও পরিবেশগত বিশেষ নির্ণায়ক যন্ত্রের অধীনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক উদ্ভিদের পাশেই মার্বেল পাথরে খোদাই করা রয়েছে উদ্ভিদের নাম ও কোরআনের আয়াত। যা ইংরেজিতে অনুবাদ করা রয়েছে। এ ছাড়া পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা মোট ৫৪টি উদ্ভিদের প্রায় সব এ পার্কে রয়েছে। পার্কটির আরেক আকর্ষণ হচ্ছে ‘অলৌকিক গুহা’। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত গুহার আদলে এটি সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে। দর্শনার্থীরা এই গুহায় পবিত্র কোরআনের অলৌকিক ঘটনাবলির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। পার্কটিতে সৌর প্যানেল, ওয়াই-ফাই সিস্টেম, ফোনের চার্জিং স্টেশন পাশাপাশি রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য ছায়াযুক্ত আসন। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফটক, প্রশাসনিক ভবন, বাগান, শিশু কর্নার, আউটডোর থিয়েটার, ঝরনা, মরূদ্যান, লেক, রানিং ট্রেক, সাইকেল ট্রেকসহ নানা ধরনের আয়োজন।

 

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ

আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির অন্যতম পর্যটক মুখর স্পটের মধ্যে একটি শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। প্রতি দিনই হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণ মুখরিত থাকে দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদের আঙ্গিনা। শুধু মুসলিম নয় অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও প্রতিদিন ছুটে আসেন এ মসজিদটিকে এক নজর দেখতে। ৩০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা মসজিদটি অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের অনন্য নিদর্শন। এ মসজিদে এক সঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের অভ্যন্তরে সোনা, মোজাইক, টাইলস, কাচ এবং প্রচুর মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। বাইরের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে শ্বেতপাথর দিয়ে। মসজিদের কিবলার দেয়াল সাজানো হয়েছে আল্লাহর ৯৯ নাম খচিত অসাধারণ কারুকার্য দিয়ে। অত্যাধুনিক এ মসজিদে নারী ও পুরুষের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথকভাবে নামাজ আদায়ের সুযোগ। মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে অত্যাধুনিক অজুখানা ও শৌচাগার। যাতে গরম ও ঠান্ডা দুই ধরনের পানির ব্যবস্থা রয়েছে। বাইরে চারদিকে ফোয়ারা, ফুল ও খেজুরসহ বিভিন্ন গাছের সারিতে মনোরম পরিবেশ। সবুজের সমারোহে ঘেরা গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গার পাশাপাশি বেজমেন্টেও গাড়ি রাখা যায়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সব ধর্মের অনুসারীদের সুযোগ রয়েছে মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশের। তবে সব নারী মসজিদ কম্পাউন্ডে প্রবেশের আগে মসজিদ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পড়িয়ে দেওয়া হয় বিশেষ ধরনের বোরকা।

 

মিরাকল গার্ডেন

দুবাই মিরাকল গার্ডেন যেন এক ফুলের রাজ্য। পার্কে প্রবেশের মুখ থেকে শুরু করে পুরো পার্কজুড়েই রয়েছে হাজার হাজার প্রজাতির ফুল। কী নেই এ পার্কে। ফুল দিয়ে তৈরি মানুষের অবয়ব, ঘোড়া, বিড়াল, হাতি, গাছ! এমনকি বিমানও তৈরি করা হয়েছে হাজার প্রজাতির ফুল দিয়ে! এ পার্ক যে এক ফুলের সাম্রাজ্য। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসা পর্যটকদের অন্যতম জনপ্রিয় স্পটের একটি দুবাই মিরাকল গার্ডেন।

পৃথিবীর সব চেয়ে বৃহৎ ফুল থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রতম ফুল সবই রয়েছে এ মিরাকল গার্ডেনে। এক বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফুল বেষ্টিত গার্ডেনটি এরই মধ্যে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ফুলের বাগান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে ১ লাখ ৯ হাজারেরও বেশি প্রজাতির ফুল রয়েছে এ বাগানে। গার্ডেনটি প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে । জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বন্ধ থাকে।

 

বুর্জ আল আরব

আরব আমিরাতের আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় স্থানের আরেকটি দুবাইয়ের বুর্জ আল আরব। বিশ্বের অন্যতম সু উচ্চতার হোটেলগুলোর একটি। বুর্জ আল আরব একটি সাত তারকা মানের হোটেল। যা নির্মাণে ব্যয় হয় ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সমুদ্র তীর থেকে ২৮০ মিটার গভীরে কৃত্রিম দ্বীপের ওপর নির্মাণ করা হয় বুর্জ আল আরব। আরবের পুরনো পালতোলা জাহাজের কাঠামোর অনুকরণেই বানানো হয়েছে বিলাসবহুল এ হোটেলটি। হোটেলটির ৮৭ হাজার বর্গফুট রয়েছে ২২ ক্যারেট সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো, ৭২ হাজার মিটারজুড়ে রয়েছে ৩০ ধরনের পাথর ও মার্বেল দিয়ে ঢাকা।  হোটেলের প্রতিটা ফ্লোরে রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। রিমোট কন্ট্রোলে চলে এ হোটেলের স্যুটের ভিতরের দরজা ও জানালার পর্দা খোলার কাজ। বুর্জ আল আরবের অত্যাধুনিক রাজকীয় অন্দরসজ্জা, দৃষ্টিনন্দন অ্যাকুরিয়াম এবং চমৎকার ইন্টেরিয়র ডিজাইন অন্য অনুভূতির শিহরণ  দেবে যে কোনো ব্যক্তিকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর