শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রচ্ছদ

নিজেদের হস্তশিল্পে পড়ালেখার খরচ

সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ২ টাকার ব্যাংক

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর থেকে

নিজেদের হস্তশিল্পে পড়ালেখার খরচ

সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। দিনাজপুরের এই স্কুলে দেখা যায় ব্যতিক্রমধর্মী এক উদ্যোগ। বছরের প্রথম দিন থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২ টাকার ব্যাংক চালু করে স্কুলটি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিজেদের পড়াশোনার খরচ জোগানোর জন্য স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ নিয়ে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এই বিদ্যালয়।

 

ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বছরের প্রথম দিন থেকে চালু করে ডিজিটাল ক্লাস রুম। শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি হস্তশিল্পগুলোর বিপণন কেন্দ্র চালু করা হয়। আর ব্যতিক্রমধর্মী ২ টাকার ব্যাংক থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের নতুন স্কুল ড্রেসসহ শিক্ষা উপকরণসমূহ বিতরণ এবং বই উৎসব বিদ্যালয়ে এনে দেয় নতুন মাত্রা। স্কুলে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনের নানা কার্যক্রম পরিচালনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধের পাশাপাশি শিক্ষায় ব্যাপক অবদান রাখছে। যা দেশের অন্য স্কুলগুলোর জন্য রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় ২ টাকার ব্যাংক কার্যক্রমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী প্রতিমাসে ২ টাকা  করে জমা করে। চাইলে তারা তা তুলেও নিতে পারবে। পুরো কার্যক্রম ব্যাংকের আদলে করা। রয়েছে ক্লাস ভিত্তিক ব্যাংক শাখা, ম্যানেজার, অর্থসচিব এবং গভর্নর। কোনো শিক্ষার্থী যেন ঝরে না পড়ে সে জন্য ২ টাকার ব্যাংক থেকে দেওয়া হয় সহযোগিতা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নিজেদের তৈরি হস্তশিল্প বিপণন করে নিজের পড়াশোনার খরচ বহন করছে নিজেরাই। তারা ২ টাকার ব্যাংক থেকে অর্থ সহায়তা গ্রহণ করে তৈরি করছে পাটের ব্যাগ, কলমদানি, পাপোশ, ওয়ালমেট, পুঁথিসহ নানান তৈজষপত্র। এসব হস্তশিল্প বিক্রির জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে খোলা হয় বিপণন কেন্দ্র। আর এসব পণ্য কিনছেন অভিভাবক ও পথচারীরা। শ্রেণি ভিত্তিক কার্যক্রম ও জীবনমুখী শিক্ষার বিষয়ে হাতে-কলমে জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে অবসর সময়ে হস্তশিল্প তৈরিতে আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা করছে সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 

বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মন্দিরা রায় জানান, ‘আমরা ২ টাকার ব্যাংক থেকে যেমন সহযোগিতা পাচ্ছি, অন্যদিকে হস্তশিল্প তৈরি করে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এর মাধ্যমে টাকা আয় করে পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছি।’

 

২ টাকার ব্যাংক ও হস্তশিল্প বিপণন কেন্দ্র নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন জানান, ‘শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ দরিদ্র পরিবারের। ফলে প্রতিবছর বাল্যবিয়েসহ বিভিন্ন কারণে ঝরে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী। এই ঝরে পড়া রোধে এই উদ্যোগ। এতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়মুখী হচ্ছে। আবার অনেকে হস্তশিল্পের কাজ করে ভবিষ্যতে স্বনির্ভরতার হাতেখড়ির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছে।’

 

বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক রতন কুমার রায় জানান, বিদ্যালয়ের উদ্ভাবনী কার্যক্রম পরিচালনায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়া হ্রাস পেয়েছে ৯০%। ২০১৮ সালে ঝরে পড়েছে ৫৩ জন শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালে এ উদ্ভাবনী কার্যক্রমের ফলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫ জন। এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বিদ্যালয় সফলতার স্বাক্ষর রাখছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফলও আগের চেয়ে ভালো।’

সর্বশেষ খবর