শিরোনাম
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
অগ্রযাত্রা

রান্নাঘর থেকে তিনটি রেস্তোরাঁর মালিক নিপা

সাইফ ইমন

রান্নাঘর থেকে তিনটি রেস্তোরাঁর মালিক নিপা

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। বিজ্ঞানী ও ভারতের রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন সেটাই যেটা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না। জীবনে আমাদের অনেক চড়াই উতরাই পার করতে হয়। ধৈর্য আর ইচ্ছাশক্তি আপনাকে পৌঁছে দেবে সাফল্যের উচ্চ শিখরে। এরই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আরিয়ানাস কিচেন ক্যাটারিং এবং এ আর এস ফুডের পরিচালক ইশরাত জাহান নিপা। জীবনে এসেছে নানা বাধা কিন্তু তিনি দমে যাননি বরং দ্বিগুণ আত্মবিশ্বাসে জয় করেছেন সব বাধা। ইশরাত জাহান নিপা এখন ঢাকার তিনটি রেস্তোরাঁর মালিক। নিজের রান্নাঘর থেকে তিনি এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন ২০১৪ সালে। শুরুটা হয়েছিল মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়ে, কিন্তু মাত্র চার বছরেই তার ব্যবসার পরিমাণ এখন প্রায় ২৫ লাখ টাকা। স্নাতকোত্তর শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা দিয়ে। কিন্তু অফিশিয়াল কিছু ঝামেলার কারণে ২০১২ সালে সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দিতে হয়। ফলে তার মধ্যে একটা অভিমান এবং কষ্ট কাজ করে। এরপরই নিপা এ পেশায় আর থাকবেন না বলে মনস্থির করেন। চাকরি ছেড়ে প্রথমে ক্যাটারিং সার্ভিস চালু করেন। একজন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেন আরিয়ানাস কিচেন ক্যাটারিং এবং এ আর এস ফুড। খাবারের প্রতি ইশরাতের বরাবরই আকর্ষণ ছিল।

রান্না ভালো পারেন এবং এতে বেশ আগ্রহও ছিল। প্রতিটা মানুষই কিছু স্পেশাল প্রতিভা নিয়ে জন্মায়। আর সঠিক সময়ে সেই স্পেশাল প্রতিভা কাজে লাগাতে পারলে সফলতা আসবেই। তাই ইশরাতা জাহানের কাছের কিছু মানুষের পরামর্শে তিনি বাংলাদেশ করপোরেশন থেকে এক বছরের শেফ কোর্স করেন। ওই কোর্স চলা অবস্থায় একটি অফিসে দুপুরের খাবার দেওয়ার কাজ পেয়ে যান। ছোট্ট একটি গৃহপরিচারিকার সাহায্য নিয়ে খাবারগুলো তার বাসাতেই রান্না করতেন। অফিসগুলোতে খাবার দেওয়া শুরু করলে অনেকেই তাকে নানা কটুমন্তব্য করা শুরু করেন। সমাজের অনেকেই মেনে নেয়নি একজন মাস্টার্স পাস করা মেয়ে কেন বাবুর্চির কাজ করছে। শিক্ষিত হওয়ার দরুন ইশরাত জানতেন যে কোনো কাজই ছোট নয়। সৎ উপায়ে যে কোনো কাজই সম্মানের। সংবাদ মাধ্যমে ইশরাত বলেন, মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আমি টিফিন বক্স এবং আরও অনেক কিছু কিনে আমার শুরু। আর এখন ক্যাটারিং সার্ভিসসহ আমার তিনটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকার মতো।

মাত্র ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ঢাকার মহাখালীতে প্রথম রেস্টুরেন্ট চালু করেন ইশরাত জাহান। এরপর তিনি মহাখালী থেকে ৩০০ ফিটে চলে আসেন। এখানে প্রথমে কাবাবের দোকান দিয়ে শুরু করলেও পরে আরও একটি পিজ্জা পাস্তার  দোকান দেন। এখান থেকে ভালো লাভ হওয়ায় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে আরও একটি রেস্টুরেন্ট শুরু করেন ইশরাত। এখন ক্যাটারিং সার্ভিসসহ ইশরাত জাহানের তিনটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ব্যক্তি জীবনে এই উদ্যোক্তা দুই সন্তানের জননী। পাঁচ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে দুবার দোকান পুড়েছে তার। ইশরাত সংবাদ মাধ্যমে বলেন, যতটা না ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন, তার থেকে  বেশি হচ্ছেন মেয়ে হিসেবে। ব্যবসা করতে এসে অনেকবার হোঁচট খেয়েছেন। এসব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাস একবিন্দুতে মিলাতে পারলে সফলতা আসবেই বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর