শিরোনাম
শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিশ্বজুড়ে

ইতিহাসের প্রথম সৌদি নারী রেসার রিমা

শনিবারের সকাল ডেস্ক

ইতিহাসের প্রথম সৌদি নারী রেসার রিমা

মরুর রক্ষণশীল ইসলামী দেশ সৌদি আরবের কার রেসিং কোর্সে প্রথম নারী রেসার হিসেবে ইতিহাস গড়েন রিমা জুফালি নামের সে দেশীয় এক তরুণী। কয়েক বছর আগেও দেশটিতে এমন ঘটনা ছিল রীতিমতো অকল্পনীয়। তবে দেশটির প্রতাপশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বহুল আলোচিত আধুনিক সৌদি আরব কর্মসূচির কল্যাণে তা সম্ভব হয়েছে।

 

২৪ জুন রাতে রিয়াদের রাস্তায় সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস। কয়েক দশকের বাধা অতিক্রম করে ছুটে চলে গাড়ি, যার স্টিয়ারিং ছিল এক নারীর হাতে। কিন্তু শুধু ব্যক্তিগত গাড়িই নয়। তারা এখন চালাচ্ছেন রেসিং কারও। কয়েক মাস আগেই সৌদির এই নারী দেশের মধ্যেই রেসিং কার চালিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয় জাগুয়ার আই-পিএসিই ই-ট্রফি রেস। আর এখানেই সৌদি নারী হিসেবে এই প্রথম কার রেসিংয়ে অংশ নিয়ে ইতিহাস গড়েন ২৭ বছর বয়সী নারী রিমা জুফালি। কয়েক বছর আগে সৌদি আরবে খুবই অকল্পনীয় একটি বিষয় ছিল, নারীরা গাড়ি চালাচ্ছে। সেই অকল্পনীয় ধারণা ভেঙে সৌদির বিভিন্ন রাস্তায় শাঁ শাঁ করে গাড়ি চালাচ্ছেন সৌদি নারীরা। বিশ্বে একমাত্র সৌদি আরবেই মেয়েদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ ছিল। যে নিষেধাজ্ঞা উঠে  গেছে গত বছর। যে দেশে এত দিন পর্যন্ত মেয়েদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ ছিল, সে দেশেরই এক মেয়ে এবার রেসিং কার চালিয়ে তাক লাগিয়ে দেন।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, মেয়েদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। এর পরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার জন্য ভিড় জমায় সৌদি নারীরা। ২০১৮ সালের ২৪ জুন মধ্য রাত হতে উঠে যায় নারীদের গাড়ি চালানোতে কয়েক দশকের নিষেধাজ্ঞা। স্টিয়ারিং হাতে রাস্তায় নামেন নারীরা। সেই ধারাবাহিকতায় রেসিং কারে উঠে বসেন রিমা আল জুফালি।

জুনে লাইসেন্স পাওয়ার পর অক্টোবরেই প্রথম রেসে অংশ  নেন রিমা। ২৭ বছর বয়সী রিমার বসবাস জেদ্দাতে। সেখানেই বড় হয়েছেন। কলেজে পড়ার সময়েই ফর্মুলা ওয়ানের অনুরাগী হয়ে উঠেছিলেন রিমা। তার পর রেসিং কার লাইসেন্সের জন্য আবেদন। ফর্মুলা কার রেসিং স্কুলে ট্রেনিংও নিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করেছেন।

জুফালি বলেন, আমি কখনই ভাবিনি পেশাদার রেসার হিসেবে অংশ নেব। আমি যে কাজটি করছি তা সত্যিই খুব অসাধারণ। জুফালি গত জুনে লাইসেন্স পাওয়ার পর অক্টোবরে প্রথম রেসে অংশ নেন। কলেজে পড়তে পড়তেই ফর্মুলা ওয়ানের প্রতি ঝোঁক বাড়ে তাঁর। তারপর রেসিং কার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। তিনি জানান, শুধু গাড়ি চালানোই নয়, কার রেসিংয়েও যে সৌদির মেয়েরা কারও চেয়ে কম নন, তা প্রমাণ করতেই তাঁর এই পদক্ষেপ।

রিমা বলেন, ‘যখন আমি অনার্স শেষ করলাম, তখন একটি স্কুলে ফর্মুলা কারের তিন দিন মেয়াদি একটি কোর্সে ভর্তি হই। এটি ছিল চোখজুড়ানো, মন ঠান্ডা করা একটি অভিজ্ঞতা। সে সময়ই আমি প্রথমবারের মতো একটি রেসিং কারের মধ্যে বসি এবং তা চালাই।’ জিটি-৮৬ কার দিয়ে প্রথম রেসিং শুরু করেন তিনি। সিঙ্গেল সিটারে রেস করেছেন। রিমার মতে, সবকিছুই কেমন যেন দ্রুতই হয়ে যাচ্ছে। রিমা আরও জানান, রেসিং প্রতিযোগিতায় তাঁর অংশ নেওয়ার পথটি এতটা মসৃণ ছিল না। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য পরিবারকে চার বছর ধরে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছেন তিনি। প্রথমে তো গাড়ি চালানোরই অনুমতি ছিল না দেশে। পরে সৌদি যুবরাজের সংস্কার প্রক্রিয়ায় নারীদের গাড়ি চালানোর বিষয়টি অনুমোদন পেলে লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে অনেকখানি এগিয়ে যান রিমা। এ ব্যাপারে রিমা বলেন, যতজন তাঁর কাজের বিরোধিতা করেছেন, তার দশ গুণ মানুষ তাঁর সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন।

গত ডিসেম্বরে জিতেছেন একটি রেসেও। ফলে নতুন উদ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর রেসিং। তাঁর এ সাফল্যে এগিয়ে আসতে চাইছেন আরও অনেক সৌদি নারী। যখন পুরুষরা তাঁকে রেসিং কার চালাতে দেখেন, তখন তাঁদের কী রকম প্রতিক্রিয়া হয়, জানতে চাইলে রিমা বলেন, প্রতিক্রিয়া খুবই ইন্টারেস্টিং।

সর্বশেষ খবর