শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
অনুপ্রেরণীয়

ইজিবাইক চালিয়ে জায়েদার এগিয়ে যাওয়া

সাইফুল ইসলাম, যশোর

ইজিবাইক চালিয়ে জায়েদার এগিয়ে যাওয়া

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম সালামতপুরের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে অন্য কিছু ভাবার বা করার ফুরসত হয়নি কখনো। মাথায় সারাক্ষণই থাকত তিনবেলা খাবার সংগ্রহের চিন্তা। এ রকম এক অবস্থার মধ্যে চোরাচালান কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন জায়েদা খাতুন। যশোরের বন্দর শহর বেনাপোলের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মালামাল আনানেওয়া করেন। এ কাজ করতে করতে পরিচয় হয় তখনকার এক বিডিআর সদস্য মুজিবর রহমানের সঙ্গে। গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। তার বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হন জায়েদা। বিয়ে হয়। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয় তাদের। মুজিবর অবসরে গেলে নিজের টাকায় জায়েদা তাকে বিদেশে পাঠান। বিদেশে গিয়ে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন মুজিবর, ভুলে যান জায়েদাকে। স্বামী, সংসার পেয়ে চোরাচালানের মতো ঘৃণ্য পেশা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন জায়েদা। জীবনের এ পর্যায়ে এসে অভাবের তাড়নায় আবারও সে পেশায় ফেরার কথা কখনো ভাবেননি তিনি। বরং মনের কোণে জেদ ছিল আলোর পথে উঠেছেন, সে পথেই হাঁটবেন। মচকাবেন, কিন্তু ভাঙবেন না।

স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে একটি ইজিবাইক কিনে বেনাপোল শহরে নিজেই তা চালাতে শুরু করেন জায়েদা। প্রথম প্রথম কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। নারী চালক। দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে কিনা- ভয়ে অনেকেই তার ইজিবাইকে উঠতে চাইতেন না। কিন্তু সময়ের       

সঙ্গে সঙ্গে জায়েদা এখন পুরোদস্তুর ইজিবাইক চালক। আর দশজন ইজিবাইক চালকের মতোই স্বাচ্ছন্দ্যে বেনাপোলের অলি-গলিতে সারা দিন যাত্রী পরিবহন করেন তিনি। তার বাহনে চড়তে এখন আর কেউ ভয়ও পান না। জায়েদা বলেন ‘নারী ইজিবাইক চালক হিসেবে চ্যালেঞ্জ যে নেই, তা নয়, তবে আনন্দও আছে। আগে যেমন আমার গাড়িতে উঠতে মানুষ একটু ভয় পেত, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভাবটা কেটে গেছে। যাত্রীরা এখন অন্য পুরুষ ইজিবাইক চালকদের মতোই আমাকে মূল্যায়ন করে’। জীবন যুদ্ধের আঁকাবাঁকা ময়দানে চলতে চলতে তিনি পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার। শার্শা উপজেলা, যশোর জেলা, খুলনা বিভাগ- এ তিন ক্যাটাগরিতেই চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। এ মূল্যায়ন তাকে অনুপ্রাণিত করেছে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। এভাবেই কেটে গেছে পাঁচটি বছর। এখনো ইজিবাইকের ঋণের টাকা কিস্তি আকারে ফেরত দিতে হয়। নিয়মিত দিচ্ছেনও তা। জায়েদা বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে থাকি, সৎ পথে ভালোভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি, এটাই আমার গর্ব, এটাই আমার প্রশান্তি’। এই প্রশান্তির মাঝেও জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলা সংগ্রামী এই নারীর মনের কোনো কিছুটা দুঃখ রয়ে গেছে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অল্প বয়সেই মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেটাকে অনেক দূর পর্যন্ত পড়ানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দশম শ্রেণির পর অর্থাভাবে থেমে গেছে তার পড়াশোনা, আলাদা থাকে সে। আপাতত জায়েদার স্বপ্ন একটাই, কোনো একদিন বড় একটা গাড়ি কিনে চালাবেন তিনি নিজেই।

সর্বশেষ খবর