শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ভ্রমণ

সাদা পাথরের দেশে

আবু আফজাল সালেহ

সাদা পাথরের দেশে

যত দূর চোখ যায়, শুধু সাদা পাথরের মেলা। মাঝখানে স্বচ্ছ পানি আর তার সঙ্গে মিশেছে আকাশের নীলাভ সৌন্দর্য। ওপারে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা পানির নিচে সাদা পাথর। সব মিলিয়ে শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা অদ্ভুত এক ক্যানভাস। শরৎ মৌসুম না হলেও আকাশের গায়ে চষে বেড়ায় শ্বেতশুভ্র মেঘ। এ যেন প্রকৃতির এক স্বর্গরাজ্য।

 

পাথর, পানি আর পাহাড়- এ তিন নিয়ে সিলেটের ভোলাগঞ্জ। সাদা পাথরের আধিক্যের জন্য ভোলাগঞ্জকে সাদা পাথরের দেশ বলা হয়। নৌকায় যাওয়ার পথে নীল পানিতে ভেসে যেতে মজাই লাগে। পাশ দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলোর ভেসে যাওয়ার দৃশ্য মনে দাগ কাটবেই। সবুজ পানিতে পা ভিজিয়ে মেঘালয়ের সবুজ পাহাড় আর মাথার ওপর সূর্যের উত্তাপ- দারুণ রোমাঞ্চকর। মেঘালয়ের সবুজ পাহাড় ডাকে, ‘আয় আয় আয়...’।

সাদা পাথর আর মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া ঝরনা নিয়েই ভোলাগঞ্জ। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নান্দনিক এ পর্যটন স্পট অবস্থিত। এখানে গেলে নৌকাভ্রমণও হয়ে যাবে। সাগরের মতো স্বচ্ছ নীলাভ পানির স্রোত বেয়ে জিরো পয়েন্ট পৌঁছাতে অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দেবেই!

এখানে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ধলাই নদীর রূপ। সারি সারি পাথর তোলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, সবুজ পাহাড় বন্দী সাদা পাথর আর পাহাড় থেকে পাথর ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়া স্ফটিক স্বচ্ছ পানি! আহা, কী সুন্দর নদী, পাথরের স্তর আর দূরের পাহাড়। দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাবেন প্রায় জিরো পয়েন্টে। এবার পাথরের স্তূপে হেঁটে হেঁটে জিরো পয়েন্টে। সামনে সবুজ পাহাড়, পাশে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া প্রচ- স্রোতের স্বচ্ছ শীতল পানি আর সে পানি থেকে গড়িয়ে নামা সাদা পাথর, অপরূপ দৃশ্য যা বোঝানোর নয়।

ভোলাগঞ্জ দেশের সর্ববৃহত্তম পাথর কোয়ারির অঞ্চল। এখান থেকে ছাতক পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বা রজ্জুপথ। ভারতের খাসিয়া জৈন্তা পাহাড় থেকে বর্ষা মৌসুমে ঢল নামে, সেই ঢলে নেমে আসা পাথর বহন করার জন্য ১৯৬৪ সালে এই রোপওয়ে নির্মাণ করা হয়। সাদা পাথর ও তার স্বচ্ছ পানি দেখতে আসা দর্শনার্থীদের কাছে ধলাই নদী ও খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় আর সীমান্ত এলাকার মতোই সমান জনপ্রিয় রোপওয়েটি। শান্ত স্তব্ধ পাহাড়, তার সঙ্গে মিশেছে আকাশের নীল। শরৎ মৌসুম না হলেও আকাশে ভেসে বেড়ায় শ্বেতশুভ্র মেঘ। প্রকৃতির এমন সম্মোহন হাতছানির মধ্যে ট্রলারের মেশিনের গর্জন অবশ্য সেই গর্জন মিশে যায় রোপওয়ের সৌন্দর্যে।

 

কীভাবে যাবেন

ঢাকা বা দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে বাস বা ট্রেনে সিলেট। ঢাকা থেকে বিমানেও সিলেট যাওয়া যাবে। এরপর আম্বরখানা থেকে সিএনজি বা রিজার্ভ গাড়িতে ভোলাগঞ্জ। এরপর নৌকা ভাড়া করে জিরো পয়েন্টে।

থাকা ও খাওয়া

ভোলাগঞ্জে মাঝারিমানের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ৩৭ কিমি দূরের বিভাগীয় শহর সিলেটে থাকাই ভালো হবে। এখানে যে কোনো বাজেটের আবাসিক ও খাবার হোটেল পাবেন। ‘পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট’ বা ‘পানসী’ হোটেলসহ জিন্দাবাজারের কাছাকাছি বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার হোটেল পাবেন। ভোলাগঞ্জের পাথরের নদীর স্রোত খুবই খরস্রোতা। অসাবধানতা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। নদীর উৎসমুখে না যাওয়ায় ভালো। পাথর পিচ্ছিল থাকে। পা হড়কিয়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নদীতে গোসল বা পা ভেজানোর সময় অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

নৌকা ভাড়া : পাথরের কোয়ারি ঠেলে নৌকাঘাটে চলে আসুন। দরদাম ঠিক করে চলে যান জিরো পয়েন্ট। নৌকার সাইজ অনুসারে ভাড়া নেয়। ভাড়া ৬০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। একা থাকলে যে কোনো ছোট একটি দলে যোগ দিতে মাঝির সঙ্গে কথা বলুন। তারাই সুযোগ করে দেবে। ১০০ টাকায় নৌকায় যাতায়াত করতে পারবেন শেয়ারে।

প্রয়োজনীয় তথ্য : অক্টোবর পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় যাওয়ার মোক্ষম সময়। সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটারের মতো। এই পথে কোনো বাস চলাচল নেই, কোনো লেগুনা চলে না। যাতায়াতের একমাত্র বাহন সিএনজিচালিত অটো রিকশা। জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ টাকা। অনেকেই নদী পথ বেছে নিয়ে থাকেন। এই পথে জন প্রতিখরচ ২০০ টাকা। সংখ্যায় বেশি হলে ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে নিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর