শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
পার্শ্ব রচনা

সোনাজয়ীদের গল্প

শনিবারের সকাল ডেস্ক

সোনাজয়ীদের গল্প

১৯টি সোনা, ৩৩টি রুপা, ৯০টি  ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪২টি পদক জিতে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের ত্রয়োদশতম আসর শেষ করল বাংলাদেশ। ১৯টি সোনা জিতে এস এ গেমসে নিজেদের ইতিহাসে সেরা সাফল্য তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি ১০টি স্বর্ণ পদক এবার বাংলাদেশ পেয়েছে আরচারি থেকে। তবে, সাঁতার ও শুটিং থেকে হারিয়েছে স্বর্ণ পদক।

চলতি সাউথ এশিয়ান (এস এ) গেমসে সোনা জয়ের শুরুটা হয় রাঙামাটির ছেলে দীপু চাকমার হাত ধরে। এরপর নবম দিনে এসে ১৯টি সোনা জয়ের গল্প লিখে নতুন উচ্চতায় উঠে বাংলাদেশ।

এস এ গেমসের ইতিহাসে এবারই রেকর্ড সর্বোচ্চ সোনা জিতেছে বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। এর আগে ২০১০ সালে দেশের মাটিতে আয়োজিত এই আসরে ১৮টি সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। দেশের বাইরে নিজেদের ইতিহাসে এত সোনা জয় এবারই প্রথম। এর আগে বিদেশের মাটিতে ১৯৯৫ সালে মাদ্রাজ এস এ গেমসে ৭টি সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ।

এবার সোনায় মোড়া বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যায় নিজেদের ইতিহাসকে। নেপালের কাঠমান্ডুর পোখারায় দ্বিতীয় দিনে তায়কোয়ান্দোতে প্রথম সোনা জয়ে বাংলাদেশকে উচ্ছ্বাসে ভাসান দীপু চাকমা। এরপর ধীরে ধীরে অষ্টম দিনে এসে নতুন স্বপ্ন বুনতে থাকে লাল-সবুজ পতাকা বহনকারীরা। সেই স্বপ্নের পালে হাওয়া দেয় বাংলাদেশের আরচারির দলগুলো। তারা আরচারিতে ছয়টি সোনা জিতে নেয়। সেই সঙ্গে যোগ হয় ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেটে সোনা জয়ও। স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে ফুটবলে ছেলেরা না হারলে সোনার পদক আরও বাড়ত। এর আগে ভারোত্তোলনে দুটি সোনার পদক জেতার রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশকে সপ্তম স্বর্ণ পদক পাইয়ে দেন ফাতেমা মুজিব। ফেনসিংয়ে ব্যক্তিগত সেভার ইভেন্টে তিনি সোনার পদক জিতেছেন। মাবিয়া আক্তার সীমান্তের পর বাংলাদেশ আরও একটি স্বর্ণ পদক জেতে। বাংলাদেশকে ষষ্ঠ স্বর্ণ পদক পাইয়ে দেন জিয়ারুল ইসলাম। ৯৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে তিনি সোনা জিতেছেন। মাইনুল ইসলাম ১০২ কেজিতে জিতেছেন রৌপ্য পদক। গতবারের মতো এবারও বাংলাদেশকে সোনার পদক পাইয়ে দিয়েছেন সীমান্ত। ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জিতেছেন তিনি। ৮১ কেজিতে রুপা জিতেছেন বাংলাদেশের জোহরা খাতুন নিশা।

বাংলাদেশকে প্রথম পদক এনে দিয়েছিলেন হুমায়রা আক্তার অন্তরা। তবে তা ছিল ব্রোঞ্জ। তায়কোয়ান্দোতে এবার বাংলাদেশ প্রথম সোনার পদক জেতে। দীপু চাকমা পাইয়ে দেন প্রথম সোনা। তায়কোয়ান্দোতে ছেলেদের এককে পুমসায় ২৯ অথবা এর বেশি ওজনে ভারতের প্রতিযোগীকে হারিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সোনা জেতান রাঙামাটির ছেলে দীপু। এরপর কারাতে কুমিতে সোনা জেতেন আল আমিন। তা ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বর্ণ পদক। কারাতে ইভেন্টের ৬০ কেজি ওজন শ্রেণি কুমিতে সোনা পাইয়ে দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আল আমিন। দেশের তৃতীয় সোনা জেতেন বাংলাদেশের আরেক খেলোয়াড়  এস এ গেমসে দেশের পক্ষে তৃতীয় সোনার পদক আসে মেয়েদের কারাতে ইভেন্টে। মেয়েদের অনূর্ধ্ব-৫৫ কেজি কুমি ইভেন্টে সোনা জেতেন মারজানা।

এস এ গেমসের ১৩তম আসরে বাংলাদেশের প্রথম পদক পাওয়া হুমায়রা আক্তার অন্তরা পান চতুর্থ সোনার পদক। কারাতে ৬১ কেজি কুমিতে সোনা জেতেন অন্তরা। নেপালের অনু গুরুংকে ৫-২ পয়েন্টে হারান তিনি। এরপর চারদিন বিরতি দিয়ে আবারও সোনার মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। দেশকে পঞ্চম সোনা পাইয়ে দিয়েছেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। পরে ষষ্ঠ সোনা আসে জিয়ারুল ইসলামের হাত ধরে। এবার ফাতেমা জেতান সপ্তম স্বর্ণ পদক।

এবারই প্রথম আরচারিতে যৌথ ও একক মিলিয়ে সব বিভাগেই সোনা জিতেছে বাংলাদেশ আরচারি দল। রোমান সানার হাত ধরে অষ্টাদশ সোনা জয়ের পরপরই নিজেদের পুরনো রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। আসরের অষ্টম দিনে আরচারিতে পুরুষদের দলগত রিকার্ভে শ্রীলঙ্কাকে ৫-৩ পয়েন্টে হারিয়ে এই সফলতা পান রুমান সানা, তামিমুল ইসলাম এবং হাকিম আহমেদ রুবেল। এরপর শ্রীলঙ্কাকে ৬-০ পয়েন্টে হারিয়ে আরচারিতে নারীদের দলগত রিকার্ভে সোনা জেতে বাংলাদেশ। রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টে সোনা জিতে নেন বাংলাদেশের রোমান সানা ও ইতি খাতুন জুটি। ফাইনালে রোমান-ইতি জুটি ভুটানকে ৬-২ পয়েন্টে হারিয়েছে।

ছেলেদের কম্পাউন্ড দলগত ইভেন্টের ফাইনালে বাংলাদেশের সোহেল রানা, অসীম কুমার দাস আর আশিকুজ্জামান ২২৫-২১৪ স্কোরের ব্যবধানে ভুটান দলকে হারিয়েছেন। পরে শ্রীলঙ্কা দলকে ২২৬-২১৫ স্কোরের ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশের সুস্মিতা বণিক, সুমা বিশ্বাস আর শ্যামলী রায় মেয়েদের কম্পাউন্ড দলগত ইভেন্টেও  সোনা জিতে নেন। কম্পাউন্ড মিশ্র দলগত ইভেন্টে সোনা এনে দেন বাংলাদেশের সোহেল রানা আর সুস্মিতা বণিক। ফাইনালে তারা নেপালকে হারিয়েছে ১৪৮-১৪০ স্কোরের ব্যবধানে। ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে ১৯তম  সোনা জয়ের নতুন চূড়ায় ওঠে বাংলাদেশ। বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা জানিয়েছেন, ‘আমি সত্যি খুব খুশি। প্রত্যাশা যা নিয়ে এসেছিলাম এর খুব কাছাকাছি গেছে। আমি খুব খুশি। কিন্তু কিছু কিছু ডিসিপ্লিন খারাপ করেছে। আমরা হতাশ হইনি। যে রুপাগুলো পেয়েছি এর মধ্যে সোনার প্রত্যাশা ছিল। এই রুপাগুলো যদি দেখেন গতবারের চেয়ে অনেক বেশি। ডাবল পেয়েছি। কিছুটা পয়েন্টের জন্য হেরেছি। যদি এগুলো সোনা হতো তাহলে আমাদের ভালো হতো।’

এদিকে, শেফ দ্য মিশন আসাদুজ্জামান কোহিনুর জানান, ‘স্বর্ণ পদকের সংখ্যার দিক দিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। ২০১০ কে আমরা ছাড়িয়ে গিয়েছি। তবে বড় গেমসগুলোতে ভালো করতে হলে প্রশিক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিকল্প নেই। ক্রীড়াঙ্গনের অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন আছে। মাঠের খেলা এবং অবকাঠামোগত দিক দিয়ে নেপাল অনেক এগিয়ে গিয়েছে। তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর