শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সম্পত পালের গুলাবি গ্যাং

সুজন খান

সম্পত পালের গুলাবি গ্যাং

নির্যাতিত ও নিগৃহীত ১৬ বছর বয়সী সম্পত পাল ছুটে গিয়েছিলেন আরেক নির্যাতিত নারীকে বাঁচাতে, এই খবর বারুদের মতো ছড়িয়ে পড়ে উত্তর প্রদেশের গ্রামে গ্রামে আর তিনি হয়ে ওঠেন বাস্তবে একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব।

 

সেই নৌকা কখনই ঢেউ চিরে এগোতে পারে না যার পাল নেই। পালে হাওয়া লাগল আর ছুটে চলল নৌকা তার গন্তব্যে সর্বপ্রকার ঢেউ চিরে। ভারতের উত্তর প্রদেশের বুলেন্দখান্ড গ্রামের সম্পত পাল, যার পালের হাওয়ায় বদলেছে অসংখ্য নির্যাতিত নারীর জীবন।

গরিব ঘরের মেয়ে সম্পত পাল বিয়ে করে মাত্র ১২ বছর বয়সে আর ২০ বছর হতে না হতেই ৫ সন্তানের জননী হয়ে যান। এ সবের মাঝেও তিনি নিজচেষ্টায় পড়তে ও লিখতে শিখেন, তার এই দূরদর্শিতাই বুঝিয়ে ছিল একমাত্র শিক্ষাই পারে মেরুদন্ডকে শক্ত করে স্বাবলম্বীভাবে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে।

সম্পত পালের, পালে প্রথম হাওয়া লেগেছিল যখন উত্তর প্রদেশের নিজ গ্রামে একজন লোক অমানবিকভাবে তার স্ত্রীকে প্রহার করেছিলেন। এই বর্বরতাকে সহ্য করতে না পেরে তিনি একাই এগিয়ে যান থামাতে। কিন্তু লোকটি প্রচ- অপমান করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরের দিন সম্পত পাল সঙ্গে আরও পাঁচজন নারী নিয়ে হাজির হন সেই লোকের বাড়িতে আর প্রতিটি নারীর হাতে ছিল  বাঁশের লাঠি। জনসম্মুখ্যে সেই লোকটিকে উত্তমরূপে লাঠি প্রহারে নিজ স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করলেন এবং প্রতিজ্ঞা নিলেন আর কখনো যেন নিজের স্ত্রীকে প্রহার না করেন।

যার হাত আগুনে পুড়ে একমাত্র সেই বুঝে আগুনের জ্বালা। নির্যাতিত ও নিগৃহীত ১৬ বছর বয়সী সম্পত পাল ছুটে গিয়েছিলেন আরেক নির্যাতিত নারীকে বাঁচাতে, এই খবর বারুদের মতো ছড়িয়ে পড়ে উত্তর প্রদেশের গ্রামে গ্রামে আর তিনি হয়ে ওঠেন বাস্তবে একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। এরপর বিভিন্ন গ্রাম থেকে নির্যাতিত, বঞ্চিত নারীরা সম্পত পালের কাছে আসতে লাগলেন এবং তার সাহায্য চাইতে লাগলেন। ধীরে ধীরে সম্পত পালের সঙ্গে অন্য নারীরা যোগদান করা শুরু করলেন। এরই মাঝে দেখা হয় সমাজকর্মী জয় প্রকাশ শিবহরের সঙ্গে যিনি নারীদের জন্য আরও ব্যাপক কাজ করতে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ প্রদান করেন। গোলাপি রং নারীত্বের প্রতীক তাইতো ১৯৮০ সালে সম্পত পালের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘গুলাবি গ্যাং’। আশপাশের সব গ্রামের মহিলা এতে যোগ দিতে থাকেন। এদের সবার পরনে গোলাপি রঙের শাড়ি এবং হাতে বাঁশের লাঠি। বর্তমানে গুলাবি  গ্যাং এর সদস্য দুই লাখ সত্তর হাজারের বেশি। এত বড় একটি দলের মূল উদ্দেশ্য হলো, উত্তর প্রদেশে ও মধ্য প্রদেশে দারিদ্র্য ও নিচু জাতের প্রতি অবিচার, অত্যাচার, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ হত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।

ঠিক অনেকটা সিনেমার মতো, এলাকার রাস্তার জরুরি ভিত্তিতে মেরামত প্রয়োজন এ জন্য তিনি কর্মকর্তাকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে আনেন। এ ছাড়াও যেখানে বাল্যবিয়ে হচ্ছে সেখানেও দলবল নিয়ে উপস্থিত হন তা রোধ করার জন্য। এমনকি একবার পুলিশ গুলাবি গ্যাং এর এক সদস্যের অভিযোগ না লেখায় সম্পত পাল লাঠি দিয়ে সেই পুলিশ অফিসারের মাথায় বারি বসিয়ে ছিলেন। ‘‘গুলাবি গ্যাং” এর উপকারে উপকৃত মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়লেও সাথে বেড়েছে বেশ কিছু ফৌজদারি মামলা। ২০১৪ সালের ২মার্চ সম্পদ পাল দেবীকে গুলাবি গ্যাং থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বেশ কিছু অভিযোগের মাঝে একটি অভিযোগ, তিনি আর্থিক অনিয়ম ও ব্যক্তি স্বার্থকে কাজে লাগিয়েছেন যদিও এসব অভিযোগ মিথ্যা বলেই তিনি দাবি করেছেন। ২০১২ সালের বিধান সভার নির্বাচন করেন, একই সালে বিগ বস নামক রিয়েলিটি শোতে অংশ গ্রহণও করেন এবং গুলাবি গ্যাং নিয়ে  তৈরি হয় ডকুমেন্টারি, শর্ট ফিল্ম এবং সিনেমা যার নাম ‘গুলাবি গ্যাং’

এই সাহসী নারী তার সৎ সাহসের জন্য গডফ্রে ফিলিপস ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ডস ও দ্য কেলভিনেটর ইলেভেন্থ জি আর-৮ উইমেন অ্যাওয়ার্ডস পান।

সর্বশেষ খবর